শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

মাদকের বিস্তার ও বিচারহীনতা

ইফতেখার আহমেদ টিপু | প্রকাশের সময় : ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:৪৪ এএম

মাদকের বিরুদ্ধে জোরালো লড়াই চালাতে এ সংক্রান্ত মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এ উদ্দেশ্যে সারা দেশে মাদকদ্রব্য অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল স্থাপনের কথা ভাবা হচ্ছে। মাদক নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ অনুযায়ী এ ধরনের ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুযোগ রয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী সারাদেশে মাদকসংক্রান্ত বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৩ লাখ ১৬ হাজার ২৭টি। গত এক বছরেই ১ লাখের বেশি মামলা হয়েছে। মামলাজটের কারণে এ সংক্রান্ত মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি সম্ভব হচ্ছে না। মাদকদ্রব্য অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল গঠন হলে এ সংক্রান্ত মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি সম্ভব হবে। 

স্মর্তব্য, নতুন আইনে মাদকসংক্রান্ত মামলার বিচার দ্রুত সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আইনের ৩১ ধারা অনুয়ায়ী মাদকদ্রব্যসহ আসামি ধরা হলে আদালতে সোপর্দ করার ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে এবং আসামি ধরা না পড়লে ৬০ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে হবে। তদন্ত কর্মকর্তা এতে ব্যর্থ হলে কারণ উল্লেখ করে পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে হবে। এজন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও আদালতকে লিখিতভাবে বিলম্বের কারণ অবহিত করার বিধান রয়েছে। নতুন আইনের ৫১ ধারা অনুযায়ী, ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে মাদকদ্রব্য অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা পাওয়ার ৯০ কর্মদিবসের মধ্যে বিচার শেষ করতে হবে। তা সম্ভব না হলে আদালত পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে কারণ উল্লেখসহ বিচারকাজ শেষ করবে। এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টকে লিখিতভাবে জানাতে হবে এবং এর অনুলিপি সরকারকে পাঠাতে হবে। এ ক্ষেত্রে আরও ১৫ দিন সময় বাড়াতে পারবে ট্রাইব্যুনাল। নতুন আইনে মাদক ব্যবসায়ীদের শক্তভাবে ধরার বিধান রাখা হলেও মামলাজটের কারণে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ছে। মাদকদ্রব্য অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হলে বিচারসংক্রান্ত দীর্ঘসূত্রতার অবসান ঘটবে। অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত হলে তা মাদক ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের মনে ভয় ঢোকাতে সক্ষম হবে। মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টিতেও দ্রুত বিচার অবদান রাখবে। মাদক সমস্যার সমাধানে সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক- সব ধরনের ব্যবস্থাই নেওয়া দরকার। জনসচেতনতার বিকল্প নেই। জনসচেতনতা বাড়াতে সরকারি-বেসরকারি উভয় ধরনের প্রতিষ্ঠান ভূমিকা পালন করতে পারে।
মাদকের চাহিদা, সরবরাহ, চিকিৎসা অনেক দিক বিবেচনা করে সমন্বিত কর্মসূচি নিতে হবে। একক কোনো উপায়ে এ সমস্যার মোকাবেলা করা প্রায় অসম্ভব। বাংলাদেশে সরকারি অভিযানে টার্গেট করা হচ্ছে মূলত খুচরা মাদক বিক্রেতাদের। গডফাদাররা রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় গাঢাকা দেওয়ার ফুরসত পায়। তাই আইনি সমস্যায় পড়তে হয় কর্তৃপক্ষকে, তাদের পেছনে লাগলেও প্রমাণ পাওয়া যায় না। গডফাদারদের কথা সরকার জানে। তাদের হয় শাস্তি দিতে হবে অথবা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
তরুণ-যুবকদের বেশ বড় একটা অংশ এই আত্মঘাতী আসক্তির শিকার। তবে মাদকাসক্তি শুধু এই বয়সীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, পূর্ণবয়স্ক, এমনকি শিশু-কিশোরদের মধ্যেও মাদকাসক্তি ছড়িয়ে পড়েছে। মাদকাসক্তির এলাকাও সীমাবদ্ধ নেই। রাজধানী ঢাকা থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম-মফস্বল পর্যন্ত সর্বত্র মাদকাসক্তি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। মাদকাসক্তি স্থায়ী রূপ ধারণ করেছে মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতা এবং মাদক ব্যবসায়ীদের বিচারহীনতার কারণে। দেশের অসংখ্য স্থানে প্রকাশ্যে মাদকদ্রব্য কেনাবেচা চলে। অধিকাংশ মাদকদ্রব্য আসে বিদেশ থেকে অবৈধ পথে। আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির সদস্য সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে এত অনায়াসে এত বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য পাচার হয়ে আসা সম্ভব নয়। সীমান্তপথে মাদক চোরাচালান ও দেশের ভেতরে মাদকদ্রব্যের কেনাবেচা অত্যন্ত কঠোর হাতে বন্ধ করতে হবে। এ ব্যাপারে বিজিবি, পুলিশ, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের জবাবদিহি নিশ্চিত করা একান্ত জরুরি। কারণ, তাদের একাংশের সহযোগিতা ছাড়া এই মাত্রায় মাদকের ব্যবসা চলা সম্ভব নয়।
লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক দৈনিক নবরাজ

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন