রিজার্ভ চুরির অর্থ ফিরিয়ে আনতে ও দোষীদের বিচারে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে গতকাল শুক্রবার (বাংলাদেশ সময় ১ ফেব্রুয়ারি) মামলা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে ফিলিপাইনের ম্যানিলাভিত্তিক রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনকে (আরসিবিসি) আসামি করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার মামলা করার কথা থাকলেও আইনি প্রস্তুতি শেষ না হওয়ায় শুক্রবার এ মামলা করা হলো।
এ তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বিএফআইইউর উপদেষ্টা দেবপ্রসাদ দেবনাথও মোবাইলে খুদেবার্তা পাঠিয়ে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত বুধবার মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরও সাংবাদিকদের মামলা করার কথা জানিয়েছিলেন। ফজলে কবির বলেন, রিজর্ভ চুরির ঘটনা থেকে যারা লাভবান হয়েছে এবং যারা এর সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের এ মামলায় আসামি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে মামলার সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আমাদের একটি প্রতিনিধি দল এখন নিউ ইয়র্কে অবস্থান করছে। মামলায় ম্যানিলাভিত্তিক আরসিবিসি জড়িতদের দায়ী করে মামলা সাজানো হচ্ছে। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্ক থেকে বাংলাদেশের রিজার্ভের চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত আনার পাশাপাশি দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করা এই মামলার উদ্দেশ্য।
এ মামলায় সম্ভাব্য আসামির তালিকায় আছেন আরসিবিসি ও তাদের কয়েকজন কর্মকর্তা, অর্থ স্থানান্তরকারী কোম্পানি ফিলরেম ও তার কর্মকর্তা, ক্যাসিনো মালিক ও সুবিধাভোগী বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। এ মামলায় পূর্ণ সহায়তা দেবে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্ক (ফেড)। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ফেডের একটি চুক্তিও স্বাক্ষর হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি ছাড়াও চার সদস্যের এই প্রতিনিধি দলে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিটের মহাব্যবস্থাপক দেবপ্রসাদ দেবনাথ, একই ইউনিটের যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুর রব এবং অ্যাকাউন্ট অ্যান্ড বাজেটিং ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক জাকির হোসেন রয়েছেন।
২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে (নিউ ইয়র্ক ফেড) থাকা বাংলাদেশের রিজার্ভের ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ব্যাংকিং লেনদেনের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক সুইফটে ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে এই অর্থ ফিলিপাইন ও শ্রীলঙ্কার দুটি ব্যাংকে সরানো হয়েছিল। এই অর্থের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় যাওয়া ২ কোটি ডলার আটকানো গেলেও ফিলিপাইনে চলে যায় ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। এর মধ্যে এখনও ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার ফেরত আসেনি। এই অর্থ ফেরত পাওয়ার জন্যই যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা করা হবে। এজন্য দেশটিতে দুটি ল’ ফার্মকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের ফি নিয়ে একটি চুক্তিও করা হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, চুরি যাওয়া ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার উদ্ধার করে দিতে পারলে ল’ ফার্ম দুটিকে সেই অর্থের ১০ ভাগ দেওয়া হবে।
জানা গেছে, হ্যাকাররা চুরির অর্থ ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংকের জুপিটার স্ট্রিট শাখার চারটি অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করে। সেখান থেকে ওই অর্থ ফিলিপাইনের মুদ্রা পেসোতে রূপান্তরের পর দুটি ক্যাসিনোতে পাঠানো হয়। রিজার্ভ চুরির এই ঘটনায় দোষী প্রমাণ হওয়ায় গত ১০ জানুয়ারি আরসিবিসির সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক মায়া দেগুইতোকে সাজা দেন ফিলিপাইনের আদালত। এছাড়াও তাকে সর্বমোট ১০ কোটি ৯০ লাখ ডলার জরিমানা করা হয়েছে।#
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন