মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সবজি

সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা নেই হিমাগার নির্মাণে

মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল, কুমিল্লা থেকে : | প্রকাশের সময় : ১৬ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

কুমিল্লায় উৎপাদিত শাক-সবজি ও ফলমূলের ৩০ ভাগ নষ্ট হচ্ছে সংরক্ষণের অভাবে ও সঠিক সময়ে বিক্রয় করতে না পারায়। উৎপাদন-সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণে অব্যবস্থাপনার কারণে শাক সবজি ও ফল মূলের বিরাট একটা অংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

নিমসার কাঁচাবাজার এলাকার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে বছরজুড়েই পড়ে থাকে বিভিন্ন ধরনের পচা-আধাপচা সবজি। সংরক্ষণের অভাবে প্রতি বছর কুমিল্লায় উৎপাদিত শীতকালীন সবজির প্রায় ৩০ ভাগ নষ্ট হচ্ছে। এতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। খাদ্য ব্যবস্থাপনার দুরবস্থার কারণে দেশে প্রতি বছর কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যায় পর্যন্ত বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য নষ্ট হচ্ছে।

শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের এক গবেষণায় দেখা গেছে, উৎপাদন-সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণে অব্যবস্থাপনার কারণে উৎপাদিত শাক-সবজি ও ফলমূলের প্রায় ৩০ ভাগ নষ্ট হয়ে যায়। দেশের পুষ্টি পরিস্থিতিতে যেমন এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে, তেমনি খাদ্য মূল্য বৃদ্ধিতেও তা ভূমিকা রাখছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামান্য কিছু কৌশল ও প্রযুক্তি ব্যবহার করলেই এ অপচয় অন্তত ১০ ভাগে কমিয়ে আনা সম্ভব। এজন্য কৃষক-খামারি থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যায়ে খাদ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থা উন্নত করার বিকল্প নেই। কুমিল্লার বিভিন্ন বাজার ঘুরে সবজি-ফল নষ্ট হওয়ার একই রকম দৃশ্য দেখা গেছে। ট্রাকভর্তি সবজির অন্তত পাঁচ ভাগই থেতলে যাওয়া বা আধা পচা। নিমসার বাজারে আসা ব্যবসায়ী ও কৃষকদের অভিযোগ, সবজিতে সামান্য আঘাতের চিহ্ন থাকলেও দাম কমাতে তৎপর হয়ে উঠেন আড়তদাররা। তাই থেতলে যাওয়া অনেক সবজি তাদের ফেলে দিতে হয়। গতকাল মঙ্গলবার নিমসার বাজারে বিপুল পরিমাণ ফুলকপি এনেছিলেন কৃষক আবিদ আলী। তিনি জানান, মিনি ট্রাকে করে সবজি আনার পথে নিচে থাকা প্রায় ২০ কেজি ফুলকপি নষ্ট হয়ে গেছে। কুমিল্লার নিমসার বা চান্দিনায় একটি সবজি সংরক্ষণাগার-হিমাগার তৈরি করা হলে উৎপাদিত শস্য ক্ষতির পরিমাণ অন্তত তিন গুণ কমে যাবে বলে স্থানীয়রা জানান।

সবজি সংরক্ষণ ব্যবস্থা থাকলে একদিকে কৃষকরা যেমন বড় অঙ্কের টাকার ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেতেন, তেমনি সংরক্ষিত সবজি দিযে মৌসুমের সঙ্কট মোকাবেলা করা সম্ভব হতো। কৃষি বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শীত ও গ্রীষ্ম দুই মৌসুমে কুমিল্লার চান্দিনায় প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়। এর মধ্যে চাহিদার তুলনায় গ্রীষ্মকালীন সবজির উৎপাদন কম হয়। এছাড়া গ্রীষ্ম মৌসুমের কিছু সবজি যেমন-চাল কুমড়া, ওলকপি, মিষ্টি কুমড়া প্রভৃতি ক্ষেত থেকে সংগ্রহের সময় পেরিয়ে গেলেও কিংবা তুলে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেলে রাখলেও নষ্ট হয় না। কিন্তু চাহিদার তুলনায় শীতকালীন সবজির উৎপাদন হয় বেশি। জেলার চাহিদা পূরণ ও বাইরে প্রচুর পরিমাণে সরবরাহ করার পরও উদ্বৃত্ত থেকে যায়।

অন্যদিকে শীতকালীন সবজি প্রথমদিকে আকাশছোঁয়া দাম থাকলেও প্রাচুর্যের কারণে মৌসুমের শেষদিকে দাম পড়তে পড়তে এমন এক পর্যায়ে নেমে আসে যে, ক্ষেত থেকে তা সংগ্রহ করে বাজারজাত করার মজুরি খরচও ওঠে না। ফলে ক্ষেতেই তা নষ্ট এবং অনেক সবজি পরিণত হয় গোখাদ্যে। চাষিরা জানান, শীত মৌসুমে সবজি ওঠার শুরুতে কেজি প্রতি টমেটোর দাম থাকে ৮০-১০০ টাকা, শিম ৫০-৬০, ফুলকপি ৪০-৫০, বাঁধাকপি ৪০-৫০, গাছ পেঁয়াজ ৩০-৩৫, মুলা ২০-২৫ টাকা; কিন্তু মৌসুমের শেষ দিকে ৫-১০ টাকাও থাকে না। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ধানসহ অন্য ফসলের তুলনায় সবজি চাষে তিনগুণ লাভ হয়। গত শীত মৌসুমে কুমিল্লায় সবজি উৎপাদিত হয়েছে ৫০ হাজার ২৯০ মেট্টিক টন। কিন্তু সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, এবং বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করার মতো পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় নিমসারে সবজি হিমাগার গড়ে ওঠেনি। ফলে কৃষি থেকে যে উদ্বৃত্ত তৈরি হচ্ছে সে সঞ্চিত পুঁজিতে নির্মিত হচ্ছে কুমিল্লায় শপিং কমপ্লেক্স। অথচ কুমিল্লায় অত্যাধিক সবজি উৎপাদনের ফলে বিশাল সবজির আড়ত তৈরি হয়েছে নিমসার বাজার। কৃষকরা প্রতিদিন ভোর থেতে তাদের জমিতে উৎপাদিত বিভিন্ন কাঁচা সবজি বিক্রির জন্য নিয়ে আসে নিমসার বাজারে। কিন্তু এসব পচনশীল সবজি সংরক্ষণ ব্যবস্থার অভাবে কৃষকরা তাদের সবজি পানির দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত শস্য সংরক্ষণের অভাবে পচনের হাত থেকে রক্ষা করতে না পারায় প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার কৃষি সম্পদ নষ্ট হওয়ায় দেশের অর্থনীতির চরম ক্ষতি হচ্ছে।

কুমিল্লার সম্ভবনা ও সঙ্কট নিয়ে কথা হয় ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, ব্যাংকারদের সঙ্গে। সবাই আশার কথা বলেন। কিন্তু কিভাবে কাজ হবে সে রাস্তা কারও জানা নেই। ব্যংকাররা বলেন, সঠিক উদ্যোক্তা পাই না বলে আমরা বড় প্রাল্পে ঋণ দেই না।
অন্যদিকে উদ্যোক্তারা বলেন, ব্যাংক ও সরকারের কাছ থেকে সহযোগিতা না পেলে হিমাগার করবো কিভাবে। এলাকায় সবজি হিমাগার তৈরি করা হলে প্রতি বছর এ এলাকা থেকে কোটি কোটি টাকার সবজি সংরক্ষণ করা সম্ভব হতো। কৃষি বিভাগ জানায়, অতিরিক্ত সবজি সংরক্ষণে বারবার বিশেষ হিমাগার নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে সরকার এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। বেসরকারি উদ্যোক্তাও এ ব্যাপারে এগিয়ে আসেনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন