জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, মাত্র ২৩ দিনের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালনকালে তিনি ৬৬ জন কর্মচারীকে নিয়োগ দিয়েছেন। এই নিয়োগের ক্ষেত্রে তিনি বিভিন্ন মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের সুপারিশ দেখিয়েছেন। এক্ষেত্রে তিনি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি রমেশ চন্দ্র সেনের স্বাক্ষরিত কয়েকটি, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এবং স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রীর সুপারিশ দেখিয়েছেন। বলা হয়েছে, অধিকাংশ নিয়োগের ক্ষেত্রেই পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রীর স্বাক্ষর দেখানো হয়েছে। এদিকে প্রতিমন্ত্রীর দফতরের এক কর্মকর্তা দৈনিক ইনকিলাবকে জানিয়েছেন, প্রতিমন্ত্রীর একটি সুপারিশকে স্ক্যান করে অনিয়মের মাধ্যমে বিভিন্নজনের আবেদনে বসিয়ে নিয়োগ দিয়েছেন আলোচ্য কর্মকর্তা। এই নিয়োগ সম্পর্কে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ইনকিলাবকে বলেছেন, ‘অমি শুনেছি তবে এখনো এ বিষয়ে কোন অভিযোগ পাইনি।’ এই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ হচ্ছে, তিনি একাই প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত), অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পানিসম্পদ) এবং তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে রংপুর বিভাগের তিনটি পদে নিজেই নোট পাঠিয়ে নিজেই স্বাক্ষর করে নিয়োগ দিয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে এই নিয়োগের মাধ্যমে প্রায় ৪শ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। প্রকাশিত রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আলোচ্য অনিয়মের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই দুর্নীতি দমন কমিশন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শাখায় চিঠি দিয়েছেন। এদিকে এ ধরনের অনিয়ম করে আবারো অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী পদ বাগিয়ে নিতে দৌড়ঝাঁপ করছেন বলে মন্ত্রণালয় সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে খবরে বলা হয়েছে।
একজন সরকারি কর্মকর্তার অনিয়ম ও দুর্নীতি খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। বিষয়টি ইতোমধ্যেই দুর্নীতি দমন কমিশনসহ নানা জায়গায় পৌঁছেছে। এ ধরনের অভিযোগও যে প্রথম তেমনটি মনে করার কোন কারণ নেই। নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়টিও নতুন নয়। এ নিয়ে বহু লেখালেখি হলেও প্রতিকার হয়নি। ইতোপূর্বেও নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, পুলিশের নিয়োগে মারাত্মক দুর্নীতি হয়েছে। দালাাল চক্রের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে সবকিছু পরিবর্তন করে এমনকি পুলিশ ভেরিফিকেশনও পরিবর্তন করে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এর সাথে প্রভাবশালী মহল, আমলা ও পুলিশ কর্মকর্তার জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এর আগে এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রীও বলেছেন, বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগে ঘুষ-দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় দলীয় রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে প্রভাবশালী এমপি-মন্ত্রী পর্যন্ত শিক্ষক নিয়োগে ঘুষ দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নিচ্ছেন। প্রশাসনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ক্ষেত্রেও এ ধরনের অভিযোগ শোনা গেছে। বিষয়টি থেমে আছে বা বন্ধ হয়েছে এরকম মনে হবার কোন কারণ নেই। ভুক্তভোগীরা বলছেন ভিন্নকথা। দেশে কর্ম সংস্থানের সুযোগের অভাব কাজে লাগিয়ে একটিশ্রেণী অব্যাহতভাবে দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছে। এরা যে প্রভাবশালী তাতে কোন সন্দেহ নেই। নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের দলীয়করণ প্রক্রিয়াও দুর্নীতিকে উস্কে দিচ্ছে। ব্যাংক-বীমা থেকে শুরু করে যে কোন নিয়োগেই নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়টি জোরালো হয়ে উঠেছে। সরকারের বেতন বৃদ্ধির পর এ ধরনের নিয়োগে অবৈধ অর্থের পরিমাণও বেড়ে গেছে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নিয়োগকে কেন্দ্র করেও লাখ লাখ টাকা চাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রকাশ্যেই তারা বলেছেন, এসব টাকার ভাগ মন্ত্রণালয়েও যাবে। প্রকৃতপক্ষে নিয়োগ বাণিজ্য এখন অনেকটা ওপেন সিক্রেট।
এটা ব্যাখ্যা করার অবকাশ রাখে না যে, এ ধরনের বাণিজ্যের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাষ্ট্র। অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অযোগ্যরা নিয়োগ পাবার ফলে প্রশাসন দিন দিনই তার সক্ষমতা হারাচ্ছে। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অর্থ ও খুঁটির জোর না থাকায় যারা বঞ্চিত হচ্ছে তাদের কথা শোনার কেউ নেই। এই বাস্তবতা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি লাভ প্রতিটি নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। যে বা যারা এই অধিকার হরণ করছে বা বাধা সৃষ্টি করছে তারা গর্হিত অপরাধের সাথে যুক্ত। জনগণের কাছে কোন জবাবদিহিতা না থাকার কারণেই কারো কারো পক্ষে এমন বেপরোয়া হয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। শুধু জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ নয় সর্বত্রই যাতে মেধা-মননের মাধ্যমে যোগ্যরাই চাকরি পাবার জন্য বিবেচিত হয় তার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ ও অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা জরুরি হয়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট সকলে এ ব্যাপারে আন্তরিক হবেন, এটাই প্রত্যাশিত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন