সাম্প্রতিককালের সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় কাঁপছে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল। ইতোমধ্যে গত দুই দশকের রেকর্ড অতিক্রম করে বরিশালে তাপমাত্রার পারদ ৬ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে গেছে। কনকনে ঠান্ডায় জনস্বাস্থ্যের ওপরও বিরূপ প্রভাব পড়ছে। শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের নিউমোনিয়া, সর্দি, কাশি ও জ্বরের মত অসুখে বাড়ছে।
সরকারি ও বেসরকারী হাসপাতালগুলোতে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। এমনকি এধরনের ঠান্ডায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধিরও আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল বোরো’র বীজতলা। ফলে চলতি রবি মওশুমে সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলেও বোরো আবাদের লক্ষ্য অর্জন নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে মাঠ পর্যায়ের কৃষিবিদদের মধ্যে। চলতি রবি মওশুমে সারা দেশে প্রায় ৪৮ লাখ ৪২ হাজার হেক্টরে বোরো আবাদেও মাধ্যমে ১ কোটি ৯৭ লাখ টন বোরো চাল পাবার লক্ষ্য স্থির করেছে কৃষি মন্ত্রনালয়। গত দিন দশেকের লাগাতর শৈত্য প্রবাহে দুর্ভোগ বাড়ছে দক্ষিণ উপক‚লের ছিন্নমূল মানুষের।
শীতের তীব্রতার সাথে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশায় সড়ক, নৌ ও আকাশ যোগাযোগও বিপর্যস্ত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত কুয়াশার চাঁদরে ঢাকা পড়ছে পদ্মা ও মেঘনা অববাহিকা এলাকা। ফলে রাজধানীর সাথে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে নৌ যোগাযোগ বন্ধ থাকছে। প্রায় প্রতি রাতেই হাজার হাজার যাত্রী নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা শত শত নৌযান মেঘনা ও এর উজান-ভাটির বিভিন্ন নদ-নদীতে আটকা পড়ছে। বিপর্যয়ের কবলে পড়ছে দেশের প্রধান দুটি ফেরি সেক্টরসহ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া, মাওয়ার কাঠালবাড়ী-শিমুলিয়া, ভোলা-লক্ষ্মীপুর এবং লাহারহাট-ভেদুরিয়া সেক্টরে মধ্য রাত থেকে ফেরি চলাচল।
গত ২৯ ডিসেম্বর বরিশালে মওশুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৬ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। উপক‚লীয় এলাকার মানুষ কোন দিনই এত কনকনে ঠান্ডার সাথে পরিচিত নয়। সাগর পাড়ের তাপমাত্রা সারা দেশের চেয়ে একটু উপরেই থাকে শীত। বরিশালে তাপমাত্রার পারদ গত দু দশকেও এত নিচে কখনো নামেনি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের মতে ডিসেম্বরে বরিশালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা প্রায় ১২ডিগ্রী সেলসিয়াস থাকার কথা। গতকালও বরিশালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৫ডিগ্রী সেলসিয়াস। অথচ আবহাওয়া বিভাগের মতে জানুয়ারী মাসে বরিশালে সর্বনিম্ন গড় তাপমাত্রা থাকার কথা ১১দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
আবহাওয়া বিভাগ থেকে আজকালের মধ্যে পরিস্থিতি উন্নতির কোন খবর দেয়া সম্ভব হয়নি। আজও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে বলে জানিয়ে আবহাওয়া বিভাগ দিনের তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পাবার কথা বলেছে। গতকাল দুপুরে বরিশালে সর্বেচ্চ তাপমাত্রা ছিল প্রায় ২৫ডিগ্রী সেলসিয়াস। এমনকি বরিশালসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে যে মৃদু থেকে মাঝারী ধরনের শৈত্য প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে আজ সকালের পরবর্তী ৪৮ ঘন্টায় রাতের তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধির কথাও বলা হয়েছে নিয়মিত আবহাওয়া বুলেটিনে।
গত এক সপ্তাহেরও অধিক সময়ের শৈত্য প্রবাহে বোরো বীজতলা কোল্ড ইঞ্জুরির কবলে পড়ার আশঙ্কা করছেন কৃষিবিদরা। ফলে বোরা আবাদ নিয়ে সঙ্কট তৈরীরও আশংকা সৃষ্টি হতে পারে। পাশাপাশি চলমান এ শৈত্য প্রবাহে শীতকালীন সবজিরও ক্ষতির আশংকার কথা জানিয়েছেন কৃষিবীদরা। এর ফলে শীতালীন বিভিন্ন সবজির উৎপাদন ব্যাহত হবার পাশাপাশি গুনগত মানেও বিপর্যয় সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে লাগাতর শৈত্যপ্রবাহে বরিশাল শেরে এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জেনারেল হাসপাতালে নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। চিকিৎসকরা এসময়ে শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের ঠান্ডা এড়িয়ে বিশেষ সতর্কতার সাথে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।
শৈত্য প্রবাহের কারণে গত কয়েকদিন ধরেই বরিশাল মহানগরীর বস্তিবাশীদের দুর্ভোগও বাড়ছে। এছাড়া নৌ টার্মিনাল ও বাস টার্মিনালগুলোতে ভবগুরে ও ছিন্নমূলদের দুরবস্থা সব দক্ষিণাঞ্চলের অনেক এলাকাতেই রাতের শীত থেকে সাময়িক মূক্তি পেতে আগুন জালিয়ে তাপ নিতেও দেখা যাচ্ছে ছিন্নমূল মানুষকে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন