রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

খ্রিষ্টীয় নববর্ষ

| প্রকাশের সময় : ১ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

আজ পয়লা জানুয়ারি, খ্রিষ্টীয় ২০১৯ সালের প্রথম দিন। গতকাল একটি বছরকে পেছনে ফেলে এসেছি আমরা। কালগর্ভে হারিয়ে গেছে ২০১৮ সাল। আমরা জানি, কাল নিরবধি, অবিভাজ্য। তারপরও আমরা কালকে বিভাজন করে নিয়েছি আমাদেরই প্রয়োজনে যাতে নির্দিষ্ট কালপরিধির মধ্যে আমাদের সফলতা ও ব্যর্থতা পরিমাপ করতে পারি। এই মূল্যায়নের দরকার আছে। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে অগ্রগতির পথে ধাবিত হওয়ার জন্য এটা অপরিহার্য। ২০১৮ সালের হিসাব-নিকাশ ও মূল্যায়নে আমরা বলতে পারি, আমাদের জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে বছরটি মিশ্রভাবেই অতিবাহিত হয়েছে। এখানে সাফল্য-ব্যর্থতা দুই-ই আছে। তুলনামূলক বিচারে হয়তো সাফল্যের চেয়ে ব্যর্থতাই বেশি। এতে বিমর্ষ বা হতাশ হওয়ার কিছু নেই। ব্যর্থতাকে সাফল্যের আলোয় উদ্ভাসিত করার জন্য নতুন বছরে আমাদের শক্তি ও সামর্থকে পূর্ণমাত্রায় নিয়োজিত করতে হবে। এটাই আমাদের অঙ্গীকার ও শপথ হওয়া উচিৎ। সন্দেহ নেই, জাতীয় জীবনে আমাদের অনেক স্বপ্ন-প্রত্যাশাই অনর্জিত রয়ে গেছে। নতুন নতুন সংকট-সমস্যাও জন্ম হয়েছে। নতুন বছরে সেগুলো প্রলম্বিত হবে, স্বাভাবিক কারণেই। মানুষের কষ্ট-দুর্ভোগ বেড়েছে। অর্থনীতি বেহাল অবস্থায় পতিত। বিনিয়োগ-শিল্পায়ন-কর্মসংস্থান বাড়েনি। রফতানি আয়, জনশক্তি খাতের রেমিট্যান্স, রাজস্ব আদায়- সবকিছুই কমেছে। ব্যাংকিং খাত রীতিমত বিপন্নদশায় এসে উপনীত হয়েছে। দুর্নীতি-দুষ্কৃতি ও অর্থপাচার বেড়েছে। একই সঙ্গে নাগরিক নিরাপত্তা সম্পূর্ণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। খুন, গুম, অপহরণ, ছিনতাই, রাজাহানি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। বিরোধীদলের ওপর দমন-পীড়ন, হামলা-মামলা জোরদার হয়েছে। সুশাসনের অভাব ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি বিস্তৃত হয়েছে। দেশেই কেবল নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এ নিয়ে উদ্বেগ ও বিচলন লক্ষ করা গেছে।
গেল ২০১৮ সালে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন ছিল ঘটনাবহুল। নির্বাচনের বছর হওয়ায় রাজনৈতিক টানাপোড়েন, সংঘাত-সংঘর্ষ বাড়ার আশঙ্কা ছিল। ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি এবারের নির্বাচনে আসবে কিনা তা নিয়েও সংশয় ছিল। শেষ পর্যন্ত নানা ঘটনাপ্রবাহের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অন্যান্য দলও নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেয়। ওদিকে সরকারি দল জাতীয় পার্টিকে সঙ্গে নিয়ে মহাজোট গঠন করে। ফলে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হয়। তফসিল ঘোষণার পর সরকারি দল ব্যাপকভাবে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিলেও বিএনপি, ২০ দল ও ঐক্যফ্রন্ট প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিতে পারেনি। তাদের প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকরা সরকারি দলের কর্মী-সমর্থকদের দ্বারা একদিকে, অন্যদিকে আইনশৃংখলা বাহিনীর তরফে বাধাপ্রাপ্ত, হামলা-মামলা ও গ্রেফতারের শিকার হয় ব্যাপকভাবে। শেষাবধি ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় নির্বাচন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও মহাজোট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিজয় অর্জন করে। নির্বাচনে প্রায় সব ধরনের অনিয়ম, অসঙ্গতির পাশাপাশি সহিংসতা, প্রাণহানিরও ঘটনা ঘটে। এ যাবৎ এমন বিস্ময়কর বিজয় ও অবিশ্বাস্য পরাজয় কখনো দেখা যায়নি। সব চেয়ে বড় পরাজয় হয় গণতন্ত্রের। অন্তর্ভূক্তিমূলক বা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলেও নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে এমন দাবি করা যায় না। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সংকটের অবসান এবং গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে এ নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ হলেও এ লক্ষ্য কতদূর অর্জিত হবে, ভবিষ্যতই তা বলতে পারে।
যা হোক নতুন বছরে নতুন সরকার গঠিত হবে। সরকারের নিকট দেশ-জাতির প্রত্যাশা অনেক। প্রথমতঃ রাজনৈতিক স্থিতিশীল ও শান্তি এবং দ্বিতীয়তঃ অর্থনৈতিক বিকাশ, উন্নয়ন ও জনগণের জীবন-মানের ইতিবাচক পরিবর্তন, মোটা দাগে, এসবই হবে নতুন সরকারের সর্বাগ্রাধিকার প্রাপ্তদায়িত্ব। দেশের মানুষ শান্তি চায়, নিরাপত্তা চায়, সব রকম গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার চায়। একই সঙ্গে চায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি। কোনো বিশৃংখলা, সংঘাত-সহিংসতা তারা দেখতে চায় না। মানুষের এ প্রত্যাশা পূরণে নতুন সরকার উদ্যোগী হবে, এটাই আমরা কামনা করি। আমরা যদি সকলে পরিশুদ্ধ দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হই, জনকল্যাণে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই- তবে পথের বাধা অতিক্রম করা মোটেই কঠিন হবে না। আজকের দিনে আমাদের সংকল্পবদ্ধ হতে হবে, আগামী দিনগুলো আমরা সকলের জন্য শুভ, কল্যাণময় ও নিরাপদ করে তুলবো। পরিশেষে আমরা খ্রিস্টীয় এই নববর্ষে আমাদের পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীসহ দেশের সর্বস্তরের মানুষকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন