নৌকা তথা সরকারি শিবিরে সম্ভাব্য বিজয়ের আগাম উল্লাস এবং ধানের শীষ তথা বিরোধী শিবিরে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও ভয়ের আবহের মধ্যে আজ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ভোট গ্রহণ অবাধ ও সুষ্ঠু হলে নরসিংদী জেলার ৫টি আসনে সাড়ে ১৫ লক্ষাধিক ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবে। নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে বলে জানিয়েছেন নরসিংদীর রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক সৈয়েদা ফারহানা কাউনাইন। গত ২৭ ডিসেম্বর তার কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানিয়েছেন, ভোটারদের সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। বিনা বাধায়ে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ পাবে। ভোটারদের নিরাপত্তা বিধানে প্রচুর সংখ্যক আনসার, ভিডিপি, পুলিশ, বিজিবি ও সেনা নিয়োগ করা হয়েছে। সেনাবাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে টহলরত থাকবে।
এবারের নির্বাচনে নরসিংদীর পাঁচ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থীরাই তাদের বিজয় নিশ্চিত বলে ঘোষণা দিয়েছেন। আগে থেকে ভোট কর্মীরা ভেঁপু বাজিয়ে আনন্দ-ফ‚র্তি করে উল্লাস করছে। পক্ষান্তরে বিএনপি প্রার্থী ও তাদের ভোটকর্মীরা সার্বক্ষণিক গ্রেফতার আতঙ্কে সময় কাটাচ্ছে। নরসিংদী সদর আসনে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী ও বিএনপির যুগ্ন মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন কারাবন্দি থাকায় তার কর্মীরা চোরাগোপ্তাভাবে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে। এটুকু প্রচারণার সুযোগ দিচ্ছে না থানা পুলিশ। নরসিংদী শহর বিএনপির সভাপতি এ কে এম গোলাম কবির কামাল জানিয়েছেন, তিনি যাতে কেন্দ্রে কেন্দ্রে নির্বাচনী এজেন্ট নিয়োগ করতে না পারেন সেজন্য তাকে গ্রেফতার করতে পুলিশ ব্যাপক তল্লাশি চালাচ্ছে। শুক্রবার রাতেও তার বাড়িতে গিয়ে পুলিশ তল্লাশি চালায়। শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফারুক উদ্দিন ভূইয়াও পুলিশের ভয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। শুক্রবার রাতে নরসিংদী থানা পুলিশ পুরানপাড়া গাবতলী একটি বাড়ি থেকে খালেদা আক্তার নামে ৬৫ বছর বয়োস্কা এক মহিলাকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে। বৃদ্ধার পুত্র জাহিদ হাসান ওমর ধানের শীষের নির্বাচন করার অপরাধে তাকে না পেয়ে তার মাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশি নিপীড়নের ভয়ে খায়রুল কবির খোকনের স্ত্রী শিরিন সুলতানা নরসিংদী আসতে সাহস পাচ্ছেননা। এ অবস্থায় তিনি তার অবস্থান থেকে তার স্বামী খায়রুল কবির খোকনকে ধানের শীষে ভোট দেয়ার জন্য নরসিংদী সদর উপজেলার ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। যে কোন অবস্থায় ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার অনুরোধ জানিয়েছেন। বিএনপি নেতা কামাল জানিয়েছেন খায়রুল কবির খোকনের পক্ষ থেকে নরসিংদী সদর আসনের ১৩২টি ভোট কেন্দ্রেই পোলিং এজেন্ট নিয়োগের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
নরসিংদী-২ (পলাশ) আসনের কয়েকজন বিএনপি নেতা জানিয়েছেন, ড. মঈন খানের ওপর অব্যাহত হামলার মুখেও অত্যন্ত কঠিন অবস্থার মধ্যেও তারা পলাশের ৮৮টি কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট নিয়োগ দেন। তারা যাতে পোলিং এজেন্ট নিয়োগ করতে না পারেন সেজন্য পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের ভোট কর্মীরা তাদেরকে ব্যাপকভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে।
নরসিংদী-৩ (শিবপুর) আসনে মঞ্জুর এলাহীর প্রার্থিতা হাইকোর্ট স্থগিত করে দেয়ায় সেখানে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থী যুবলীগ নেতার মধ্যে। সেখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কয়েকটি হামলার কারণে যুবলীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম মোল্লা ও তাদের সমর্থকদের মধ্যেও ব্যাপক সংশয় দেখা দিয়েছে। তবে সিরাজ মোল্লার সমর্থকরা জানান, যে কোন ভাবে তারা মাঠে থাকবে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে সিরাজ মোল্লার সিংহ মার্কা বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে। নরসিংদী-৪ (মনোহরদী-বেলাব) আসনে বিএনপির প্রার্থী সাবেক এমপি সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুলের ভোট কর্মীরা জানিয়েছেন, তারা মনোহরদী বেলাবর ১৫৪টি ভোটকেন্দ্রেই পোলিং এজেন্ট নিয়োগের তালিকা তৈরি করেছেন। যেকোনো পরিস্থিতিতে তারা শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবে। নরসিংদী-৫ (রায়পুরা) আসনে বিএনপির প্রার্থী বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল জানিয়েছেন, তিনি যাতে কেন্দ্রে কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট নিয়োগ না দিতে পারেন সেজন্যে পুলিশ কেন্দ্রভিত্তিক নেতাকর্মীদের পাকড়াও করে চলছে। প্রতি রাতে পুলিশ বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে। ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে আওয়ামী লীগের কর্মীরা। তিনি জানিয়েছেন শত প্রতিকূলতা সত্তে¡ও তিনি মাঠ ছাড়েননি তার কর্মীরাও মাঠ ছাড়বে না। ভোটারদের ভোটাধিকার প্রয়োগে বাধা দূর করার জন্য তারা শেষ পর্যন্ত লড়ে যাবেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন