রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বাস্থ্য

বাতজ্বর ও বাতরোগ এক নয়

ডা. এম ইয়াছিন আলী | প্রকাশের সময় : ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

বাতজ্বর এবং বাতরোগ কিন্তু এক নয় তবে যারা ছোট বেলায় বাতজ্বরে ভুগেছেন তাদের বাতরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা বেশী থাকে। আসুন আমরা জেনে নেই বাতজ্বর ও বাতরোগ এর মধ্যে পার্থক্য কি?
বাতজ্বর ঃ এই রোগটিকে মেডিকের পরিভাষায় রিউমেটিক ফিভার বলা হয়। এটি একটি প্রদাহজনীত রোগ সাধারণত ৫ থেকে ১৫ বছর বযসের শিশু-কিশোরদের বেশী হয়ে থাকে। প্রথমে গলায় স্ট্রেপটোকক্কাস নামক অনুজীবের সংক্রমনের পর তার বিরূদ্ধে শরীরে যে এন্টিবডি তৈরি হয় তা হৃৎপিন্ড, ব্রেইন, অস্থিসন্ধি ও চামড়া ইত্যাদি স্থানের টিস্যুকে আক্রমন করে প্রদাহের সৃষ্টি করে, যার ফলে রোগী রোগীর হাত ও পায়ের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা হয় ও ফুলে যায়, ব্রেইনের প্রদাহজনিত কারনে জ্বর ও কাপুনী দেখা দেয়, হৃদপিন্ডের প্রদাহের কারনে বুকে ব্যথা ও শ্বাস নিতে কষ্ট হয় এবং চামড়ায় লাল লাল দাগ দেখা যায়।
বাতরোগ ঃ বাতরোগ বা আথ্রাইটিস এক ধরনের জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধির প্রদাহজনীত রোগ। বাতরোগ কয়েক প্রকারের হয়ে থাকে। যেমন - ১. রিউমাটয়েড আথ্রাইটিস, ২. গাউটি আথ্রাইটিস, ৩. জুভেনাইল আথ্রাইটিস, ৪. সোরিয়াটিক আথ্রাইটিস, ৫. অষ্টিওআথ্রাইটিস, ৬. এ্যানকাইলোজিং স্পনডাইলাইটিস ইত্যাদি। এর মধ্যে জুভেনাইল আথ্রাইটিস ছাড়া বাকগিুলো পুর্নবয়স্কদের হযে থাকে, তার মধ্যে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস ও এ্যানকাইলোজিং স্পনডাইলাইটিস সাধারণত ২৫-৩০ বছর বয়সে প্রথম দেখা দেয় এবং অষ্টিওআর্থ্রাইটিস ৫০ এর অধিক বয়স্কদের হয়ে থাকে।
রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসঃ এটি একটি অটোইম্যুউন ডিজিজ যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বাইরে। এটি সাধারণত ২৫-৩০ বছর বয়সে প্রথম দেখা দেয়, তবে যারা ছোট বেলায় বাতজ্বরে ভুগেছেন তাদের রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস হওয়ার ঝুকি বেশী থাকে। এই রোগে হাত ও পায়ের ছোট ছোট জযেন্টগুলিতে ব্যথা হয়, ফুলে যায়, বিশেষ করে সকালে ঘুম থেকে উঠার সময় খুব বেশী ব্যথা করে একটু হাটাচলা করলে কিছুটা কমে আসে।
গাউটি আর্থ্রাইটিস ঃ এটি কে বাংলায় গেটে বাত বলা হয় । এই রোগে রক্তে ইউরিক এসিড এর পরিমান বেড়ে যায় যার ফলে জয়েন্টে প্রদাহের সৃষ্টি হয় এবং এক ধরনের ক্রিষ্টাল তেরি হয়। এই রোগটি প্রথমে পায়ের বড় আঙ্গুলকে আক্রান্ত করে এবং পরবর্তীতে হাত ও পায়ের অন্যান্য জয়েন্টকে আক্রান্ত করে।
জুভেনাইল আর্থ্রাইটিসঃ এটি শিশুদের বাতরোগ, এটিও এটি অটোইম্যুউন ডিজিজ। এটি সাধারণত ১৬ বছর বয়সের মধ্যে দেখা দেয়। এই রোগটি পাঁচ ধরনের হয়ে থাকে যেমন- সিস্টেমিক আথ্রাইটিস, অলিগো আথ্রাইটিস, পলি আথ্রাইটিস, সোরিয়াটিক আথ্রাইটিস ও এনথেসিস রিলেটেড আর্থ্রাইটিস ইত্যাদি। এক্ষেত্রেও রোগীর বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা ও স্টীফনেছ, দীর্ঘমেয়াদী জ্বর, ওজন কমে যাওয়া, চোখে কম দেখা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়।
সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিসঃ সোরিয়াসিস এক ধরনের চর্ম রোগ, এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি পরবর্তীতে সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত হয়। এখানেও আক্রান্ত রোগীরা জয়েন্টে ব্যথা ও ফুলে যাওয়া সমস্যায় ভুগে থাকেন বিশেষ করে হাত ও পায়ের আঙ্গুলগুলি বেশী আক্রান্ত হয়, তবে অনেকক্ষেত্রে সোরিয়াটিক আথ্রাইটিস থেকে স্পনডাইলাইটিস ও সেকরালাইটিস হওয়ার আশংকা থাকে।
৫. অষ্টিওআর্থ্রাইটিস ঃ এটি একটি ডিজেনারেটিভ ডিজিজ বা বয়সজনিত জয়েন্টের অভ্যান্তরীন গঠনের ক্ষয় রোগ। এই রোগে জয়েন্টের ভিতরে অবস্থানরত কার্টিলেজ গুলি ও জয়েন্ট সারফেছ এর ক্ষয় হতে থাকে এবং জয়েন্টের অভ্যন্তরীন সাইনোভিয়াল ফ্লুইডগুলিও কমে যায়, যার ফলে জয়েন্টের ভিতরের স্পেস কমে যায়। তখন আক্রন্ত রোগীর জয়েন্ট নাড়াতে কষ্ট হয় । এটি সাধারণত ৫০ এর অধিক বয়স্ক ব্যক্তিদের হয়ে থাকে বিশেষ করে হাটু , ঘাড়, কোমর, হিপ ইত্যাদি শরীরের বড় বড় জয়েন্টে এই অষ্টিওআর্থ্রাইটিস হয়ে থাকে।
৬. এ্যানকাইলোজিং স্পনডাইলাইটিস ঃ এটিও একটি মেরুদন্ডের বাত রোগ যা প্রথমে মেরুদন্ডের নিচের অংশে আক্রমন করে পরবর্তীতে ধীরে ধীরে মেরুদন্ডের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এই রোগটির সবচেয়ে খারাপ দিক হলো এটি মেরুদন্ডের স্বাভাবিক আকৃতি নষ্ট করে মেরুদন্ডকে শক্ত করে ফেলে যার ফলে আক্রান্ত ব্যাক্তিটি মেরুদন্ডের ঘাড় ও কোমরের অংশ ঘুরাতে পারে না, সামনের দিকে ঝুঁকতে পারে না ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়।
চিকিৎসা ও করণীয়ঃ বাতজ্বর ও বাতরোগ সম্পুর্ণ ভিন্ন ভিন্ন রোগ এছাড়াও বাতরোগের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন প্রকারভেদ। তাই রোগ নির্ণয় করাটা খুবই জরুরী এবং চিকিৎসা নির্ভর করে আপনি কি রোগে আক্রান্ত তার উপর। তাই এই ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে দেরী না করে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরনাপন্ন হয়ে রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা নিন সুস্থ থাকুন।

ষ ডা. এম ইয়াছিন আলী
বাত, ব্যথা ও প্যারালাইসিস রোগে ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ
কনসালটেন্ট ও বিভাগীয় প্রধান - ফিজিওথেরাপি বিভাগ
প্রো- অ্যাকটিভ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল,
চীফ কনসালটেন্ট , ঢাকা সিটি ফিজেওথেরাপি হাসপাতাল,
ধানমন্ডি, ঢাকা। মোবাইলঃ ০১৭৮৭-১০৬৭০২

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন