ওজন বেড়ে গেছে। ডাক্তার ওজন কমাতে বলেছে। খাবার তো কমই খান। হাটাহাটিও করেন সময় পেলে। তাহলে ওজন কমছে না কেন? আপনার দৈনন্দিন জীবনযাত্রা, সেখানে কোথাও ভুল আছে। যেমন আপনি সকালের নাস্তা প্রায়ই করেন না। ভাবেন, না খেলে ওজন কমবে। এটা একটা ভুল। এমন আরো কিছু ভুল ভাঙ্গাতেই এই লেখা।
এক. কার্বোহাইডেড সমৃদ্ব খাবার একবারেই বন্ধ করে দেয়া যাবে না। একেবারেই কার্বোহাইডেড সমৃদ্ব খাবার না খেলে চুল পড়া, মেজাজা খিটখিটে, স্ত্রিনে রুক্ষতা, শরীরে দুর্বলতা, লিভারে চর্বি জমে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। ভাত, রুটি, আলুতে থাকে প্রচুর কর্বোহাইডেড। কার্বোহাইডেড বন্ধ করলে গ্লকোজ তৈরী হবে না। লিভারকে গ্লকোজ তৈরী করতে হবে। ব্্েরন চালাতে গ্লকোজ লাগে সব সময়। লিভার অতিরিক্ত দায়িত্ব নিতে গিয়ে সমস্যার মুখে পড়বে। যার পরিনাম আপনার জন্য নিশ্চিত অশুভ।
দুই. ডায়েট মানে শৃঙ্খলাবদ্ব খাবার গ্রহন। ডায়েটে কোন ভাবেই কোন এক খাবারকে প্রধান্য দেয়া যাবে না। তা যতোই কম ক্যালরি, কম মজার হোক না কেন।
তিন. বডিকে প্্েরশার দিয়ে আপনি মাসে পাঁচ কেজি ওজন কমাতে পারেন। তবে এর পরিনাম ভালো নাও হতে পারে। অস্বাভাবিক চাপে বডি পরবর্তীতে যে প্রতিক্রিয়া দেখাবে। সেঠা ভালো হয় না কখনো। অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। অনেকে পাঁচ কেজি কমিয়ে পরে নিয়ম ধরে রাখতে না পেরে দশ কেজি ওজন বাড়ান। মাঝে অসুস্থতার কষ্ট পান শুধু শুধুই।
চার. অনেকে ভাবেন, পানি বেশি খেলে ক্ষতি নেই। পরিমিত যতটুকু দরকার ততটুকু পাানি খেতে হবে। কিডনির রোগীর জন্য পানি বেশি খাওয়া ভালো নয়। পানিতে কোন ক্যালরি নেই। জ্বর,ইউরিন ইনফেকশন হলে পানি একটু বেশি খাওয়া ভালো।এখানে বলে রাখি পানি বিশুদ্ব হতে হবে। অফিস আদালতে যে জারের পানি সরবারহ করা হয় তার ৯৮ ভাগেই মলের জীবানু পাওয়া গেছে।
পাচ. রাতে খেলেন না। সকালের নাস্তা ও করলেন না। ভাবলেন ওজন কমে জিরো ফিগার হয়ে যাবেন। ভুলেও এ কাজ করা যাবে না। এতে বিপাক প্রক্রিয়া মন্থর হবে। পরবর্তীতে যাই খাবেন তা বডি দ্রুত গ্রহন করে নিবে। রাতে না খেলে সকালে বমি ভাব, এসিডিটি হতে পারে।
ছয়. ধীরে ধীরে ওজন কমিয়ে বডিকে ফিটফাট করা উত্তম। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে মাসে এক কেজির বেশি ওজন কমানো ভালো নয়। বেশি প্রোটিন গ্রহন করা যাবে না। যার যত কেজি ওজন তত গ্রাম প্রোটিন দৈনিক দরকার।
সাত. অনেকে ফ্যাট খেয়ে কিটোনস তৈরী করে। কিটো ডায়েট-এর প্রভাবে হিমগ্লোবিন কমে যাওয়া, স্ত্রিনে সমস্যা, হেয়ার ফল, লিভার,কিডনিতে সমস্যা হতে পারে।
আট. খাবারের সাথে সাথে এবং খাবার গ্রহনের পরে প্রচুর পানি পান ভুড়ি বাড়তে সহায়তা করে। খাবার হজমে সমস্যা করে। রাতের খাবার দেরী করে এবং খেয়েই যারা বিছানায় শরীর এলিয়ে দেন তাদের ভুড়ি বাড়ার সম্ভাবনা প্রবল। পানিটা আধ ঘন্টা পরে খান।
নয়. প্রতিদিন একটি ডিম, একটি কলা কোনভাবেই ডায়েট কন্ট্রোলে ক্ষতি করে না। এমনকি হার্টের রোগীও একটি ডিম খেতে পারেন। ডিম এলডিএল বা মন্দ কোলেস্টরল কমায়। একটি ডিমে ৬.৬ গ্রাম প্রোটিন থাকে। একটি ডিমে ২০০ মিলিগ্রাম এর মতো কোলেস্টেরল আছে। একজন স্বাভাবিক মানুষ দৈনিক ৩০০ মিলিগ্রাম কোলস্টেরল গ্রহন করতে পারে। ডিমের কুসুমে আছে বেটাইন। যা রক্তের হোমোসিস্টেইনের মাত্রা কমায়। রক্তে হোমোসিস্টেইনের মাত্রা বেশি হলে হৃদরোগের ঝুকি বাড়ে।
দশ. লেবু পানি খাবার নিয়ম হলো লেবু গোল করে কেটে দু এক টুকরো একটু কসুম গরম পানিতে দিয়ে তার মধ্যে সামান্য (হাফ চামচ) মধু দিয়ে খেতে হবে। এসিডিটি বোধ করলে এই খাবার বাদ দিতে হবে। লেবু পানি সকালে খেতে না পারলে দুপুরে খেলেও ক্ষতি নেই।
অনুরুপভাবে শসা খেলে ওজন কমে, তারমানে এই না আপনি শুধু শসাই খেলেন। তাহলে ওজন কমবে, তবে বিভিন্ন সমস্যার মুখে আপনাকে পড়তে হবে। আপনার দীঘল কালো চুল পড়ে যেতে পারে। চামড়া রুক্ষ হয়ে যেতে পারে।
মুহাম্মদ শফিকুর রহমান
কলাম লেখক, মুনালয়
দক্ষিন নাজিরপুর, ডাক ও থানা- বানারীপাড়া, বরিশাল-৮৫৩০
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন