শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহানগর

তামাক পণ্যে কর বৃদ্ধির কথা বিবেচনা করছে সরকার -অর্থ প্রতিমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ১০ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : সিগারেটসহ সকল প্রকার তামাকজাত পণ্যের উপর কর বৃদ্ধির পাশাপাশি তামাক উৎপাদন বন্ধের পক্ষে মত দিয়েছেন বক্তারা। ‘কেমন তামাক কর চাই’ শীর্ষক এক বৈঠকে বক্তারা এ মত প্রকাশ করেন। গতকাল সোমবার বিকেলে সিরডাপ মিলনায়তনে যৌথভাবে এ বৈঠকের আয়োজন করে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ, ইউনাইটেড ফোরাম এগেইনেস্ট টোব্যাকো (উফাত) এবং প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান)। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ন্যাশনাল প্রফেসর ব্রিগেডিয়ার (অব.) আব্দুল মালিক। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী, আব্দুল মতিন খসরু ও মো. নবী নেওয়াজ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্বস্বাস্থ্য ও জনস্বাস্থ্য) রোকসানা কাদের। অনুষ্ঠানে নির্ধারিত বিষয়ে প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলিকুজ্জামান আহমদ, ড. হোসেন জিল্লুর রহমান ও প্রফেসর ডা. অরূপ রতন চৌধুরী। এটিএন বাংলার প্রধান প্রতিবেদক এবং এন্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স (আত্মা)’র কো-কনভেনর নাদিরা কিরনের সঞ্চালনায় বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর ড. রুমানা হক, ও প্রজ্ঞার সমন্বয়ক হাসান শাহরিয়ার।
অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগামী বাজেটে সকল তামাকজাত পণ্যে কর বাড়ানোর কথা সরকার গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছে। আসন্ন বাজেটে তামাকের মূল্যস্তর থাকবে না। বহুজাতিক তামাক কোম্পানিতে সরকারের অংশীদারিত্ব প্রসঙ্গে অর্থপ্রতিমন্ত্রী বলেন, বিএটিএ-তে সরকারের শেয়ার রয়েছে। সরকার চাইলেও এ থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না। কিছুটা সময় লাগবে। তবে তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকারের সদিচ্ছারই বহিপ্রকাশ ঘটেছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ২০৪০ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার লক্ষ্য বাস্তবায়নে কাজ করছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, তামাক শিল্পে সরকারের অংশীদারিত্ব রয়েছে। বিএটিএ-তে সরকারের ১৩ শতাংশ শেয়ার। তামাক শিল্পের উচ্চ পর্যায়ে যারা রয়েছে তাদের মধ্যে সচিব, আমলা, সংসদ সদস্যরাও রয়েছেন। এক্ষেত্রে তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকারের নৈতিকতা নিয়েও প্রশ্ন আসে। এই মালিকানা থেকে সরে আসাটাই হবে সরকারের জন্য এসিড টেস্ট। বহুজাতিক তামাক কোম্পানিতে সরকারের অংশীদারিত্ব বাতিল করার এখনই উপযুক্ত সময়। তিনি অবিলম্বে তামাক কোম্পানির অংশীদারিত্ব পরিত্যাগের জন্য সরকারের প্রতি আহŸান জানান।
ড. কাজী খলিকুজ্জামান আহমদ সিগারেটের উপর বিদ্যমান স্তরভিত্তিক করকাঠামো বাতিল, তামাক চাষীদের অন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করার সুপারিশ করেন।
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, তামাকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে নতুন করে বৈজ্ঞানিক আলোচনার পর্ব আমরা পার করে এসেছি। তামাকের ক্ষতিকর দিক এখন বিশ্বজুড়ে সত্য। তামাক পণ্যের উপর কর বাড়ালে রাজস্ব কমে যাবে সরকারের এমন একটা ধারণা রয়েছে। সত্যটা হলো তামাক পণ্যে কর বাড়ানো হলে স্বল্প মেয়াদে সরকারের রাজস্ব কমার কোনো সম্ভাবনাই নেই। বৈঠকে ২০১৬-১৭ বাজেটকে সামনে রেখে তামাকপণ্যে করারোপ বিষয়ে নয়টি প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। এগুলো হলো- তামাক কোম্পানির কর ফাঁকির সুযোগ বন্ধ করতে সিগারেটের করারোপের জন্য ব্যবহৃত মূল্যস্তর প্রথা তুলে দেয়া; সব ধরনের সিগারেটের উপর একই হারে অর্থাৎ খুচরা মূল্যের ৭০ শতাংশ সমপরিমাণ সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ ট্যাক্স আরোপ; বিড়ির উপর খুচরা মূল্যের ৪০ শতাংশ সমপরিমাণ সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ ট্যাক্স আরোপ; জর্দা এবং গুলের উপর খুচরা মূল্যের ৭০ শতাংশ সুনির্দিষ্ট এক্স্াইজ ট্যাক্স আরোপ; আয় এবং সময়ের সাথে সঙ্গতি রেখে প্রকৃত মূল্য বৃদ্ধির জন্য তামাকপণ্যের মূল্য বাৎসরিক সমন্বয় করা; খাদ্য নিরাপত্তা সুসংহতকরণে তামাকের ওপর বিদ্যমান রপ্তানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশে উন্নীত করা; তামাকের চুল্লি প্রতি বাৎসরিক ৫ হাজার টাকা লাইসেন্সিং ফি আরোপ করা; তামাকের কর প্রশাসন শক্তিশালী করা, কর সংগ্রহ ব্যবস্থা উন্নত করা এবং কর ফাঁকি রোধকল্পে তামাকপণ্যের শুল্কমুক্ত বিক্রয় প্রথা তুলে দিয়ে করারোপ করা; তামাকপণ্যের উপর ২ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ আরোপ করা। এখান থেকে আদায়কৃত অতিরিক্ত রাজস্ব আয় তামাক নিয়ন্ত্রণ এবং অসংক্রামক রোগ মোকাবেলায় ব্যয় করা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন