মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

বিজয় সমাবেশে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য

| প্রকাশের সময় : ২১ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করেছে। এ বিজয় আপামর জনতার বিজয়। এই সরকার জনগণের সরকার। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরংকুশ বিজয় অর্জনের পর গত শনিবার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের বিজয় সমাবেশে বক্তৃতাকালে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী দেশের দলমত নির্বিশেষে সকল নাগরিকের সেবা করার অঙ্গীকার করে আরো বলেছেন, দেশের প্রতিটি নাগরিক আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাদের সবার সেবা করবে সরকার। যারা ভোট দিয়েছেন অথবা দেন নাই তাদের সবার জন্যই কাজ করবে সরকার। জনগণের দেয়া ভোটের মর্যাদা রক্ষার প্রত্যায় জানিয়ে তিনি বলেছেন, যে আস্থা ও বিশ্বাস নিয়ে জনগণ আমাকে ভোট দিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছে, জনগণের সে মর্যাদা আমি রক্ষা করবো। প্রয়োজনে আমার জীবন দিয়ে হলেও ভোটের মর্যাদা রক্ষা করবো। আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তুলবো। জনগণ ভোট দিয়েছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সরকার, জনপ্রতিনিধি, দলীয় নেতাকর্মী সবাই মিলে সেগুলো নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতি ও জঙ্গীবাদ দূর করতে হবে। মাদক আর সন্ত্রাস নির্মূল করতে হবে। নির্বাচনে বিজয় ও সরকার গঠনের পর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই বক্তৃতার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, আমরা এই দেশকে উন্নত রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তুলবো। এটাই আমাদের অঙ্গীকার। আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করবো। এ ব্যাপারে তিনি সব শ্রেণী- পেশার মানুষের সহযোগিতা চেয়েছেন।
নির্বাচনে বিপুল বিজয় ও সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী অনেক কথাই বলেছেন। কিন্তু বিজয় সমাবেশের মত একটি গণসমাবেশে তিনি কী বলেন, সেটা জানার জন্য মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ ও ঔৎসুক্য ছিল। আশা করা যায়, প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তৃতায় সে আগ্রহ ও ঔৎসুক্যের অবসান ঘটেছে। তিনি তার সরকারকে জনগণের সরকার অভিহিত করে দলমত নির্বিশেষে সবার সেবা করার যে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন, সেটাই তো প্রত্যাশিত ও স্বাভাবিক। এর আগেও তিনি বলেছেন, তিনি সকলের প্রধানমন্ত্রী, তার সরকার সকলের সরকার। বলা বাহুল্য, নির্বাচনে কোনো দল যখন বিজয়ী হয় ও সরকার গঠন করে তখন ওই সরকার আর দলীয় সরকার থাকে না; হয়ে যায় দেশের সরকার, সকলের সরকার। তখন সরকারের একটি বিশেষ দায়িত্ব হয়ে পড়ে যারা তার রাজনৈতিক বিরোধী তাদের আস্থা অর্জন করা। বর্তমান সরকারকেও সেটা করতে হবে। এজন্য বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন, হামলা-মামলা বন্ধ করতে হবে। তাদের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সকল অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। অহিংস ও ন্যায়সঙ্গত কর্মসূচী পালন অবারিত করে দিতে হবে। একথা অস্বীকার করা যাবে না, দেশে কোনো রাজনৈতিক বিরোধ বা সংকট নেই। রাজনৈতিক কারণে বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মীদের ওপর জুলুম-নির্যাতন নেই। বরং স্বীকার করতে হবে, এটা আমাদের ‘রাজনৈতিক সংস্কৃতি’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। না আসলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও শান্তি নিশ্চিত হবে না। প্রধানমন্ত্রী উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গড়তে চান। তাতে সফল হতে হলে শান্তি ও স্থিতিশীলতার কোনো বিকল্প নেই। তাই সরকারকে রাজনৈতিক বিরোধ-সংকটের যতদ্রæত সম্ভব অবসান ঘটাতে সচেষ্ট হতে হবে। দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অশান্ত পরিস্থিতি বহাল রেখে সরকারের পক্ষে উন্নয়নের রোড ম্যাপ ও অর্থনৈতিক বিকাশের কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। অর্থনৈতিক উন্নতি ও জনগণের জীবনমানের ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটাতে হলে বিনিয়োগকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। গত ১০ বছরে বিনিয়োগ তেমন হয়নি। যতটুকু হয়েছে তার বেশির ভাগই বেসরকারী। বিনিয়োগ সব সময়ই নিরাপত্তা ও লাভ চায়। অনুকূল পরিবেশেই বিনিয়োগ উৎসাহিত ও বর্ধিত হয়। দেশে কাঙ্খিত শান্তি ও স্থিতিশীলতা যদি প্রতিষ্ঠা করা যায় তবে বেসরকারী বিনিয়োগ যেমন বাড়বে তেমনি বৈদেশিক বিনিয়োগও আসবে।
উন্নয়ন ও অগ্রগতির অপরিহার্য পূর্বশর্ত যেমন শান্তি ও স্থিতিশীলতা তেমনি সুশাসন, আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তাও। এই তিন ক্ষেত্রে দু:খজনকভাবে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। এগুলো যথাযথ অবস্থায় থাকলে দুর্নীতি, দুষ্কৃতি, অর্থপাচার, লুটপাট এবং সন্ত্রাসী ও মাদক স¤্রাটদের দৌরাত্ম্য কখনোই এতটা বাড়তে পারতো না। সংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসহ সরকারী-বেসরকারী সকল প্রতিষ্ঠানে সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরী। এই সঙ্গে আইনের প্রয়োগ সকলের ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য করাসহ বিচারহীনতার সংস্কৃতির অবসানও আবশ্যক। দেশে নাগরিক নিরাপত্তা ও মানবাধিকার পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক। খুন, ধর্ষণ, বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড সমানেই চলছে। পুলিশ পেশাগত দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে অন্য কাজে ব্যস্ত। দেশ কার্যত একটা পুলিশী রাষ্ট্রের পর্যায়ে উপনীত হয়েছে বলে অনেকের অভিমত। পুলিশী রাষ্ট্রের এই ধারণা থেকে দেশকে বের করে আনতে হবে। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রীর যত সদিচ্ছাই থাক, তার একার পক্ষে এই সব কিছু করা সম্ভবপর নয়। এজন্য তার সহকর্মী মন্ত্রী, দলীয় নেতৃবৃন্দ এবং বিরোধী দল ও মহলের আন্তরিক সহযোগিতা অপরিহার্য। নতুন মন্ত্রীসভা নিয়ে দ্বিমুখী অভিমত থাকলেও ইতিবাচক অভিমতই বেশী। রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা মন্ত্রীদের যাই থাক, মন্ত্রী হিসাবে তাদের অনেকেই নতুন। প্রধানমন্ত্রী তাদের মনোনিত করেছেন সেবা পাওয়ার আশায়। তারা উচ্চ দায়িত্বশীলতার সঙ্গে স্ব স্ব কর্তব্য পালন বা সেবা নিশ্চিত করবেন বলে দেশের মানুষ আশা করে। সকলের সহযোগিতায় দেশকে এগিয়ে নেয়ার যে কথা প্রধানমন্ত্রী ব্যক্ত করেছেন, সেটা হাজার কথার এক কথা। আসলে সকলের সহযোগিতায়ই একটি দেশে এগিয়ে যেতে পারে, সফল হতে পারে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন