বদ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ এবং বাংলাদেশে স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন বিষয়ক বিশেষ এই সম্মেলনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে মাইল ফলক হয়ে থাকবে। আমরা কারো ভয়ে ভীতু নই। আমরা কারো চাপিয়ে দেওয়া পরিকল্পনা মেনে নিতে পারি না। দেশের স্বার্থে, পরিবেশের স্বার্থে আমরা বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্যের ভিত্তিতে বদ্বীপ পরিকল্পনা চাই। দেশের স্বার্থে ও একটি কার্যকর পরিকল্পনার স্বার্থে আমাদের মতামত গ্রহণ করে এই পরিকল্পনাকে সমৃদ্ধি করতে হবে। গতকাল শনিবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বদ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ এবং বাংলাদেশে স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন বিষয়ক দই দিনব্যাপী বিশেষ সম্মেলনের সমাপনী দিনে পরিবেশ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা এ কথা বলেন।
বাংলাদেশের পরিবেশ বান্ধব বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, সংগঠন এবং সংস্থার সহায়তায় ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এবং বাংলাদেশ ইনভায়রনমেন্ট নেটওর্য়াক (বেন) আয়োজিত বিশেষ এই সম্মেলনের সমাপনী দিনে আটটি সাধারণ ও কারিগরি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।
সকালে দ্বিতীয় সম্মিলিত বিশেষজ্ঞ অধিবেশন নগরায়ন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নজরুল ইলামের সভাপতিত্বে বিজ্ঞান ভিত্তিক (টেকনিক্যাল) প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ খালেকুজামান, ড. দ্বীপেন ভট্টাচার্য। চতুর্থ সম্মিলিত সাধারণ অধিবেশনে এড. সুলতানা কামাল সভাপতিত্ব করেন। সম্মানিত অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নদী কমিশনের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার, অধ্যাপক আইনুন নিশাত। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, বাপার যুগ্ম সম্পাদক শরীফ জামিল, পানি বিশেষজ্ঞ ম. ইনামুল হক। সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদ উদ্দীন মাহমুদ বলেন, সরকারী মহলে বদ্বীপ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। এই সম্মেলনের মাধ্যমে সাধারণ জনগণরে মাঝে আলোচনার সুযোগ হল। মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, বদ্বীপ পরিকল্পনায় আরো বেশি মানুষের মতামত প্রদানের সুযোগ দিতে হবে। এছাড়াও প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সমন্বয় করে এই পরিকল্পনা প্রণয়ন করেতে হবে। অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, এই সম্মেলন বাংলাদেশের ইতিহাসে মাইল ফলক হয়ে থাকবে। আমরা কারো ভয়ে ভীতু নই। আমরা কারো চাপিয়ে দেওয়া পরিকল্পনা মেনে নিতে পারি না। দেশের স্বাথের্, পরিবেশের স্বার্থে আমরা বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্যের ভিত্তিতে বদ্বীপ পরিকল্পনা চাই। ম. ইনামুল হক বলেন, বদ্বীপ পরিকল্পনা বহুলাংশে বাস্তবতাহীন। আর তাই এই পরিকল্পনা বর্থ্য হওয়ার সম্ভবনা নিশ্চিত। অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান বলেন, আমরা দীর্ঘমেয়াদী বদ্বীপ পরিকল্পনার পক্ষে ও স্বাগত জানাই।
কিন্তু এর জন্য আরো বেশি তথ্য, উপাত্ত সংগ্রহ, বিশ্লেষণ করতে হবে। এদেশের মালিক জনগণ, তাই জনগণের মতামতের প্রাধান্য দিতে হবে। আমলাদের চাপিয়ে দেওয়া পরিকল্পনা জন দূর্ভোগ বাড়াবে।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পরিবেশ কর্মীরা বদ্বীপ পরিকল্পনার সকল তথ্য উম্মুক্ত করার দাবী জানান। অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগে এমন একটি পরিকল্পনার সকল জনসম্মুখে উম্মুক্ত না করে বাস্তবায়নের চেষ্টা করলে তা জনগণের জন্য দূর্ভোগ বয়ে আনবে।
দুই দিনব্যাপী সম্মেলনে সর্বমোট ৯২টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। অধিবেশনগুলোতে বিষয়বস্তু ছিল হাওর-বিল-পাহাড়, বরেন্দ্রভ‚মি, নগর দূষণ ও পর্যটন, উপকূল ও সুন্দরবন, জলবায়ু পরিবর্তন ও আন্তঃসম্পকীয় বিষয়, হাওর-নদী এবং আন্তঃদেশীয় নদ-নদী। সম্মেলন থেকে অনেকগুলো সুপারিশসহ খসড়া ঢাকা ঘোষণা পাঠক করেন বাপার সাধারণ সম্পাদক ডা. আব্দুল মতিন। অনুষ্ঠানে বাপার সহকর্মী উত্তম কুমার দেবনাথের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। এছাড়াও ভারতের নির্মল গঙ্গা আন্দোলনের অনশনরত পরিবেশকর্মীদের প্রতি সমর্থন প্রদান করা হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন