শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

নদী শাসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি

প্রকাশের সময় : ১২ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মেঘনায় সুষ্ঠু ফেরি পারাপার নিশ্চিত না হওয়ায় চট্টগ্রাম-বরিশাল-খুলনা বিভাগীয় সদরসহ দেশের ৩টি সমুদ্র বন্দরের সরাসরি সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা এখন বিপর্যয়ের মুখে। এ প্রসঙ্গে দৈনিক ইনকিলাবের খবরে বলা হয়েছে, ইলিশাঘাটে ভাঙনের কারণে গত ১২ এপ্রিল থেকে ভোলা ও লক্ষ্মীপুরের মধ্যবর্তী ভাটি মেঘনার ফেরি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ এবং আইডব্লিউটিসি। বিকল্প রুট ব্যবহার করতে গিয়ে সময় বেড়ে যাওয়ায় প্রচ- যানজটসহ বিরূপ প্রভাব পড়ছে চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কেও। গত ১৫ এপ্রিল থেকে ইলিশাঘাটের পরিবর্তে প্রায় ৭০ কিলোমিটার ঘুরে ফেরিগুলো ভেদুরিয়া থেকে লক্ষ্মীপুরে যানবাহন পারাপার করলেও এক মাসের মাথায় একটি বিকল্প চ্যানেল চালু করতে যাচ্ছে বিআইডব্লিউটিএ। প্রাসঙ্গিক আলোচনায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভোলা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ইনকিলাবকে জানিয়েছেন, ইলিশাঘাট এলাকায় প্রায় ৫ কিলোমিটার নদীভাঙন রোধে ২৮০ কোটি টাকার একটি নদীতীর রক্ষা প্রকল্প একনেকের অনুমোদন লাভ করেছে। আগামী অর্থবছরে ঐ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন শুরু হবে। আসন্ন বর্ষার ভাঙনের তীব্রতা রোধে ইলিশার আগে পরের অতি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় দ্রুতই কাজ শুরু হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন। এদিকে আমাদের ভোলা সংবাদদাতা জানিয়েছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে ভোলায় নদীভাঙন বৃদ্ধি পেয়েছে। গত প্রায় ৪ দশকে মেঘনা ও তেঁতুলিয়ার অর্ধশতাধিক বর্গকিলেমিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন রোধে এলাকাবাসীর দীর্ঘ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৮০ কোটি টাকার প্রকল্প পাস হলেও এখন পর্যন্ত সে কাজ শুরু হয়নি। 

প্রতিবেশী দেশের বৈরী পানি নীতির কারণে বাংলাদেশের নদ-নদীতে এখন আর স্বাভাবিক গতি-প্রকৃতি বহাল নেই। প্রকৃতপক্ষে দেশের নদ-নদীগুলোর এখন চরম দুর্দশা চলছে। প্রয়োজনীয় পানির অভাবে নাব্য হারিয়েছে অধিকাংশ নদ-নদীই। বলতে গেলে শুষ্ক মৌসুমে নদীপথ প্রায় বন্ধই থাকছে। প্রতিবছরই নতুন নতুন নদ-নদী শুকিয়ে যাবার খবর প্রকাশিত হচ্ছে। এমনকি গঙ্গার পানি চুক্তি থাকা সত্ত্বেও যেটুকু পানি পাবার কথা কার্যত বাংলাদেশ তাও পাচ্ছে না। তিস্তা নিয়েও কোন চুক্তি করা যাচ্ছে না। এই বাস্তবতায় নদী শাসনের বিষয়টি অনেকদিন থেকেই গুরুত্বের সাথে আলোচিত হচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন মহলও এ নিয়ে মাঝেমধ্যেই কথাবার্তা বলে থাকেন। বাস্তবে যা হচ্ছে তা হলো যখন বর্ষা আসে, তখন তড়িঘড়ি করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের টাকা খরচের নামে অপচয়ের হিড়িক পড়ে যায়। দেখা যায় হঠাৎ করেই তারা তৎপর হয়ে ওঠে। নদ-নদী যেহেতু নাব্যতা হারিয়ে ফেলেছে তাই বর্ষায় সামান্য পানিও বহন করার ক্ষমতা থাকে না। সে কারণে নদীর দু’কূল ছাপিয়ে যখন ভাঙন শুরু হয় তখন তড়িঘড়ি করে মানুষের জানমাল রক্ষার বিষয়টিই প্রাধান্য পায়। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সংশ্লিষ্ট দুর্নীতিবাজদের মওকা শুরু হয়। এতে জনগণের টাকার অপচয় ছাড়া আর কিছুই হয় না। আলোচ্য ক্ষেত্রেও যে তার কোন ব্যত্যয় হয়নি সে কথা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। সময় পেরিয়ে গেলেও সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিলম্বের মাশুলই দিচ্ছে কার্যত জনগণ। সময় মত পদক্ষেপ নিলে হয়ত জনভোগান্তি লাঘব হতে পারত। আমাদের প্রকৃতি পরিবেশ জলবায়ু সব কিছুর সাথেই সম্পর্ক নদ-নদীর। নদ-নদী বেঁচে না থাকলে মানুষ প্রকৃতি কৃষি বাঁচিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। সে কারণেই নদী শাসন তথা নদ-নদী রক্ষার বিষয়টিকে অত্যধিক গুরুত্ব দেয়া অতীব জরুরি। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে কানেকটিভিটি ও অবকাঠামো উন্নয়নের প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও নদীভাঙন রোধকল্পে এবং কোটি মানুষের দুর্দশা লাঘবে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেই।
পানির অপর নাম জীবন। সেই পানির আধার হচ্ছে নদ-নদী। সেগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা না গেলে অবকাঠামো দিয়ে কোন লাভ হবে না। নদী শাসন কোন বিচ্ছিন্ন বা আলাদা বিষয় নয়। এক্ষেত্রে কি কি করণীয় তাও অনেকটাই নির্ধারিত। তীর সংরক্ষণসহ নদী খননের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ কাজে তড়িঘড়ি করার কোন পথ নেই। সমীক্ষায় দেখা গেছে, নদী ভাঙনের কারণে দেশের অর্থনীতিতে গড়ে বছরে ক্ষতির পরিমাণ জাতীয় বাজেটের প্রাক্কলিত রাজস্বের শতকরা ২ ভাগের বেশি। দেখা যাচ্ছে একদিকে নদী খননের নামে টাকা ব্যয় করা হচ্ছে আবার নদী থেকে তোলা বালুই আবার নদীতে গিয়ে পড়ছে। সোজা ভাষায় বলা যায়, নদ-নদী রক্ষার বিষয়টি যেন উপেক্ষিত। ভারতের কাছে থেকে পানির ন্যায্য হিস্যা পেতেও কার্যকর কোন উদ্যোগ নেই, নদ-নদী রক্ষার ব্যাপারেও কোন আন্তরিকতা নেই। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা মনে করি, নদ-নদী নাব্য রাখতে ভাঙন ঠেকাতে এবং সুপরিকল্পিত দীর্ঘস্থায়ী নদীশাসনে রাজস্ব খাতের অন্তত একভাগ বরাদ্দ রাখার পাশাপাশি বাজেট বাস্তবায়নের টাইমলাইন এবং কাজের মান রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। সেই সাথে কঠোর হাতে অপচয় ও দুর্নীতি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সবাই আন্তরিক হবেন- এটাই প্রত্যাশিত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন