শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বিদেশে এত বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক মারা যাচ্ছে কেন?

কূটনৈতিক সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৩ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:১৪ পিএম | আপডেট : ২:৩৩ পিএম, ২৩ জানুয়ারি, ২০১৯

গত বছরে বিদেশে মারা গেছেন প্রায় ৩৮০০ বাংলাদেশি শ্রমিক। ২০০৫ সালের পর এক বছরে মারা যাওয়া এ সংখ্যা সর্বোচ্চ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদেশে মারা যাওয়া বাংলাদেশি শ্রমিকের সংখ্যা এভাবে বাড়ার ফলে তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণের দিকটিই প্রতিফলিত হয়। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
‘ হোয়াই আর সো ম্যানি ওভারসিস বাংলাদেশি ওয়ার্কার্স ডাইং?’ শীর্ষক প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, জর্ডানের মারা যান বাংলাদেশি এক যুবতী শ্রমিক। তার মৃত্যুতে ক্ষোভ দেখা দেয়। দাবি ওঠে, কি কারণে বিদেশে কাজ করতে গিয়ে প্রাণহীন দেহ হয়ে ফেরত আসা শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে তা খুঁজে বের করতে হবে।
২০১৭ সালে বাংলাদেশের নিজগ্রামের বাড়ি ছাড়েন মৌসুমী আক্তার (২০)।

তারপর ৫০০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে জর্ডান পৌঁছেন একজন গৃহকর্মী হিসেবে। দেশে অভাবের মুখে পড়া তার পরিবারকে ভালো রাখাই ছিল তার উদ্দেশ্য। কিন্তু দুই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে তাকে ফিরে আসতে হয়েছে মৃত অবস্থায়। ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, সরকারের প্রকাশিত নতুন ডাটা অনুযায়ী গত বছর বিদেশে কাজ করতে গিয়ে মারা গেছেন বাংলাদেশি ৩৭৯৩ জন শ্রমিক। তাদের একজন মৌসুমী আক্তার।
বাংলাদেশে বহু গরিব পরিবার আছে। তারা বিদেশে কর্মরত তাদের স্বজনদের পাঠানো রেমিটেন্সের ওপর নির্ভর করে বেঁচে আছেন। কিন্তু তাদের মারা যাওয়ার সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অধিক থেকে অধিক পরিমাণ মানুষ দাবি করছেন, কেন এত বেশি সংখ্যক শ্রমিক মৃতদেহ বহনের ব্যাগে করে ফেরত আসছেন দেশে তা জানার জন্য।
মৌসুমী আক্তারের চাচা মোহাম্মদ ইমরান খান। তিনি বলেন, জর্ডান থেকে পাঠানো মৌসুমীর মেডিকেল রিপোর্ট অনুযায়ী স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে তার। কিন্তু তার দেহ দেশে আসার পর আমরা তাতে কালো কালো চিহ্ন দেখতে পেয়েছি। এ থেকে বোঝা যায়, তাকে নির্যাতন করা হয়েছিল। আর সে কি কারণেই বা স্ট্রোকে আক্রান্ত হবে? তার বয়স মাত্র ২০ বছর। তিনি দাবি করেন, এ জন্য সরকারের উচিত ছিল তার মৃত্যুর আসল কারণ উদঘাটনের জন্য দ্বিতীয়বার ময়না তদন্ত করা। এ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করাতে যে পরিমাণ টাকা লাগে তা বহন করার সামর্থ্য নেই তার পরিবারের। তিনি বলেন, বিদেশ থেকে যেকোনো মৃতদেহ দেশে এলেই তার দ্বিতীয়বার ময়না তদন্ত হওয়া উচিত।
মোহাম্মদ ইমরান খানের পরিবারই যে এমন সংশয়ে তা নয়। ২৩ বছর বয়সী বিলাল হোসেন মারা গেছেন। প্রাথমিকভাবে বলা হয়েছিল, তিনিও স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। কিন্তু সৌদি আরবে বিলালের রুমমেটদের মাধ্যমে তার পরিবার জানতে পারে, রাস্তার পানি পরিষ্কার করার সময় বৈদ্যুতিক শক লেগে মারা গেছেন বিলাল।
সরকারি এজেন্সি ওয়েজ আর্নার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ডের ডাটা অনুযায়ী, নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে বিদেশে মারা যাওয়া প্রতি দু’জন বাংলাদেশি শ্রমিকের মধ্যে একজনের বেশিকে দেখানো হয়েছে স্ট্রোকে মারা গেছেন।
রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার বলছে, বিদেশে কাজ নেয়া বাংলাদেশির সংখ্যা বাড়ছে। সরকারি ডাটা থেকে দেখা যায়, ২০১৭ সালে ১০ লাখের বেশি বাংলাদেশি কাজ নিয়ে বিদেশে গেছেন। এ সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণ। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছে, ক্রমবর্ধমান হারে মারা যাওয়ার ফলে অনেক অভিবাসী শ্রমিকদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারের বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রফেসর সিআর আবরার বলেছেন, হতাশা বড় একটি ভূমিকা রাখে। এমনকি এসব শ্রমিককে বিদেশে যাওয়ার আগে প্রচুর অর্থ খরচ করতে হয়। তাদের ভিতর কি পীড়া থাকে সে সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা নেই। যেহেতু হতাশা-সংক্রান্ত বিষয়গুলোকে অবজ্ঞা করা হয় তাই আমাদের উচিত অধিক হারে সুরক্ষা বিষয়ক পদক্ষেপ নেয়া।
গত রোববার প্রায় ১০০ বাংলাদেশি শ্রমিক ফেরত এসেছেন সৌদি আরব থেকে। তাদের বেশির ভাগই নারী। এ বিষয়ে ব্র্যাক বলেছে, এসব শ্রমিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের মুখোমুখি হয়েছেন। তাদের কারো কারো আঘাতটা এত গুরুতর, ফেরার পর তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
অভিবাসী ইস্যুতে গবেষণাকারী সংগঠন অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রাম। এর প্রধান শাকিরুল ইসলাম বলেছেন, বিদেশে যাওয়ার জন্য যে বিশাল খরচ এবং সেখানে যাওয়ার পর তারা যে নাজুক অবস্থার শিকার হন সেগুলোই মৃত্যু বেড়ে যাওয়ার নেপথ্যে মূল ফ্যাক্টর। তিনি বলেন, অনেক কারণে শ্রমিকরা মারা যান। তার মধ্যে একটি হলো- তারা বাজে পরিবেশে কাজ করেন। দ্বিতীয়ত, বিদেশে কাজের জন্য ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের উচ্চমূল্য শোধ করতে হয়। এই অর্থ আসে ঋণের মাধ্যমে। এটা শ্রমিকদের মানসিক অবস্থার ওপর চাপ সৃষ্টি করে।
ওই রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, তৈরি পোশাকের পরেই বাংলাদেশে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স আসে অভিবাসী শ্রমিকদের কাছ থেকে। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের উচিত প্রকৃত সত্যটি পরিবারগুলোর কাছে জানানোর জন্য সরকারের আরো বেশি কিছু করা উচিত।
সমাজকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা রওনক জাহান বলেছেন, এ বিষয়টিতে আমাদের চিন্তা করা প্রয়োজন। যদি আমাদের মনে হয় যে, একটি মৃতদেহের আরেকবার ময়না তদন্ত করা উচিত, তাহলে কেন তা করা হবে না? এগুলো হলো নতুন ইস্যু, যা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে।
মৌসুমী আক্তারের মা আনোয়ারা বলেছেন, সপ্তাহে একবার মৌসুমীর সঙ্গে কথা বলতাম আমি। প্রথম দু-একটা মাস বেশ ভালো ছিল। কিন্তু আস্তে আস্তে তাকে হতাশাগ্রস্ত মনে হলো। সে বলতো, কোনো বিরতি ছাড়াই তাকে সারা দিন কাজ করতে হয়। সর্বশেষ যখন তার সঙ্গে আমি কথা বলেছি, সে আমাকে বলেছে যে, আরেকটি কাজ নেয়ার আগে সে দেশে আসতে চায়। তারপর কি ঘটল আমি জানি না। আমার মনে হয় তারা আমার মেয়েকে হত্যা করেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Habib Rahman ২৩ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৫১ পিএম says : 0
the main cause of torturing by their sponsor. no proper sheltering. salary did not paying on times. no proper medical treatment. so many things creating pressure to lives involvement peacefully. many migration specially Bangladeshi who lives in abroad they are not received any assistance by their embassy.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন