ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চালকদের দৌরাত্ম্য কমছে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা আরো বেড়েছে। প্রায়ই যাত্রীদের মারধর করতেও তারা ছাড়ছে না। তাদের হাতে প্রায়ই নাজেহাল হচ্ছেন সাধারণ পথচারী। অভিযোগ উঠেছে চুক্তি ভিত্তিক গাড়ি চালানোর কারণে আরো বেসামাল হয়ে উঠেছেন চালকরা।
গতকাল রোববার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার শহীদনগর এলাকায় একটি প্রাইভেটকারকে ওভারটেকিং করতে গিয়ে হিমাচল পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়স্ত্রন হারিয়ে সামনে থাকা একটি স্টার লাইন পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসকে পিছন থেকে ধাক্কা দেয়। উভয় গাড়িতে থাকা যাত্রীদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
দুর্ঘটনা কবলিত বাসের যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গতকাল সকাল ১১ টায় হিমাচল পরিবহনের একটি যাত্রীবাহীবাস ঢাকা থেকে নোয়াখালী উদ্দেশ্যে রওনা হয়। মহাসড়কের কুমিল্লার শহীদনগর নামক স্থানে একই দিক থেকে আসা একটি প্রাইভেটকার কে ওভারটেকিং করছিলেন হিমাচল পরিবহনের বাসটি। ঠিক তখন হেলপার চালককে উদ্দেশ্য করে উচ্চ স্বরে বলছিলেন ওস্তাদ আস্তে চলুন, বামে প্লাস্টিক (প্রাইভেটকার)! হিমাচল পরিবহনের চালক গাড়ির গতি না কমিয়ে উল্টো গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিয়ে প্রাইভেটকারটি ওভারটেকিং করতে গিয়ে হিমাচল পরিবহনের বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একই দিক থেকে আসা স্টার লাইন পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসকে পিছন দিক থেকে সাজারো ধাক্কা দেয়। উভয় গাড়ির ২৫ জন যাত্রী আহত হয়। স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে গৌরীপুরসহ আশ পাশের এলাকার হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। এদের মধ্যে ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদেরকে ঢাকার বিভিন্ন হাসপতালে পাঠানো হয়েছে।
হিমাচল পরিবহনের যাত্রী আহত নজরুল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দি ব্রিজ থেকে নেমে টোল প্লাজায় টোল দিয়ে ফাঁকা রাস্তা পেয়ে হিমাচল পরিবহনের চালক গাড়ির গতি ১০০-১১০ রেখে গাড়িটি টান দেন ওই সময় যাত্রীরা হৈ চৈ শুরু করতে থাকেন তখন কয়েক জন যাত্রী চালকে আস্তে চালাতে বললেও এতে কোন পাত্তাই দেননি চালক।
নজরুল আরো বলেন, হিমাচলসহ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এমন ৮-১০ টি পরিবহনের যাত্রীবাহীবাস রয়েছে ওই সব গাড়ির চালকরা বেপরোয়া গাড়ি চালায়। ওরা ছোট গাড়িকে (প্রাইভেটকার) প্লাস্টিক বলে ডাকে। পুরো সড়ক তারা দখলে নিয়ে গাড়ি চালায় সড়কে যার কারণে এধরনের কাজ্ঞহীন আচরণের ফলে প্রতিনিয়তই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ঘটছে মারাত্মক দুর্ঘটনা। হাইওয়ে পুলিশের দাউদকান্দি থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, দুর্ঘটনায় আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়।
দুর্ঘটনা কবলিত যাত্রী ইমরান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় চালকেরা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে ছিলেন। এরপর সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে আইন হয়েছে। কিন্তু এই আইন হওয়ার পরে চালকেরা যেন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
স্কুলশিক্ষক তৈমুর খন্দকার দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচলরত প্রায় চালক ফাঁকা রাস্তা পেলেই গতির ঝড় তোলেন। অথচ বাংলাদেশের সড়কের যে সক্ষমতা তাতে ৬০-৭০ কিলোমিটারের বেশি গতি তোলার সুযোগই নেই। কিন্তু চালকেরা ১০০-১১০ পর্যন্ত গতিতে যাত্রীবাহী বাস চালাচ্ছেন। অতিরিক্ত গতির জন্য দোষী ব্যক্তি শাস্তিও পাচ্ছেন না। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে।
গতকাল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার ক্যন্টারমেনট এলাকায় দেখা যায় গাড়িগুলোর গতি খুবই বেপরোয়া। বিশেষ করে কিছু কিছু কোম্পানির বাস রয়েছে যারা কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করে না। এমনকি ট্রাফিক পুলিশের নির্দেশও অমান্য করতে দেখা যায়।
ভুক্তভোগী একাধিক যাত্রী বলেন, এখন পরিবহন শ্রমিকেরা এতটাই বেপরোয়া যে যাত্রীদের গায়ে হাত তুলতেও তারা তোয়াক্কা করে না। দু’দিন আগে চান্দিনায় স্কুলশিক্ষকে তার স্ত্রী সন্তানের সামনে নাজেহাল করে বাসের চালক ও হেলপার । ওই শিক্ষক ও তার স্ত্রী সন্তানদের মহাসড়কের রায়পুর স্কুলের সামনে নামানোর কথা ছিল। কিন্তু তাদের না নামিয়ে চালক বাসটি চালিয়ে ইলিয়টগঞ্জ চলে যায়। এ সময় ওই স্কুল শিক্ষক প্রতিবাদ করলে বাস শ্রমিকেরা তাকে নাজেহাল করে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন