নরসিংদী-৫, রায়পুরা আসনের চরাঞ্চলের এলাকাছাড়া কমবেশি ৫০ হাজার ভোটার তাদের ভোট দেয়ার কোন সুযোগ পাচ্ছে না। প্রতিপক্ষের লাঠিয়ালদের ভয়ে তারা নিজ বাড়িতে যেতে পারছে না। স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিক হয়েও তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে বঞ্চিত থাকার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, রায়পুরার চরাঞ্চলের নিলক্ষা, মির্জারচর, বাশগাড়াী, চরমধুয়া ও পাড়াাতলীসহ প্রায় সবকটি ইউনিয়নেই রয়েছে একাধিক লাঠিয়াল বাহিনী। সব লাঠিয়াল বাহিনীই বিএনপি ও আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় লালিত হয়ে আসছে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে আওয়ামী লীগ সমর্থক লাঠিয়াল বাহিনীগুলো থাকে এলাকাছাড়া। আবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে বিএনপির লাঠিয়াল ও তাদের সমর্থকরা থাকে এলাকাছাড়া। যার কারণে কোন নির্বাচনেই চরাঞ্চলের বহুসংখ্যক ভোটার তাদের ভোট প্রয়োগ করতে পারেনা।
এলাকার লোকজন জানান, এ বছরই প্রথম কমবেশি অর্ধলাখ ভোটার এলাকাছাড়া। আর এই সংখ্যা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। কারণ হচ্ছে, বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি ও সাবেক মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু চরাঞ্চলের ইউনিয়নগুলোতে যেসব দলীয় মনোনয়ন দিয়েছেন। তা নিয়ে প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে অন্তঃদ্ব›দ্ব সৃষ্টি হয়। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিতদের অভিযোগ হচ্ছে এমপি রাজু দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদেরকে বাদ দিয়ে তার নিজের অনুগত ও পছন্দের প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছেন। অনুগত প্রার্থী খুঁজতে গিয়ে তিনি বিএনপির নেতাদেরকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দিয়েছেন। এই মনোনয়ন নিয়ে চরাঞ্চলের প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নেই আওয়ামী লীগ দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পরে। আওয়ামী লীগের এই বিভক্তি প্রকাশিত হয় সরাসরি টেটা ও বন্দুক যুদ্ধের মাধ্যমে। বিগত ইউপি নির্বাচনের পর থেকে নিলক্ষা বাশগাড়ি, চরমধুয়া ও মির্জারচরসহ বিভিন্ন চরে কত সংখ্যক টেটা ও বন্দুক যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে তার কোন পরিসংখ্যান নেই। তবে হতাহত হয়েছে শত শত মানুষ। ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়েছে শত শত বাড়িঘরে। আর যুদ্ধে জয়ী হয়েছে আওয়ামী লীগের মনোনীত এবং নির্বাচিত চেয়ারম্যানরা। পরাস্ত হয়েছে বিদ্রোহীরা। এই অবস্থায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা এমপি রাজু সমর্থকদের পরাস্ত করার জন্য সন্ধি করেছিল বিএনপি সমর্থিত লাঠিয়ালদের সাথে। কিন্তু পুলিশের নিরপেক্ষতায় যথার্থতার প্রশ্নে প্রায় প্রতিটি যুদ্ধে পরাস্ত হয়েছে বিদ্রোহীরা। টেটা ও বন্দুক যুদ্ধে পরাস্ত হয়ে তাদেরকে এলাকাছাড়াা হতে হয়েছে। সাথে এলাকাছাড়াা হতে হয়েছে বিএনপি সমর্থিত লাঠিয়াল ও তাদের সমর্থকদেরও। যার কারণে এ বছর এলাকাছাড়া ভোটারের সংখ্যা বেড়ে গেছে কয়েকগুণ।
রায়পুর আসনের বিএনপি প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল জানিয়েছেন, চরাঞ্চলে এলাকাছাড়া ভোটারদের মধ্যে বিএনপির ভোটারের সংখ্যাই ৫০ হাজার। এসব এলাকা ছাড়া ভোটারদেরকে ভোট দেয়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্য তিনি রিটার্নিং অফিসার ও নরসিংদী জেলা প্রশাসককে জানিয়েছেন। কিছুদিন পূর্বে সাংবাদিকরা চরাঞ্চলের এলাকাছাড়াা ৫০ হাজার ভোটারের ভোটদান নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি জানান যে, তারা ভোট দিতে চাইলে এসব ভোটারদেরকে তিনি নিরাপত্তা দিবেন। কিন্তু এব্যাপারে এলাকার সচেতন লোকজন জানিয়েছেন, চরাঞ্চলে মোড়ালগিরি, লাঠিয়াল বাহিনী, টেটা যুদ্ধ, এগুলো সবই ট্রেডিশনাল হলেও রায়পুরার চরাঞ্চলের সমস্যাটি এখন রাজনৈতিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। লাথি এন্দুরও পর রাজনৈতিক ছাত্র ছায়া থাকার কারণে বিগত দুই বছরে পুলিশ সেখানকার দাঙ্গা দমনে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ রাখতে পারেনি। উপরন্তু দাঙ্গা দমন করতে গিয়ে পুলিশকেও লাঠিয়ালদের আক্রমণের শিকার হতে হয়েছে। পুলিশ লাঠিয়ালদের হাতে বহুবার মার খেয়েছে। রাজনৈতিক কারণে পুলিশ দাঙ্গা দমনে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। এই অবস্থায় পুলিশ দিয়ে চরাঞ্চলের ৫০ হাজার ভোটারের নিরাপত্তা বিধান করা কতটুকু সম্ভব হবে তা প্রশ্নাতীত নয়। তাছাড়া কোন আপস ফর্মুলায় এলাকাছাড়া ভোটাররা ভোট দিতে আসবেও না।
কিছুদিন পূর্বে রায়পুরার এমপি রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী লাঠিয়ালদের ডেকে সমঝোতার মাধ্যমে তাদেরকে তাদের বাড়ি ঘরে ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব করেছিলেন বলে জানা গেছে। কিন্তু লাঠিয়াল সর্দাররা জানিয়ে দিয়েছে দলকে না জিতিয়ে সমঝোতার মাধ্যমে তারা এলাকায় ফিরে যাবে না। তাদের যুক্তি হচ্ছে ইতপূর্বে যত সমঝোতা হয়েছে কোন সমঝোতায়ই ঠিক থাকেনি। সমঝোতার মাধ্যমে এলাকায় ফিরলে ক্ষমতাসীন লাঠিয়ালদের মাসে মাসে মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা না দিলে সকল সমঝোতা ভেঙে যায়। অসহায় অবস্থায় লাঠিয়ালের মার খেতে হয়। স্থায়ী সমাধান না হলে তারা এলাকায় ফিরবে না। এই অবস্থায় স্থানীয় প্রশাসন কিভাবে তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করবেন তার দিকে তাকিয়ে আছেন রায়পুরা হাজার হাজার সচেতন মানুষ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন