ডিজিটাল যাত্রীসেবার অংশ হিসেবে ভাড়ায় মোটরসাইকেল পাওয়া যাবে বলে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে। গত শনিবার রাজধানীর গুলশানে একটি বেসরকারি কনভেনশন সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ডাটাভক্সসেল এ তথ্য জানিয়েছে। তারা স্যাম (শেয়ার-এ মোটরসাইকেল) প্লাটফর্মের মাধ্যমে এ সেবা প্রদান করবে। এটি একটি মোবাইল অ্যাপস। আগামী জুন থেকেই সংস্থাটি এ সেবা চালু করতে পারবে বলে জানিয়েছে। মোটরসাইকেল ভাড়া নেয়া সম্পর্কে জানানো হয়েছে, রাজধানীতে চার লাখেরও বেশি ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল রয়েছে, যা দিয়ে প্রতিদিন চার লাখেরও বেশি যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব। স্যাম মূলত একটি অ্যাপ্লিকেশন হিসেবে কাজ করবে। মোটরসাইকেল ভাড়া নিতে স্যাম ব্যবহার করা যাবে। স্যাম ব্যবহার করে যাত্রীরা মোটরসাইকেল ভাড়া করে গন্তব্যে পৌঁছাতে সক্ষম হবে। যাত্রীরা তাদের টাকাও পরিশোধ করতে পারেবে এই অ্যাপসের মাধ্যমে। স্যামের ব্যবহার পদ্ধতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, যাত্রী ও চালকের অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে রাইডার অ্যাপসটি ইনস্টল থাকতে হবে। এই অ্যাপস লগইন থাকা অবস্থায় যাত্রী দুই কিলোমিটার এলাকার মধ্যে থাকা বাইকারের (বাইক চালক) কাছে অনুরোধ পাঠাতে পারবে। বাইকার সম্মত হলে অনুরোধ গ্রহণ করে যাত্রীকে তুলে নিয়ে তার গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত কিছু বাংলাদেশী ও ভারতীয় প্রকৌশলী মিলে অ্যাপসটি তৈরি করেছেন।
ভাড়ায় মোটরসাইকেলের বিষয়টি অনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রথম শোনা গেলেও আদৌ নতুন নয়। অনেকদিন থেকেই রাজধানী ঢাকা এবং রাজধানীর বাইরে বিশেষ করে উপজেলা পর্যায়ে এই যাতায়াত ব্যবস্থা চালু রয়েছে। ভাড়ার মোটরসাইকেলের বিষয়টি এখন পর্যন্ত অনানুষ্ঠানিক। এক ধরনের বিশ্বস্ততার মধ্য দিয়ে চলছে। যিনি ভাড়া নিচ্ছেন তিনি মূলত নিজের সাইকেল হিসেবেই তা ব্যবহার করছেন। বিপত্তি দেখা দেয় যখন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কাগজপত্র পরীক্ষা করে বা কোনো দুর্ঘটনা ঘটে। এখন পর্যন্ত এ ধরনের মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে যে বাস্তবতা বিদ্যমান তা হলো ভাড়ায় চলা মোটরসাইকেলগুলোতে সাধারণত গাড়ির মূল কাগজপত্র থাকে না। নিয়মানুযায়ী প্রতিটি নিবন্ধিত যানবাহনে যানবাহনের মূল কপি রাখার বিধান রয়েছে। গ্রামে-গঞ্জে নিকটতম দূরত্বে যাওয়ার জন্য এক ধরনের ভাড়ায় যাবার অলিখিত ব্যবস্থা চালু আছে। শুধু আমাদের দেশে নয়, থাইল্যান্ডসহ অনেক দেশেই পেশাদারিত্বের ভিত্তিতে মোটরসাইকেল ভাড়ায় চালানো হয়। অনেক দেশে সমুদ্রের বিচেও ভাড়ায় মোটরসাইকেল পাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। পর্যটনের সুবিধার জন্যই এ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বাস্তবতার আলোকে আমাদের দেশেও ভাড়ায় মোটরসাইকেলের ধারণা সমর্থনযোগ্য। কারণ, এর ফলে একদিকে যেমনি সময় বাঁচানো সম্ভব অন্যদিকে খরচও বাঁচানো যায়। বাস বা অন্যান্য গণপরিবহনের ওপর চাপ যেমনি কমে আসবে তেমনি গন্তব্যে দ্রুত পৌঁছা যাবে। এক্ষেত্রে সুবিধার পাশাপাশি বেশকিছু মারাত্মক ঝুঁকিও রয়েছে। মোটরসাইকেল হচ্ছে এমন এক বাহন যা মূলত খোলা অবস্থায় চলে। তাই দুর্ঘটনা ঘটলে তা সরাসরি শরীরে আঘাত করে। আলোচ্য কোম্পানিটি বিদ্যমান মোটরসাইকেলকে বিবেচনায় নিয়েই যাতায়াতের এই নতুন ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। এটা ইতিবাচক। তবে এক্ষেত্রে সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে। যারা বর্তমানে মোটরসাইকেল চালাচ্ছে তাদের যানবাহন কতটা আইনানুগ এবং চালক হিসেবে তারা কতটা দক্ষ, এ বিষয়টি ভালোভাবে যাচাই করে নিতে হবে। ভাড়ায় হলেও এখানে সেবার মানসিকতার বিষয়টি অগ্রাধিকার দিতে হবে। ট্রাফিক জ্যাম এড়িয়ে পেশাদারিত্বের ভিত্তিতে মোটরসাইকেলে যাতায়াত করা গেলে অবশ্যই তা গ্রহণযোগ্য।
যারা ভাড়ায় মোটরসাইকেলের ব্যবস্থার কথা বলেছেন তারা যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টি কতটা গুরুত্ব দিচ্ছেন তা জানা যায়নি। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হতে হবে সুচিন্তিত ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে। যাত্রী নিরাপত্তার বিষয়টি শতভাগ মূল ভাবনায় রেখে বিদ্যমান বাস্তবতায় যদি ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালানোর ব্যবস্থা নেয়া যায়, তাহলে তা অবশ্যই জনসাধারণের যাতায়াত সুবিধায় নবদিগন্ত উন্মোচন করবে। আমরা আশা করি, সংশ্লিষ্টরা সবদিক বিবেচনায় নিয়েই প্রকল্প বাস্তবায়নের দিকে এগুবেন। আমরা এ প্রকল্পের সাফল্য কামনা করছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন