শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

যোগাযোগ খাতের উন্নয়ন দ্রুতায়িত হোক

প্রকাশের সময় : ৮ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

যোগাযোগ খাতে দৃশ্যগ্রাহ্য উন্নতি হয়েছে। এটা একটি বড় অর্জন। উন্নত দেশগুলোতে যেভাবে যোগাযোগ খাতের অবকাঠামো উন্নয়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে এবং এর ফলে তাদের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়েছে, ঠিক সেভাবেই দেশে বিগত বছরগুলোতে যোগাযোগ খাতের অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়েছে। এর সুফল আসতে শুরু করেছে। এখনই হয়তো পুরো সুফল পাওয়া যাবে না। তবে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়ে গেলে কাক্সিক্ষত সুফল পাওয়া সম্ভব হবে। বর্তমানে যোগাযোগ খাতে নেয়া ১৫টির বেশী বৃহৎ প্রকল্প চলমান রয়েছে। এগুলো সমাপ্ত হলে এ খাতে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন আমরা প্রত্যক্ষ করতে পারবো। নানা বাধা, বিরূপ সমালোচনা ও দ্বিধার প্রাচীর পেরিয়ে বিগত কয়েক বছরে পদ্মা সেতু, ঢাকা-চট্টগ্রাম চারলেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ চারলেন, কর্ণফুলী টানেল, শাহজালাল বিমান বন্দর থেকে কুতুবখালি এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে, মেট্রো রেল, উত্তরা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে, শাহজালাল (রহ.) বিমান বন্দর-গাজীপুর র‌্যাপিড ট্রানজিট, মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার, রংপুর চারলেন, কাঁচপুর, মেঘনা ও গোমতী দ্বিতীয় সেতু, ইস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রীজ ইম্প্রুুভমেন্ট, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রভৃতি বিশাল বিশাল প্রকল্প হাতে নেয়া উন্নয়ন চিন্তার দিকদিয়ে দূরদর্শিতার পরিচায়ক। শুধু এসব বৃহৎ প্রকল্পই নয়, বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়েও বহু প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। যোগাযোগ খাতের সার্বিক ও সুষম উন্নয়নে গৃহীত প্রকল্পগুলোর মধ্যে বেশকিছু ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে। বাকীগুলোর বাস্তবায়নের কাজ চলছে।
যে কোনো দেশের উন্নয়ন-সমৃদ্ধির জন্য উন্নত আধুনিক সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পূর্বশর্ত হিসেবে বিবেচিত। যেসব দেশ উন্নয়নের শিখরে অবস্থান করছে তারা সবাই সড়ক, রেল, নৌ, বিমানÑ এই চতুর্মুখী যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রথমেই মনোযোগী হয়েছে, উদ্যোগী হয়েছে, প্রকল্প গ্রহণ করেছে এবং সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে বাস্তবায়ন করেছে। তারা এই চার যোগাযোগ ব্যবস্থাকে বাস্তবতার নিরিখে উন্নয়ন সাধন করেছে এবং পস্পরের মধ্যে সমন্বয় প্রতিষ্ঠা করেছে। এই উন্নত-সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা তাদের জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকে সহজ ও মসৃণ করেছে, দ্রুতায়িত করেছে। এই বিবেচনায় আমরা সন্দেহাতীতভাবে একথা বলতে পারি, যোগাযোগ খাতের উন্নয়নে সরকার যে উদ্যোগ, পদক্ষেপ ও প্রকল্প নিয়েছে তা একই সঙ্গে প্রত্যাশিত, বাস্তবায়িত এবং জাতীয় উন্নয়ন-আকাক্সক্ষার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। এটা খুবই স্বাভাবিক প্রত্যাশা যে, গৃহীত প্রকল্পগুলো যথাসময়ে, মানসম্পন্নভাবে বাস্তবায়িত হবে। এ ব্যাপারে ইতোমধ্যেই নানা অভিযোগ উঠেছে। এমন কিছু বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের কথা আমরা জানি, যেগুলোর বাস্তবায়ন নির্ধারিত সময়ে হয়নি। বার বার সময় বাড়ানো হয়েছে। আর সময় বাড়ানোর পাশাপাশি ব্যয়ও বাড়ানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা-চট্টগ্রাম চারলেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ চারলেন, মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের কথা নজির হিসেবে উল্লেখ করা যায়। এসব প্রকল্পে বিপুল অংকের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। কেবল তাই নয়, চারলেনের কাজের মান ও ফ্লাইওভারের নকশা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। মনে রাখতে হবে, এসব বৃহৎ প্রকল্পের অর্থের যোগানদার দেশের জনগণ। তাদের ট্যাক্সের টাকার যাতে কোনোভাবেই অপচয় না হয়, লুটপাট না হয়, ‘ম্যানেজার’ হিসেবে সরকারকেই তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রকল্পের কাজ ঠিক সময়ে শেষ হতে হবে এবং কাজও হতে হবে আন্তর্জাতিক মানের।
আরও একটি বিষয় এখানে বিশেষভাবে বলা দরকার যে, আমাদের সড়ক, মহাসড়ক ও রেল লাইনের দু’পাশে রয়েছে অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা। এসব অবৈধ স্থাপনার কারণে যানবাহন ও ট্রেন চলাচল যেমন ব্যাহত হচ্ছে তেমনি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানিও ঘটছে। সড়ক-মহাসড়কে যানজটের একটি বড় কারণ সড়ক-মহাসড়কের আশে বা ওপরে দোকানপাট ও বাজারঘাট। এ নিয়ে বহু কথা হয়েছে। পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি হয়েছে; কিন্তু অবৈধ স্থাপনা অপসারণের কাজে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। মাঝে মাঝে অভিযান চালানো হয়েছে; কোনো ফলোদয় হয়নি। দখল উচ্ছেদের পর সংশ্লিষ্ট এলাকা সংরক্ষণ করা হয়নি। আবার তা অবৈধ দখলদাররা দখল করে নিয়েছে। এই অবৈধ দখলের সঙ্গে স্থানীয় প্রভাবশালী, রাজনৈতিক নেতাকর্মী এবং প্রশাসন ও পুলিশের এক শ্রেণীর কর্মকর্তা জড়িত থাকার কারণে সড়ক-মহাসড়ক ও রেল লাইনের বিপর্যস্ত অবস্থার কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। যোগাযোগ খাতের উন্নয়নে যখন ব্যাপক কর্মকা- চলছে, তখন এ আশংকাও বিদ্যমান যে, বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোর অধীনে যে সব সড়ক-মহাসড়ক নির্মিত হচ্ছে, রেললাইন স্থাপিত হচ্ছে কিংবা সংস্কার-সম্প্রসারণের কাজ চলছে, সেগুলোর দু’পাশেও অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটা ইতোমধ্যেই লক্ষ্য করা গেছে। কাজেই, এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এখনই সতর্ক ও সাবধান হতে হবে যাতে কোথাও কোনো অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠতে না পারে। দ্রুত ও মসৃণ যোগাযোগ ও নির্বাধ যাতায়াতের জন্য অবশ্যই সড়ক-মহাসড়ক ও রেলপথকে অবৈধ দখল মুক্ত রাখতে হবে। পরিশেষে আমরা আশা করবো, যোগাযোগ খাতে সূচিত সাফল্য অব্যাহত থাকবে এবং দেশের উন্নয়ন ও জনগণের জীবনমানের অগ্রগতিতে তা যথাযথ অবদান রাখতে সমর্থ হবে।











 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন