চুরি হওয়া রিজার্ভের টাকা আগামী তিন বছরের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ফেরত পাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি। তিনি বলেন, বছর তিনেকের মধ্যে টাকা ফেরত আসবে বলে আশা করা যায়। এই মামলায় খরচ হবে ঘণ্টার হিসাবে। রোববার (৩ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলাটি পরে করা হলো কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে কিউসি জানান, মামলার পেছনে তারা বেশি সময় ব্যয় করেছেন। বিভিন্ন তদন্ত ও রিপোর্ট কালেকশনে সময় ব্যয় হয়েছে। মূল অপরাধী ফিলিপাইনের রিজাল কমারশিয়াল ব্যাংক-আরসিবিসি যাতে কিছু জানতে না পারে সেজন্য দেরি হয়েছে। তিনি বলেন, আরসিবিসি অবৈধভাবে এই টাকা চুরি করেছে এবং এই টাকা কোথায় কোথায় খরচ হয়েছে সেটা প্রমাণ হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে সাত প্রতিষ্ঠান, ১৫ ব্যক্তি ও অজ্ঞত ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে বলেও জানান কিউসি। এসময় মামলায় কত টাকা খরচ হবে সে বিষয়ে কিউসি কোনও তথ্য দেননি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসান খরচের বিষয়ে কিছু তথ্য দেন। তিনি বলেন, এই মামলায় এ পর্যন্ত তিন কোটি টাকার বেশি খরচ হয়নি। এখানে খরচ মুখ্য নয়, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মামলাটি করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএফআইইউ এর পরামর্শক দেব প্রসাদ দেব নাথ, বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলামসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এর আগে বাংলাদেশ সময় গত শুক্রবার ভোরে রিজার্ভ চুরির অর্থ ফিরিয়ে আনা, ক্ষতিপূরণের দাবিতে দোষীদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে মামলা করে বাংলাদেশ।
জানা যায়, হ্যাকাররা প্রায় ১০০ কোটি ডলার চুরি করার ষড়যন্ত্র করেছিল। তবে তারা ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি করতে পারে। এর মধ্যে দুই কোটি ডলার শ্রীলঙ্কার একটি অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়। তবে বানান ভুলের কারণে শ্রীলঙ্কার অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা অর্থ ফেরত আসে। ২০১৬ সালের আগস্টে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক চুরির অর্থ স্থানান্তর বন্ধে ব্যর্থতার কারণে আরসিবিসি ব্যাংককে রেকর্ড পরিমাণ ১৯ মিলিয়ন ডলার বা এক কোটি ৯০ লাখ ডলার জরিমানা করে।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অর্থ চুরির ঘটনা ঘটলেও তা প্রকাশ পায় মার্চে। এ ঘটনায় তৎকালীন গভর্নর আতিউর রহমানকে পদত্যাগ করতে হয়। দুই ডেপুটি গভর্নরকেও সরিয়ে দেয় সরকার। ঘটনা তদন্তে সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনকে প্রধান করে কমিটি করে সরকার। বারবার আশ্বাস দিলেও সেই প্রতিবেদন প্রকাশ করেননি সদ্যবিদায়ী অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ছিল বৃহস্পতিবার। পরের দুইদিন সরকারি ছুটি হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের হিসাব থেকে অর্থ বের করতে সেদিন রাতকেই বেছে নেয়া হয়েছিল। ওই রাতেই ১৯৩ কোটি ডলার বের করার উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে সব আদেশ কার্যকর না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত চুরি হয় ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার।
অর্থ স্থানান্তর হয়ে যাওয়ার পর ১১ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন গভর্নর আতিউর রহমান ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে ফোন করে অর্থ উদ্ধারের বিষয়ে সহায়তা চান। ১৪ ফেব্রুয়ারি ফিলিপাইনে যায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিনিধিদল। এরপর দফায় দফায় সরকারের মন্ত্রী, উপদেষ্টা, গভর্নরসহ আরও অনেকে অর্থ উদ্ধার নিয়ে ফিলিপাইন, সুইফট কর্তৃপক্ষ ও ফেডের সঙ্গে সভা করে। ঘটনার তিন বছরের মাথায় মামলাটি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন