একজন অতি সাধারণ, নিরক্ষর, গরিব মানুষকে যদি বলা হয়, কী ভাই, আপনি কি আপনার দেশের শাসক হিসেবে একজন মিথ্যাবাদী, লম্পট, কপট, ধোঁকাবাজ, অত্যাচারী, ব্যভিচারী, অর্থলোভী, দাম্ভিক, কর্কশ, রুক্ষভাষী, আত্মকেন্দ্রিক, দুর্নীতিবাজ তথা ঠগ ব্যক্তিকে পছন্দ করেন? উত্তরে অবশ্যই বলবেন, ‘না’। শাসনে তো নয়ই, এমনকি সমাজেও এই রকম লোকের অস্তিত্ব মেনে নেয়া যায় না। আবার আপনি কি আপনার শাসক হিসেবে এ রকম একজন লোককে পছন্দ করেন যিনি সত্যবাদী, জনদরদি, নিঃস্বার্থ, উদার, মিষ্টভাষী, দুর্নীতিমুক্ত, ন্যায়পরায়ণ, সৎ অনাড়ম্বর জীবনযাপনকারী, কোমলপ্রাণ, দায়িত্বশীল, সদাশয় এবং সদালাপী ইত্যাদি গুণের অধিকারী? উত্তর হবে, অবশ্যই।
তাহলে শেষোক্ত গুণাবলী হাসিল করার এবং প্রথমোক্ত দোষাবলী থেকে নি®কৃতি পাওয়ার একটি মাত্র হাতিয়ার যদি আয়ত্ব করা যায় তবে তিনিই হবেন একজন সর্বত্র প্রশংসনীয় শাসক। আর সে হাতিয়ার হচ্ছে, আল্লাহর ভয় এবং পরকালের বিশ্বাস।
ইসলামের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এ রকম শাসকবৃন্দের গুণাবলী আজও মানুষকে সঠিক শাসনের পথ প্রদর্শনে সক্ষম। তাই ইসলামের কিছু কিছু ঘটনাবলী তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
মহানবীর (স.) পরেই ইসলামের প্রথম খলিফা নিযুক্ত হন হযরত আবুবকর (রা.)। খলিফা নিযুক্তির পর হযরত আবুবকর (রা.) তাঁর প্রথম ছোট্ট ভাষণে বলেন, ‘আমি আপনাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ নই। আপনাদের সকলের সাহায্য ও পরামর্শ আমার কাম্য। আমি ন্যায় ও সত্যের পথে থাকলে আপনারা আমাকে সমর্থন করবেন। বিপথগামী হলে আমাকে উপদেশ দেবেন। আমি বরণ করব সত্য, বর্জন করব মিথ্যা। আমার চোখে ধনী-নির্ধন, সবল-দুর্বল সকলেই সমান। আপনারা আমাকে ততক্ষণ মেনে চলবেন, যতক্ষণ আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে মেনে চলি। অন্যথায় আপনাদের নেতা হওয়ার আমার কোনো অধিকারই থাকবে না।’
আবু বকর (রা.) মুসলিম ও সেনাবাহিনীকে দশটি অমূল্য উপদেশ দিয়েছিলেন। যথা-
কাউকে প্রতারিত করো না,
চুরি করো না,
ব্যভিচার করো না,
বিশ্বাসঘাতকতা করো না,
কারো অঙ্গচ্ছেদ করো না,
স্ত্রীলোক ও বৃদ্ধকে হত্যা করো না,
খেজুর গাছ নষ্ট করো না,
ফলবান বৃক্ষ নষ্ট করো না,
শস্য বা শস্যক্ষেত নষ্ট করো না,
প্রয়োজন ব্যতীত গবাদি পশু হত্যা করো না।
সত্যবাদিতা আবুবকর (রা.)-এর প্রধান পরিচয়, এ জন্য তাঁকে সিদ্দিক বা সত্যবাদী বলে ডাকা হতো। তাঁর খেলাফতের জমানায় একজন বুড়ি, যাকে দেখাশোনা করার কেউ ছিল না, খলিফা স্বয়ং রাতের অন্ধকারে সেই বুড়ির ঘর-দোয়ার, বিছানাপত্র পরিষ্কার করে নিজ হাতে বুড়িকে খাওয়াতেন। দৈনন্দিন অন্যান্য কাজের মতো এটাও একটা কাজ ছিল আবু বকর (রা.) এর।
খলিফা নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি যথারীতি কাপড়ের ব্যবসার জন্য বাজারে যাচ্ছিলেন। রাস্তায় হযরত ওমর (রা.)-এর সঙ্গে দেখা হলে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কোথায় যাচ্ছেন?’ জবাবে হযরত আবুবকর (রা.) বললেন, ‘ব্যবসা করতে বাজারে যাচ্ছি।’ তখন ওমর (রা.) বললেন, ‘এভাবে বাজারে গেলে খেলাফতের কাজ কীভাবে চলবে!’ আবুবকর (রা.) বললেন, ‘তাহলে আমার পরিবার-পরিজনের ভারণপোষণের কী হবে?’ জবাবে ওমর (রা.) বললেন, ‘আপনার হাতে মুসলমানদের যে কোষাগার বা বায়তুলমাল আছে, তা থেকে আপনার ভরণপোষণের খরচ বাবদ ভাতা নির্দিষ্ট করা হবে যেহেতু আপনি সকল মুসলমানদের তরফে খেলাফতের কাজে নিয়োজিত আছেন।’ অতঃপর তাঁরা দু’জনে মিলে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের পরামর্শক্রমে একজন সাধারণ মুহাজিরের ভাতার সমপরিমাণ ভাতা খলিফার জন্য নির্ধারণ করলেন। একদিন খলিফার স্ত্রী কিছু মিষ্টিদ্রব্য খাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে খলিফা বললেন, আমার কাছে অতিরিক্ত পয়সা নেই আর বায়তুলমালের পয়সা জনগণের। খলিফার স্ত্রী বললেন, আমি দৈনন্দিন পারিবারিক খরচ থেকে কিছু কিছু করে সঞ্চয় করে মিষ্টিদ্রব্য আনার জন্য খলিফাকে অনুরোধ করি। কিন্তু খলিফা বললেন, অভিজ্ঞতা থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে, এই পরিমাণ পয়সা বায়তুলমাল থেকে কম নিলে পরিবার পরিচালনায় কোনো রূপ অসুবিধা হবে না। অতএব খলিফার হুকুমে স্ত্রীর সঞ্চিত পয়সা বায়তুলমালে জমা করে দেওয়া হলো এবং তৎসঙ্গে তিনি নির্দেশ দিলেন পরবর্তীতে এই পরিমাণ পয়সা যেন তাঁর ভাগ থেকে কম করা হয়।
নবীজির সাথী ইসলামের খলিফা, আল্লাহ কর্তৃক ঘোষিত ব্যক্তিত্ব, আখেরাতের বা পরকালের নির্ভয়প্রাপ্ত হজরত আবুবকর (রা.) একদিন তৃণখণ্ড হাতে নিয়ে বলছেন, ‘হায়, আমি যদি তৃণখণ্ড হতাম যা পশু খেয়ে ফেলত। কখনও বলতেন, আমি যদি কোনো মুমিনের শরীরের পশম হতাম যা কেটে ফেলা হতো!’ একদিন একটি ছাগলকে গাছের নিচে শুয়ে থাকতে দেখে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললেন, ‘হায়, আমি যদি এই ছাগলের মতো হতাম, চলতাম ফিরতাম, গাছের ছায়ায় আরাম করতাম তাহলে পরকালে কোনো বিচারের মুখোমুখি হতাম না।’
তাঁর চরিত্রের কথা বলতে গিয়ে অধ্যাপক মুইর বলেন, ‘মোহাম্মদ (সা.) যদি একজন জ্ঞান প্রতারক হতেন, তা হলে তিনি কখনই এমন একজন মহানুভব বিশ্বাসী বন্ধু লাভ করতে পারতেন না, যিনি শুধু বিচক্ষণ, দূরদর্শী ও জ্ঞানীই ছিলেন না, সমগ্র জীবনে নিষ্ঠাবান ও সৎ ছিলেন।’
মাওলানা মহম্মদ আলী হজরত আবুবকর (রা.)-এর অবস্থান সম্পর্কে বলেছেন, ‘তাঁর নম্রতা একনিষ্ঠতা, অনাড়ম্বর জীবন অতিসূত্র নীতিজ্ঞান, গরিব দরদি মন, কঠিন সংকল্প, ক্লান্তিহীন অধ্যবসায়, সর্বোপরি এক আল্লাহতে অটল ও অফুরন্ত বিশ্বাস প্রভৃতি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ইতিহাসে মহানবীর পরই।’
সৈয়দ আমির আলী বলেন, ‘আবুবকর (রা.) তাঁর গুরু অর্থাৎ মহানবী (সা.)-এর ন্যায় দৈনন্দিন জীবনে আচার-ব্যবহারে একেবারেই অনাড়স্বর ছিলেন। তিনি কোমল অথচ কঠোর ছিলেন। জনসাধারণের কল্যাণে ও নতুন রাষ্ট্রের শাসনকার্যে তিনি সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। তিনি এতই নম্র ছিলেন যে, সব কথায় বলতেন, ‘আমাকে আল্লাহর খলিফা বল না, আমি আল্লাহর রসুলের খলিফা মাত্র।’
ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর (রা.)-এর মহান চরিত্রের গুণাবলী আমাদের শাসকবর্গের জন্য পথপ্রদর্শক। অধ্যাপক মুইর বলেন, ‘সরলতা ও কর্তব্যনিষ্ঠা ছিল তাঁর মুখ্য নীতি’। সরল জীবন যাপনে যে নজির তিনি সৃষ্টি করে গেছেন, তাকে আজও কেউ অতিক্রম করতে পারেনি। পরনে থাকত অত্যন্ত কম দামি কাপড়, শরীরে থাকত তালিযুক্ত জামা। পারস্য যোদ্ধা হরমুজ বন্দিবেশে মদিনায় এসে মদিনার মসজিদে যেভাবে খলিফাকে দেখলেন, তাতে তাঁর যেন দিব্যজ্ঞান লাভ হয়েছিল। হরমুজ প্রকাশ করেছিলেন, ‘জগৎ তোমার নিকট হার মানবে, যেহেতু জগতের সকল আশা-আকাক্সক্ষা, কামনা-বাসনা তোমার নিকট হার মেনেছে।’
প্রজাবৎসল ওমর (রা.) সুখে ও দুঃখে রাত্রির অন্ধকারে ঘুরে বেড়াতেন প্রজাদের অবস্থা নিজ চোখে দেখার জন্য। একবার রাত্রিকালে নিজের গোলাম আসলামকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে মদিনার উপকণ্ঠে একটি তাঁবুর কাছে কয়েকটি শিশুর ক্রন্দন শুনতে পেয়ে তাঁবুর কাছে গেলেন এবং তাদের এখানে আসার কারণ জিজ্ঞাসা করলে জনৈক স্ত্রীলোক তাদের অভাবের কথা জানিয়ে খলিফার বিরুদ্ধে যখন অভিযোগ করলেন তখন ওমর (রা.) বললেন, খলিফা তোমদের অভাবের খবর কীভাবে জানবেন! স্ত্রীলোকটি তখন বলল, ‘এ কেমন কথা! তিনি আমাদের খলিফা অথচ আমাদের খবর জানেন না।’ তা শুনে শিশুদের কান্নার কারণ এবং পাশেই আগুনের উপর রাখা হাঁড়িতে কী রান্না হচ্ছে জিজ্ঞাসা করাতে স্ত্রীলোকটি জবাব দিল, ‘বাচ্চারা ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাঁদছে এবং তাদের সান্ত¡নার জন্য হাঁড়িতে পানি গরম করা হচ্ছে।’ এ কথা শোনামাত্রই খলিফা দ্রুতগতিতে মদিনায় ফিরে বায়তুলমাল থেকে কিছু আটা, চর্বি ইত্যাদি একটি বস্তায় ভরে নিজের কাঁধে বহন করে দ্রুত গতিতে তাঁবুর কাছে ছুটে এলেন। গোলাম আসলাম বস্তাটি বইতে চাইলে ওমর (রা.) বললেন, ‘আখেরাতে আমার হিসাব আমাকেই দিতে হবে। অতএব বস্তাটা আমিই বহন করি।’ তাঁবুর কাছে গিয়ে স্বহস্তে আগুন জ্বালিয়ে খাবার তৈরি করে শিশুদের খাওযালেন। অবশিষ্ট খাদ্য স্ত্রীলোকটির হাতে তুলে দিলেন। শিশুরা খাওয়া সেরে খুশিতে খেলতে লাগল। স্ত্রীলোকটি এই ব্যবহারে সন্তুষ্ট হয়ে বলল, ‘হজরত ওমরের পরিবর্তে তুমিই খলিফা হওয়ার অধিক উপযুক্ত, আল্লাহর দরবারে আমাদের ও খলিফার বিচার হবে’। হজরত ওমর (রা.) সান্ত¡না দিয়ে স্ত্রীলোকটিকে বললেন, ‘তুমি যখন খলিফার দরবারে যাবে তখন আমাকে সেখানে পাবে।’ এই বলে খানিক দূরে গিয়ে কিছুক্ষণের জন্য অবস্থান করে গোলাম আসলামকে বললেন, ‘আমি শিশুগুলোকে ক্ষুধার জ্বালায় কাঁদতে দেখেছি এখন একটু হাসতে দেখার জন্য কিছুক্ষণ বসলাম।’
আরেকবার রাতের বেলা চলতে চলতে রাজধানীর বাইরে একটি তাঁবুতে একটি লোক বিষণœ অবস্থায় বসা এবং ভিতরে একটি মেয়েলোকের কাতরানোর আওয়াজ শুনতে পেয়ে কারণ জিজ্ঞাসা করলে লোকটি ধমকের সুরে বলল, ‘যাও যাও, নিজের কাজে যাও। আমাকে জ্বালাতন করো না।’ হযরত ওমর (রা.) পীড়াপীড়ি করাতে লোকটি বলল, তার স্ত্রী প্রবল ব্যথায় কাতরাচ্ছে। ওমর (রা.) জিজ্ঞাসা করলেন ‘সাথে কোনো স্ত্রীলোক আছে কি?’ উত্তরে লোকটি বলল, ‘নেই।’ হজরত ওমর (রা.) দ্রুত নিজের ঘরে গিয়ে বিবিকে বললেন, ‘আজ পুণ্য অর্জনের এক বিরাট সুযোগ আল্লাহ দিয়েছেন। একটি অচেনা মেয়েলোক প্রসব বেদনায় কাতরাচ্ছে, প্রয়োজনীয় কাপড় চোপড় নিয়ে প্রস্তুত হও এবং আমি কিছু খাবার জিনিস নিচ্ছি।’ এই বলে উভয়ে খুব তাড়াতাড়ি সেই তাঁবুর কাছে পৌঁছে বিবিকে তাঁবুর ভিতরে পাঠিয়ে দিলেন এবং নিজে খাবার তৈরি করতে শুরু করে দিলেন। কিছুক্ষণ পরে তাঁবুর ভেতর থেকে আওয়াজ এলো, ‘আমিরুল মোমেনীন, আপনার বন্ধুকে পুত্র সন্তান হওয়ার সুখবর দিন।’ আমিরুল মোমেনীন শব্দ শুনতেই লোকটি ঘাবড়ে গেল। হজরত ওমর (রা.) তাঁকে সান্ত¡না দিলেন, প্রস্তুত খাবার প্রসূতিকে খাইয়ে বাকী খাবার তাদের হাতে দিয়ে বিবিকে নিয়ে চলে এলেন।
হযরত ওমর (রা.) খলিফার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রায়ই রাতের অন্ধকারে জনগণের খবরাখবর নিতে বেরোতেন। এক ঘরে রাতে বাতির আলো দেখে ভাবলেন, এত রাতে বিশেষ কারণ ছাড়া বাতি জ্বলার কথা নয়, কাজেই তিনি কারণ জানতে সেদিকে রওয়ানা হলেন। কুঁড়েঘরের পাশে দাঁড়াতেই এক মা এবং মেয়ের কথোপোকথন শুনতে পেলেন। মেয়ে বলছে, ‘মা আজ ছাগল দুধ কম দিয়েছে, কীভাবে গ্রাহকদের দুধ দেবো!’ জবাবে মা বলছে, ‘এতে চিন্তার কারণ নেই, কিছু পানি মেশালেই চলবে।’ মেয়ে বলল, ‘দুধে পানি মেশাতে আমিরুল মোমেনীনের নিষেধ আছে।’ মা বলল, ‘এত রাতে আমিরুল মোমেনীন কীভাবে জানবেন বা দেখবেন দুধে পানি মেশানো হয়েছে!’ সঙ্গে সঙ্গে মেয়ের স্পষ্ট জবাব, ‘আমিরুল মোমেনীন না দেখলেও আল্লাহ তো দেখছেন।’ এই কথোপোকথন শুনে হযরত ওমর (রা.) নিজ ঘরে ফিরে এলেন এবং পরদিন সকালে সেই ছাগল চরানেওয়ালি মেয়েটির কাছে নিজের ছেলের বিবাহের প্রস্তাব দিলেন এবং শুধু সততার জন্য সমগ্র ইসলাম জগতের খলিফা হয়েও সাধারণ ছাগল চরানেওয়ালি বেদুইন মেয়ের সঙ্গে নিজের ছেলের বিবাহ দিলেন।
একবার কোনো এক রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় শুনতে পেলেন, এক বুড়ো লোক ঘরে শরাব পান করছে। যেহেতু শরাব পান করা হারাম এবং বুড়ো লোকটি পাপ কার্যে জড়িত, খলিফা দিগ্বিদিক চিন্তা না-করে বেড়া টপকে দরজা ভেঙে বুড়ো লোকটির ঘরে ঢুকে তাকে শাসানির সুরে বললেন, ‘তুমি জানো না শরাব পান করা হারাম, এই বয়সে শরাব পান করে তুমি জঘন্য অপরাধে অপরাধী।’ বুড়ো লোকটি বলল, ‘হ্যাঁ, আমিরুল মোমেনীন, আমি একটি অপরাধে অপরাধী আর আপনি তিনটি অপরাধে অপরাধী- ১) আপনি অপরের বাড়িতে বেড়া টপকে ঢুকেছেন, ২) আপনি বিনা অনুমতিতে ঘরে ঢুকেছেন এবং ৩) গোপনীয় দোষ তালাশ করেছেন।’ বুড়ো লোকটির কথা শুনে হযরত ওমর (রা.) কাঁদতে কাঁদতে ঘর থেকে বের হলেন। অনেকদিন পর সেই বুড়ো লোকটি খলিফার দরবারে হাজির হলো। সভার লোকসকল চলে যাওয়ার পর খলিফা সেই বুড়ো লোকটিকে ডাকলেন এবং পাশে বসিয়ে তাকে কানে কানে বললেন, ‘আমি আপনার বদভ্যাসের কথা কাউকে বলিনি।’ এই কথা শুনে বুড়ো লোকটি তাঁর কানে কানে বলল, ‘আমিরুল মোমেনীন, আপনার কান আমার মুখের কাছে আনুন, শুনুন, আমি সেদিন থেকে শরাব পান ত্যাগ করেছি।’
হযরত ওমর (রা.)-এর চরিত্র সম্পর্কে অধ্যাপক মুইর বলেন, ‘সরলতা ও কর্তব্যনিষ্ঠা ছিল তাঁর মুখ্য নীতি।’ অধ্যাপক হিট্টি বলেন, ‘হযরত ওমরের জীবনচরিত রচনার জন্য অতি অল্প কথার প্রয়োজন, তাঁর জীবনের আদর্শ ছিল- সরলতা ও কর্তব্যজ্ঞান তাঁর শাসনের মূল নীতি ছিল- ন্যায় পরায়ণতা ও একাগ্রতা।’
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন