শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

মহাসড়ক স্থায়ীভাবে দখলমুক্ত করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৩ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

মহাসড়ক দখল এবং সেখানে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ নতুন কোনো ঘটনা নয়। বছরের পর বছর ধরে এ পরিস্থিতি চলে আসছে। যানবাহন চলাচলে মহাসড়ককে মসৃণ করার কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই বললেই চলে। শুধু দখল, অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ নয়, থ্রি হুইলার জাতীয় অবৈধ যানবাহনও মহাসড়কে অবাধে চলাচল করে। মহাসড়কের এই অব্যবস্থাপনার কারণে মাইলের পর মাইল দীর্ঘ যানজট ও জনদুর্ভোগ নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে অর্থনীতির লাইফ লাইন হিসেবে খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক যানজটে প্রায় প্রতিদিনই অচল হয়ে পড়ছে। যাত্রীদের দুর্ভোগের চিত্র পত্র-পত্রিকায়ও প্রকাশিত হচ্ছে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তেমন মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। এই উদাসীনতা মহাসড়কটিকে প্রায় অকার্যকর করে ফেলেছে। অন্যান্য মহাসড়কের অবস্থাও কমবেশি একই রকম। এমতাবস্থায়, মহাসড়ককে গতিশীল করতে গত শুক্রবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঘোষণা দিয়েছেন, এক সপ্তাহের মধ্যে মহাসড়কে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। এ ধরনের ঘোষণা শুনতে ভাল লাগে। তবে যখন দেখা যায়, ঘোষণার বাস্তবায়ন হয় না, তখন হতাশ হওয়া ছাড়া গতি থাকে না। কারণ এর আগেও এ ধরনের ঘোষণা বেশ কয়েকবার দেয়া হলেও তা কার্যকর হয়নি। এতে দিন দিন মহাসড়ক যেমন অবৈধভাবে দখল হয়েছে, তেমনি অবৈধ ধীর গতির যান চলাচলও বৃদ্ধি পেয়েছে।
সারাবিশ্বেই মহাসড়ক বলতে বোঝায়, যা থাকবে গতিশীল। দ্রুতগামী যানবাহন বিরতীহীনভাবে চলাচল করবে। এতে কোনো ধরনের বাধা-বিঘ্ন থাকবে না। আমাদের দেশে ঘটছে এর উল্টোটা। মহাসড়কে অবৈধ দখল, অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ, ধীর গতির যানবাহন চলাচল থেকে শুরু করে হাটবাজারও বসে। এক ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কথাই যদি ধরা হয় তবে দেখা যাবে, এতে প্রায় দুইশ’র মতো বাজার রয়েছে। অবৈধ দখল করে স্থাপনাও নির্মিত হয়েছে। অন্যান্য মহাসড়কের চিত্রও একই। এ অবস্থায় দ্রুত যাতায়াত কীভাবে নিশ্চিয় করা সম্ভব? কয়েক বছর আগে মহাসড়কে অবৈধ যান নসিমন, করিমন, ভটভটি, থ্রি হুইলার নিষিদ্ধ করা হয়। এর বিরুদ্ধে সে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়নি। এ সব যান অবাতীই চলাচল করছে। মহাসড়ক দখল করে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান কালেভদ্রে চললেও তাতে সুফল পাওয়া যায়নি। শুধু দেখা গেছে, উচ্ছেদ অভিযান ফটোসেশনে পরিণত হয়েছে। কিছু উচ্ছেদ করার পর পুনরায় তা দখল হয়ে গেছে। এ কার্যক্রমকে বিশ্লেষকরা অনেকটা ইঁদুর বেড়াল খেলা এবং লোক দেখানো বলে আখ্যায়িত করছেন। উচ্ছেদ করার পর যে উদ্ধারকৃত জায়গা সংরক্ষণ করা প্রয়োজন, তা আর করা হয় না। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের প্রায় সাড়ে ২১ হাজার কিলোমিটার মহাসড়কে কমবেশি অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। মহাসড়ক দখলের এক ধরনের মহোৎসব চলছে। নির্মাণ করা হয়েছে স্থায়ী ও অস্থায়ী স্থাপনা। এসব গড়ে তুলেছে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতারা। বলা বাহুল্য, প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের লোকজনই বেশি। ক্ষমতার জোরেই তারা মহাসড়ক দখল করে স্থাপনা নির্মাণ ও বাজার বসিয়ে থাকে। এ যদি হয় পরিস্থিতি, তবে বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে ? সড়ক ও সেতু মন্ত্রী যথার্থভাবেই উচ্ছেদের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলেও তা বাস্তবায়ন কেন হচ্ছে না, এ এক বিরাট প্রশ্ন হয়ে রয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের লোকজন বলেই কি তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না? বর্তমান সরকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল করতে যথেষ্ট কাজ করে যাচ্ছে। দুঃখের বিষয়, নিজ দলের লোকজনই যদি তা না বুঝে মহাসড়ক দখল করে যাতায়াত ব্যবস্থাকে অচল করে দেয়, তবে দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন কীভাবে হবে? মহাসড়ক শুধু অবৈধ দখলই নয়, এর ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটিও রয়েছে। এক টোল আদায় করা নিয়ে যানবাহনকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। ধীর গতির টোল আদায় যানজটকে আরও তীব্র করে তুলছে। আবার অনেক সময় মহাসড়কের মাঝে গাড়ি নষ্ট হয়ে যান চলাচল স্থবির করে দিচ্ছে। নষ্ট হওয়া গাড়ি দ্রুত সরিয়ে নেয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। মহাসড়কে পুলিশ যে দায়িত্ব পালন করে তাতেও গাফিলতি রয়েছে। অনেক সময় দেখা যায়, মহাসড়কের উপর গাড়ি থামিয়ে কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা কিংবা চাঁদা আদায় করতে দেখা যায় তাদের। এতেও যে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে, তা আমলে নেয়া হয় না। বলা যায়, পুরো সিস্টেমই ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
সড়ক ও সেতুমন্ত্রী এক সপ্তাহের মধ্যে মহাসড়কের অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেয়ার যে ঘোষণা দিয়েছেন তার বাস্তবায়ন আমরা দেখতে চাই। পূর্বের মতো এ ঘোষণা ঘোষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে বলে আমরা আশা করি না। মহাসড়ককে মহাসড়কের পরিপূর্ণ বৈশিষ্ট ফিরিয়ে দিতে হবে। অবৈধ দখলদাররা যত প্রভাবশালী হোক না কেন, তাদের দখল যেমন উচ্ছেদ করতে হবে, তেমনি আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নিতে হবে। তারা যদি নিজ দলের নেতা-কর্মীও হয়, তাদেরকেও কোনো ধরনের ছাড় দেয়া যাবে না। চলমান অর্থনৈতিক উন্নয়নকে আরও গতিশীল করতে এর বিকল্প নেই। অবৈধ দখল ও স্থাপনা, বাজার বসা বন্ধ করার পাশাপাশি অবৈধ যানবাহন চলাচলও স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকা থেকে যেসব ছোট ছোট সংযোগ সড়ক এসে মহাসড়কের সাথে যুক্ত হয়েছে, সেগুলোও বন্ধ করতে হবে। কেবল লোক দেখানো উচ্ছেদ ও নিষিদ্ধকরণ করলে চলবে না। দখলকৃত জায়গা উচ্ছেদ করে তা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে পুনরায় দখল হয়ে না যায়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
miraj ১৩ জানুয়ারি, ২০১৯, ১১:৫৭ এএম says : 0
chapabazi ta first
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন