কবিরহাট উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের নবগ্রামে ঘরের সিঁধকেটে তিন সন্তানের জননী (২৯)কে গণধর্ষণের ঘটনায় জামাল উদ্দিন (২৮) নামের আরেক আসামীকে কুমিল্লা থেকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবির) একটি দল। এদিকে মেডিকেল বোর্ড ভিকটিমকে ধর্ষণের আলামত পায়নি এমন প্রতিবেদন জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন। আলামত না পাওয়ার বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ধর্ষিতা ওই নারী।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার দশাবাহী এলাকার জামাল উদ্দিনের এক চাচাতো বোনের স্বামীর বাড়ী থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত জামাল উদ্দিন নবগ্রাম এলাকার আবদুর রহিমের ছেলে।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি আবুল খায়ের গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, গ্রেপ্তারের পর জামালকে কুমিল্লা থেকে নোয়াখালী গোয়েন্দা কার্যালয়ে আনা হচ্ছে। ওইরাতে ঘটনার পর থেকে সে পলাতক ছিল। রিমান্ডপ্রাপ্ত তিন আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
এরআগে, গণধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত মামলার প্রধান আসামী জাকির হোসেন জহিরের দেওয়া তথ্যমতে ভিকটিমের আত্মীয় আবদুর রব মান্না, হারুন অর রশিদ ও সেলিমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে জহির আদালতে ১৬৪ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ঘটনায় জহিরসহ ৫জন জড়িত ছিল বলে স্বীকার করে। বর্তমানে ভিকটিমের তিন আত্মীয় ডিবি কার্যালয়ে ৪দিনের রিমান্ডে রয়েছে। নির্যাতিতা সেই নারী দাবি ঘটনার সাথে রিমান্ডপ্রাপ্ত কেউই জড়িত না। আসামী জাকির হোসেন জহির মনগড়া জবানবন্দি দিয়ে তার নিরপরাধী আত্মীয়দের ফাসিয়েছে। তিনি তাদের অব্যহতি চেয়ে আদালতে একটি আবেদনও করেছেন।
এবিষয়ে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্ববধায়ক ডা. ইব্রাহিম খলিল জানান, হাসপাতালে ভিকটিমের প্যাথলোজিকাল ও শারীরিক পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, ঘটনার পর পরিষ্কার পরিছন্ন বা অন্য কোন কারণে ধর্ষণের আলামত নষ্ট হয়ে গেছে।
ডাক্তারি পরীক্ষায় আলামত না পাওয়ার বিষয়ে নির্যাতিতা ওই নারী জানান, ওইরাতে তিনজন তাঁর মুখে কম্বল চাপা দিয়ে গণধর্ষণ করেছে। শরীরে এখনো নির্যাতনের যন্ত্রণা রয়েছে, চলাফেরা করতে সমস্য হচ্ছে তাঁর। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর প্রথমদিন ও পরে আরো একদিন চিকিৎসকরা তাঁর কাছ থেকে মোট দুই বার আলামত নিয়েছিলেন। ঘটনারদিন তাঁর পরনে থাকা কাপড়গুলো তিনি ওইদিনই পুলিশের কাছে জমা দিয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে স্থানীয় মুদি ব্যবসায়ী জাকির হোসেন জহিরের নেতৃত্বে কয়েকজন আবুল হোসেনের ঘরের সিঁধ কেটে ভিতরে প্রবেশ করে। এদের মধ্যে কয়েকজন মুখোশ পরা ছিল। এসময় তারা আবুল হোসেনের স্ত্রীর কাছে ৬০হাজার টাকা আছে বলে সেগুলো দিতে বলে। এনিয়ে ভিকটিমের সাথে তাদের তর্কবির্তক হয়। পরে তারা ঘরের বৈদ্যুতিক লাইট বন্ধ করে ভিকটিমের মা, ভিকটিমের এক ছেলে ও দুই মেয়েকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে পালাক্রমে ভিকটিমকে গণধর্ষণ করে। পরে রাত আনুমানিক ৩টার দিকে ধর্ষকরা ঘর থেকে বের হয়ে যায়। এসময় তারা ঘরে থাকা নগদ টাকা, ২ভরি স্বর্ণ, মোবাইল ও মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। শনিবার দুপুরে ভিকটিমকে উদ্ধার করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনায় ভিকটিম বাদী হয়ে জাকির হোসেন জহিরসহ অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন