সপ্তাহের দ্বিতীয় কর্মদিবস সোমবার ছিল অমর একুশে বই মেলার চতুর্থ দিন। বিকেল তিনটায় প্রবেশ পথ খুলে দেওয়ার পর থেকেই মেলা প্রাঙ্গণের আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বইপ্রেমীর মেলায় প্রবেশ করেন। মেলার স্টলগুলোতে নতুন বইয়ের গন্ধে মন উতালা করে তোলে বই প্রেমিদের। বইয়ের প্রতি ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে প্রতিটি বইপ্রেমী পরম আবেগে হাতে তুলে নেয় নিজের পছন্দের বইটি।
কথাপ্রকাশ প্রকাশনীর স্টলের ইনচার্জ মোহাম্মদ ইউনুস আহমেদ বলেন, গতকাল মেলার শুরু থেকেই বিক্রিটা ভালো হয়েছে। অন্তত প্রথম কয়েকদিনের তুলনায় গতকাল মেলায় ক্রেতা ও দর্শনার্থীর ভিড় ছিল একটু বেশি।
তার স্টলে গতকাল যারা এসেছিলেন, তারা সবাই বই কিনেছেন বলেও জানান তিনি। আরো জানান, খুব দ্রুতই জমজমাট হবে মেলা। কেননা ইতোমধ্যেই পাঠকদের বই কেনা শুরু হয়ে গেছে। মাওলা প্রকাশনীর সামনে কথা হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরিফুর রহমানের সঙ্গে। তিনি কিনেছেন শাহাদুজ্জামানের প্রবন্ধের বই গুগল গুরু। সঙ্গে আছে তার বন্ধুরাও। শুধু বইমেলায় অংশগ্রহণের জন্যই তিনি রাজশাহী থেকে ঢাকা এসেছেন বন্ধুদের সঙ্গে। কথা হলে আরিফ বলেন, বর্তমান সময়ের লেখকদের মধ্যে শাহাদুজ্জামান আমার প্রিয় একজন লেখক। তাই আজ প্রিয় লেখকের বই দিয়েই বই কেনা শুরু করলাম। গত কয়েকদিন বিভিন্ন স্টল ঘুরে আরো কিছু বইয়ের লিস্ট করেছি, আস্তে আস্তে সেগুলোও কিনে নেবো।
মেলা ঘুরে দেখা যায়, এদিন শুরু থেকেই লোক সমাগম বেশ। অনেকে বিভিন্ন স্টলে ঘুরে ঘুরে বইয়ের তালিকা সংগ্রহ করছেন। আবার অনেকেই কিনছেন আগের বছর বা পুরনো সময়ের প্রিয় কোনো বই।
মেলায় ঘুরতে ঘুরতে ঐতিহ্য প্রকাশনা সংস্থার কাছে দেখা মেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে মেলায় আসা সালাউদ্দিন আহমেদের সাথে। তার কাছে মেলার পরিবেশ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিবছরই বই মেলায় আসি, আসতে হয়। এবারের মেলায় কালই প্রথম আসলাম। মেলার সার্বিক পরিবেশ দেখে খুব ভালো লাগছে। মেলায় স্টলগুলো যেমন নান্দনিকভাবে সেজেছে, তেমনই মেলায় স্টল বিন্যাসও ভালো হয়েছে। স্টল থেকে স্টলের মাঝে পর্যাপ্ত খোলা জায়গা থাকায় নির্বিঘে্ন চলাফেরা করা যাচ্ছে। এ জন্য বিগত বছরগুলোর চেয়ে এবারের মেলার পরিবেশ অনেক শান্ত ও স্নিগ্ধ মনে হচ্ছে।
দেশের শিল্পী ও স্থপতিদের সুনিদৃষ্ট দিকনির্দেশনায় স্থপতি এনামুল করিম নির্ঝরের শৈল্পিক ও দৃষ্টিনন্দন নকশায় সুবিন্যাস্ত, গোছালো এবং পরিপাটি মেলার পরিবেশ। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে আসতেই জ্বলে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণের সব বাতি। কিন্তু বইমেলার মূল আলোকবাতি সেই বইপ্রেমীর তেমন দেখা মেলেনি। এ বিষয়ে কথা হলো প্রকাশনা সংস্থা ঐতিহ্যের ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন কাজলের সঙ্গে। তিনি বললেন, দুইদিন ছুটির পর বই প্রেমীদের আনাগোনা কম থাকবে এটাই স্বাভাবিক, তিনি জানান, বইপ্রেমীদের আনাগোনা কম থাকলেও বিক্রি তুলনামূলকভাবে ভালোই। এই সপ্তাহ শেষে মেলা পুরোপুরি জমে উঠবে বলেও মনে করেন ঐতিহ্যের এই ব্যবস্থাপক।
এ বিষয়ে মেলার অন্যান্য বেশকিছু প্রকাশনা সংস্থার কর্মকতাদের সঙ্গে কথা বললে-তারা ঐতিহ্যের ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন কাজলের মতো একই অভিমত ব্যক্ত করেন। এবং তারা জানান, প্রতিবছর মেলার শুরুর পর পরই তেমন জমে ওঠে না। বইও বিক্রি তেমন হয় না। এই সময়ে যেসব বইপ্রেমী মেলায় আসেন তাদের প্রায় সবাই বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থার বইয়ের ক্যাটালগ সংগ্রহ করেন। এসব ক্যাটালগ দেখে মেলার মাঝামাঝি সময়ে বই কিনতে আসেন। এবারও সেই রকমটাই হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন