সাতক্ষীরায় ভয়াবহ নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে কলেজ ছাত্রীদের একটি বড় অংশ টেপেন্টাডল (৫০ এমজি), ডরমিকাম (৭.৫ এমজি), ডিসোপ্যান ২, পেন্টাডল (৫০ এমজি), সিনটা (৫০ এমজি), মিলাম (৭.৫ এমজি)সহ বিভিন্ন ওষুধে আসক্ত হয়ে পড়ছে। ইতোমধ্যে এই হার শতকরা ৯০ ভাগে উন্নীত হয়েছে বলে দাবি ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর।
বিনা প্রেসক্রিপশনে ওষুধ বিক্রিতে বাধা না থাকায় হরমেশাই এসব ওষুধ হাতে পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। আর ঘুম না হওয়া, ব্যথা কমানো বা হতাশা দূর করার নামে যথেচ্ছ ব্যবহার করে রীতিমত আসক্ত হয়ে পড়ায় ধ্বংস হচ্ছে তাদের জীবন। গত রোববার এমনই এক ভুক্তভোগী দম্পতি উল্লিখিত ওষুধের প্রায় হাজার খানেক খালি পাতা নিয়ে দেখা করতে যান সাতক্ষীরার পুলিশ সুপারের সাথে। কিন্তু পুলিশ সুপার ঢাকায় থাকায় তিনি এসব ওষুধের খালিপাতা নিয়ে হাজির হন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে।
এসময় ওই দম্পতি তাদের মেয়ের ভয়াবহ মাদকাসক্তির বর্ণনা দিয়ে বলেন, তাদের মেয়ে শহরে থেকে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে অনার্স পড়ে। গ্রাম থেকে শহরে আসার পর বান্ধবীদের খপ্পড়ে পড়ে ওষুধে আসক্ত হয়ে পড়ে সে। গত দুই বছর যাবত টেপেন্টাডল (৫০ এমজি), ডরমিকাম (৭.৫ এমজি), ডিসোপ্যান ২, পেন্টাডল (৫০ এমজি), সিনটা (৫০ এমজি), মিলাম (৭.৫ এমজি)সহ বিভিন্ন ওষুধে আসক্ত মেয়ে এখন ভারসাম্যহীন। ইতোমধ্যে সে দুইবার আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছে।
কিভাবে আসক্তিতে জড়ালো জানতে চাইলে ওই দম্পতি বলেন, যতদূর জানতে পেরেছি ঘুম না হওয়া, শরীরে ব্যথা কিংবা কোন কারণে হতাশায় ভোগা নিয়ে বান্ধবীদের পরামর্শেই এসব ওষুধ খেতে শুরু করে। আস্তে আস্তে আসক্ত হয়ে এখন ওষুধ না হলে তার চলে না। এসব ওষুধ প্রেসক্রিপশন ছাড়াই বাজারে হরমেশা বিক্রি হচ্ছে। আর তা ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। এখন অধিকাংশ কলেজছাত্রীই এতে আসক্ত বলে দাবি ওই দম্পতির। তারা আরও বলেন, এসব ওষুধের গড়ে ১০-১১ টাকা দাম। কিন্তু বাজারে সঙ্কট থাকায় ৫০-৬০ টাকাও নেয়।
তারা তাদের মেয়ের ব্যবহৃত খালি ওষুধের পাতা দেখিয়ে বলেন আমরা হিসাব করেছি, এখানে প্রায় দুই লাখ টাকার ওষুধ রয়েছে। তাদের দাবি, অধিকাংশ কলেজছাত্রী এখন মাদকাসক্ত। এখনই এর প্রতিকার হওয়া দরকার। তা না হলে ভবিষ্যত প্রজন্মের মধ্যে বিপর্যয় দেখা দেবে। তারা তাদের মেয়েকে চিকিৎসা করালেও মাদক থেকে ফেরাতে পারছেন না।
এদিকে, এই দম্পতির আর্তনাদ শুনে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ, সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজ, সিটি কলেজ, দিবা নৈশ কলেজসহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুসন্ধান চালিয়ে তাদের দেওয়া তথ্যের সত্যতা মিলেছে। অনেক শিক্ষার্থীই জড়িয়ে পড়েছে মাদকাসক্তিতে। পরিবারের অজান্তে তারা এসব ওষুধ ব্যবহার করলেও এ নিয়ে গড়ে ওঠেনি কোন প্রতিরোধ ব্যবস্থা। বরং বিনা প্রেসক্রিপশনে এসব ওষুধ বিক্রি করায় তারা সহজেই জড়িয়ে পড়ছে মাদকাসক্তিতে। এ প্রসঙ্গে সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, উল্লিখিত ওষুধ ক্ষতিকর। এগুলো যাতে বিনা প্রেসক্রিপশনে বিক্রি না হয় সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন