প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সেরা উক্তি হচ্ছে, প্রয়োজন তো মেটাচ্ছি, তাহলে দুর্নীতি কেন হবে? এ উক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তিনি বলেছেন, সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ যেসব সুবিধা প্রয়োজন, তা সরকার মেটাচ্ছে। তাহলে কেন দুর্নীতি হবে। সরকারি কর্মচারীদের মন মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে এবং মাঠপর্যায়ের কর্মচারীদের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিতে হবে। গত ১৭ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার সকালে সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রতি নির্দেশনা প্রদান করেন। একটি ক্ষুধা এবং দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলায় সুশাসন এবং দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একেবারে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট একটি নির্দেশনা দিতে হবে- কেউ দুর্নীতি করলে সঙ্গে সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ যে হারে বেতন আমরা বাড়িয়েছি, এ উদাহরণ মনে হয় পৃথিবীর কোনো দেশেই নেই।’ সন্ত্রাস, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধেও অভিযান অব্যাহত থাকবে। সন্ত্রাস, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর সরকার জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের সততা-আন্তরিকতাই পারে সুন্দর একটি দেশ গড়তে।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘সরকারের অগ্রাধিকার হচ্ছে সড়কে ও পরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। সেজন্য সড়ক ও জনপথ অধিদফতরকে নির্দেশ দিয়েছি, সাত দিনের নোটিশে মহাসড়কের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও দখলমুক্ত করতে হবে। এখনই এই কাজটি আমাদের করতে হবে। পরে নানা রাজনৈতিক চাপ আসে, চাপের মুখে কাজ করা যায় না।’ গত ১১ জানুয়ারি শুক্রবার দুপুরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের চন্দ্রায় চার লেন প্রশস্তকরণের কাজ ও ফ্লাইওভার নির্মাণকাজের অগ্রগতি পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন। এ ঘোষণার পরই সোমবার ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ডেমরার কাজলা এলাকা থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে নারায়ণগঞ্জ সওজ কর্তৃপক্ষ। অভিযানকালে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা কাঁচাবাজার ভেকু দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি গত ৮ জানুয়ারি মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ২১ অঙ্গীকারের মধ্যে শিক্ষার মান উন্নত করা অন্যতম। তা অর্জনে আমরা কাজ করবো। এ ক্ষেত্রে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করা বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু তা মোকাবেলা করার জন্য আমরা প্রস্তুত।’
গত সরকারের সময় জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসিসহ সব পরীক্ষা কেমন হয়েছে- তা সংশ্লিষ্ট সকলের জানা রয়েছে। হয়রানি হওয়ার আশঙ্কায় কেউ সাহস করে কিছুই বলতে রাজি নয়। অতি উৎসাহী শিক্ষকদের কারণে শিক্ষার নৈতিক মান নিয়ে বার বার প্রশ্ন উঠছে। বাস্তবতা হচ্ছে, ওই শিক্ষকদের কারণে ছাত্র-ছাত্রীরা পড়ালেখায় অমনযোগী হয়ে পড়েছে।
বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলেছেন, বাংলাদেশি হজ যাত্রীদের বিমান ভাড়া গতবারের তুলনায় ১০ হাজার ১৯১ টাকা কমিয়েছে সরকার। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় চলতি বছর হজ যাত্রীদের জন্য নতুন বিমান ভাড়া নির্ধারণ করেছে এক লাখ ২৮ হাজার টাকা। গত বছর হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া ছিল এক লাখ ৩৮ হাজার ১৯১ টাকা। গত ১৭ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার বিকেলে বিমান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে হজ্জ সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি। একই সভায় ‘কোনো হাজির চোখের পানি দেখতে চাই না’ মন্তব্য করে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেছেন, এ বছর হজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য সবাইকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। কোনো কর্মকর্তা যদি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হন, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া হজ কার্যক্রমে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ায় ৩৭ হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। অভিযুক্ত ৩৭ এজেন্সির বিরুদ্ধে জামানত বাজেয়াপ্ত, হজ লাইসেন্স বাতিল, স্থগিত, সর্বনিম্ন এক লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকা জরিমানা, হজযাত্রীদের টিকিটের টাকা ফেরত ও নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে সকল প্রকার কার্যক্রম থেকে বিরত থাকাসহ ফৌজদারি মামলা দায়েরের নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। বিমান ভাড়া কমানো ও অনিয়মের কারণে হজ্ব এজেন্সিগুলোর লাইসেন্স বাতিলের খবরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই ধন্যবাদ জানিয়েছে সরকারকে।
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন বলেছেন, দুর্নীতি দূর করতে স্বাস্থ্য খাতের সব জায়গায় শুদ্ধি অভিযান চালানো হবে। গত ১৬ জানুয়ারি বুধবার সচিবালয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ‘আগামী ১০০ দিনের কর্মসূচি’ ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম তদারকির প্রক্রিয়া চালু করা হচ্ছে। বিশেষ করে যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ, জনবল উপস্থিতি এবং পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার বিষয়গুলো কঠোর নজরদারির আওতায় আনা হচ্ছে। এছাড়া এক বছরের নিচে এবং ৬৫ বছরের ওপরে সকল নাগরিককে সরকার বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীরা অনিয়ম-দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেও এগুলো যেন থেমে নেই। প্রতিদিনই পত্রিকার পাতা উল্টালেই দেশের বিভিন্ন স্থান ও দফতরে অনিয়মের খবর দেখা যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শিতার পাশাপাশি যার যার অবস্থান থেকে সচেতন হলেই দুর্নীতি নির্মূল করা সম্ভব। তাহলে ভবিষ্যত প্রজন্ম সৎ ও সততার ভিত্তিতে জীবন গড়বে। দেশ হবে অনিয়ম-দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত। অনিয়মের বিরুদ্ধে সরকারের উদ্যোগগুলো যেন ব্যাহত না হয় সেদিকে সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের পাশাপাশি আমাদেরকেও সোচ্চার থাকতে হবে।
লেখক : সাংবাদিক
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন