শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ

সাধারণ ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক

সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : | প্রকাশের সময় : ২০ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান ভাঙচুর করেছেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের মার্কেট। কমবেশি অর্ধশত আধা পাকা ও পাকা দোকানঘর ভাঙচুর করে লুট করে নিয়েছেন নগদ টাকাসহ কমবেশি ২ কোটি টাকার মালামাল। দখল করে নিয়েছেন অর্ধশত দোকান ভিটার কয়েক বিঘা জমি। ঘটনাটি ঘটেছে, মনোহরদী উপজেলার ৬২ বছরের পুরনো খিদিরপুর বাজারে।

হাসপাতালের বিছানা থেকে অভিযোগ করেছেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন এবং মার্কেটের ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদ, হক ডাক্তার, তমিজউদ্দিন বেপারী ,সাইদুর রহমান ,ফজলুল হক ১০/১২ জন ব্যবসায়ী। আর অভিযুক্ত হচ্ছেন মনোহরদী উপজেলার খিদিরপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান জামিল ও তার নেতৃত্বাধীন একই সন্ত্রাসী বাহিনী। গত ১ জানুয়ারি থেকে চেয়ারম্যানের সন্ত্রাসী বাহিনীর নেতৃত্বে ২০ জন লেবার এই তাণ্ডব চালাচ্ছে। পুলিশ বাধা দেয়ার পরও রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রভাবে চেয়ারম্যান জামিল ও তার পোষ্যরা পুলিশের বাধাও মানছে না। চেয়ারম্যান ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর তাণ্ডবে বাজারে শতশত ব্যবসায়ীর মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। কোটি কোটি টাকার ব্যবসা নিয়ে নিরীহ ব্যবসায়ীরা সার্বক্ষণিক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা জাকির হোসেন বর্তমানে অসুস্থ অবস্থায় উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সেখান থেকে তিনি মোবাইল ফোনে জানিয়েছেন, মনোহরদীর খিদিরপুর বাজারটি ১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই বাজারটি এলাকার লাখ লাখ মানুষের পণ্য-দ্রব্য বেচাকেনার বাজার। বাজারটিতে ৫শ’ স্থায়ী ব্যবসায়ীসহ কয়েক হাজার ব্যবসায়ী ব্যবসা-বাণিজ্য করে জীবিকা নির্বাহ করে। জাকির হোসেন তার কেনা এবং পৈত্রিকভূমিতে সাড়ে ৩শ’ পাকা, আধা পাকা দোকানঘর নির্মাণ করে ব্যবসায়ীদের নিকট ভাড়া দিয়ে রেখেছেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ হবার পর ১ জানুয়ারি খিদিরপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান জামিল এলাকার ২০/২৫ জন চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ভাঙচুরের শ্রমিক নিয়ে মার্কেটে হামলা চালায়। হামলাকারীরা দোকান মালিকদেরকে তাড়িয়ে দিয়ে দোকানের ক্যাশে থাকা টাকা ও মালামাল লুট করতে থাকে। লোহার শাবল, হাতুড়ি, দা, কোদালসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি দিয়ে তারা অর্ধশত দোকানঘর ভাঙচুর করে। চেয়ারম্যান ও তার লোকজনের এই ভাঙচুর তাণ্ডবের ভয়ে অনেক ব্যবসায়ী বাজার থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়। এই অবস্থায় চেয়ারম্যান জামিলতা ও তার সন্ত্রাসীরা হিমানী বাজারে ঘোষণা দেয় যে, যেসব ব্যবসায়ী তাদেরকে মাথাপিছু ১৫ লাখ টাকা করে দেবে তাদেরকে দোকান বরাদ্দ দেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে স্থানীয় সাংবাদিকরা মনোহরদী থানার ওসির সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, খিদিরপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান জামিল জোরপূর্বক খিদিরপুর বাজারের দোকান ভাঙচুর করার বিষয়টি জানার পর তাকে ফোন দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। পরবর্তীতে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে চেয়ারম্যানকে না পেয়ে ভাঙচুরের কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়ে চলে আসে। শুনেছি বাধা দেয়ার পরও চেয়ারম্যানের লোকজন পুনরায় ভাঙচুর অব্যাহত রেখেছে। এ বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ভাঙচুর সম্পর্কে জানার জন্য ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান জামিলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, এগুলো হিন্দু বাবুদের জায়গা। তিনি হাজার ১৯৮৩ সাল থেকে জোরপূর্বক এসব জায়গা দখল করে রেখেছেন। তাদের নিকট ভূয়া দলিলপত্র ছাড়া বৈধ কোন কাগজ নেই। দলিলপত্র ছাড়া কেউ জমি দখলে রাখতে পারে না।

তবে তিনি সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা জাকির হোসেন ও তার ছেলেদের সাথে বসে এ ব্যাপারে কথার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি আরো জানান জাকির হোসেন ও তার ছেলেরা যদি বাবুদের জায়গা কিনে রাখতে চায় তবে, বাবুরা বিক্রি করে দেবে।
মার্কেট তথা জমির মালিকানা প্রসঙ্গে মো. জাকির হোসেনের ছেলে ঢাকা জেলা তথ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূর হোসেন জানান, তার পিতা জাকির হোসেন ১৯৮৬ সালে বৈধ মালিকদের নিকট থেকে সাব কবলা দলিল মূলে এসব জমি ক্রয় করেছেন।
এসব জমির দলিল তাদের কাছেও রয়েছে এবং সরকারের রেজিস্ট্রি বিভাগেও রয়েছে। তারা প্রতিবছর এই জমির খাজনা ও জমাভাগ পরিশোধ করে আসছেন। এ ব্যাপারে তিনি স্থানীয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন