ফারুক হোসাইন : বেসরকারি দুই মোবাইল ফোন অপারেটরের (রবি আজিয়াটা-এয়ারটেল) ব্যবসা একীভূত (মার্জার) করার জন্য প্রায় ৭০০ কোটি টাকা ফি নির্ধারণ করার সুপারিশ করেছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি)। এর মধ্যে তরঙ্গ একীভূত ফি হিসেবে ৫০০ কোটি এবং মার্জার ফি হিসেবে ২০০ কোটি টাকা আদায়ের সুপারিশ করা হয়। সম্প্রতি বিটিআরসিতে অনুষ্ঠিত এক সভায় এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। পরে ওই সিদ্ধান্ত একটি প্রতিবেদন আকারে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। এর আগে গত সপ্তাহে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে বিটিআরসি’র কাছে জানতে চাওয়া হয়, রবি এবং এয়ারটেলের প্রস্তাবিত মার্জারে তরঙ্গের মূল্য কিভাবে নির্ধারণ করা হবে এবং কি পরিমাণ হবে। মন্ত্রণালয়ের ওই চিঠির ভিত্তিতেই বিটিআরসি প্রায় ৭০০ কোটি টাকা আদায়ের সুপারিশ করে।
বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, মার্জারের ফি নির্ধারণের বিষয়ে বিটিআরসি’ কে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় দুটি চিঠি দিয়েছে। প্রথম চিঠিতে বিটিআরসি’র কাছে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তরঙ্গ একীভূত করার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, তরঙ্গ সীমিত এবং জাতীয় সম্পদ। সরকার যদি চায় এয়ারটেলের তরঙ্গ একীভূত করার ক্ষেত্রে বাড়তি ফি আদায় করতে পারে। পরবর্তীতে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মার্জারের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়। ওই প্রস্তাবে বলা হয়, সরকার চাইলে এয়ারটেলের তরঙ্গ রবির সাথে একীভূত করার ক্ষেত্রে বাড়তি ফি আদায় করতে পারে। বিটিআরসি’র এক কর্মকর্তা জানান, ২০০৫ সালে এয়ারটেল (সে সময় ওয়ারিদ টেলিকম) খুব কম মূল্যে তরঙ্গ বরাদ্দ পেয়েছিল। এখন একই মূল্যে তা রবির সাথে একীভূত করলে মার্কেট ভারসাম্য হারাবে। মার্কেটে সাম্যবস্থা বজায় রাখার জন্য কমিশন বাড়তি ফি আদায়ের জন্য সুপারিশ করেছে।
বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, ২০০৫ সালে ওয়ারিদ টেলিকম (পরবর্তীতে এয়ারটেল) ১৮০০ মেগাহার্টজ অর্থাৎ টুজি ব্যান্ডে ১৫ মেগাহার্টজ তরঙ্গ কিনতে ব্যয় করেছিল ৩৪০ কোটি টাকা। ১৫ বছরের জন্য বরাদ্দ পাওয়া এ তরঙ্গের জন্য প্রতি মেগাহার্টজে ওয়ারিদের খরচ হয় ১ কোটি ৫১ লাখ টাকা। অন্যদিকে ২০১১ সালে রবি আজিয়াটা টুজি তরঙ্গের লাইসেন্স নবায়নের সময় প্রতি মেগাহার্টজ তরঙ্গের জন্য ব্যয় করেছিল ১০ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতি মেগাহার্টজ টুজি তরঙ্গের জন্য রবিকে বেশি দিতে হয় ৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। ২০০৫ সালে ওয়ারিদের কেনা ১৫ বছরের জন্য ওই স্পেকট্রামের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ২০২০ সালের ডিসেম্বরে। যেহেতু রবি একই তরঙ্গ ২০১১ সালে ১০ কোটি টাকা মূল্যে কিনেছিল, সে কারণে এয়ারটেলের কাছে থাকা টুজির তরঙ্গ একীভূত করতে হলে ১০ কোটি টাকা মূল্যেই কিনতে হবে। সে হিসেবে রবি আজিয়াটাকে প্রতি মেগাহার্টজে এই অপারেটরকে আরও ৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকা করে ১৫ মেগাহার্টজ তরঙ্গের জন্য একীভূত কোম্পানিকে দিতে হবে ৫৭৩ কোটি টাকা।
এদিকে রবি ও এয়ারটেলের একীভূতকরণের বিষয়ে চূড়ান্ত মূল্যায়ন প্রতিবেদন জমা দিতে আগামী ১৫ মে পর্যন্ত সময় বেধে দিয়েছেন আদালত। এর আগেই এই প্রস্তাব ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় হয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেতে হবে। বাংলাদেশে ব্যবসায়িক কার্যক্রম একীভূত করার জন্য গত বছরের সেপ্টেম্বরে বিটিআরসির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করে রবি-এয়ারটেল। অপারেটর দুটির ঘোষণা অনুযায়ি ব্যবসা একীভূত হওয়ার পর মালয়েশিয়ার আজিয়াটা এবং জাপানের এনটিটি ডকোমো মিলে ৭৫ শতাংশের মালিক হবে। বাকী ২৫ শতাংশের মালিকানা থাকবে এয়ারটেলের হাতে। রবি ও এয়ারটেলের তরঙ্গ একীভূত হলে তাদের সমন্বিত তরঙ্গ দাঁড়াবে ৩৯ দশমিক ৮ মেগাহার্জে। অন্যদিতে অপর বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের কাছে রয়েছে ৩২ মেগাহার্জ এবং বাংলালিংকের ২০ মেগাহার্জ তরঙ্গ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন