শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

ভবন নয়, সেবা চান মানুষ

অকার্যকর থাকছে সুবিশাল ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সগুলো

মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল, কুমিল্লা থেকে : | প্রকাশের সময় : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করা এবং গ্রামের জনগণকে বেশি সম্পৃক্ততার লক্ষ্যে কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলায় নির্মিত সুদৃশ্য ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সগুলো তৃণমূল মানুষের কাছে তামাশায় পরিণত হয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলোর সেবা পৌঁছে দেয়া এবং গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবনগুলোতে পরিপূর্ণ অবকাঠামো নির্মিত হলেও ইউনিয়নবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে কোনো কাজে আসছে না।
ভবনগুলোতে সরকারের কৃষি, স্বাস্থ্য ও ভূমিসহ বিভিন্ন সেবা বিভাগের নামে কক্ষ বরাদ্দ থাকলেও সরকারি কোনো বিভাগের কার্যক্রম কমপ্লেক্সগুলোতে পড়ে থাকছে কর্মকর্তাহীন ফাঁকা। যে কারণে জনসাধারণের উপজেলা সদরে দৌড়ঝাঁপের ভোগান্তি রয়েই গেছে। এমনকি সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানরাও তাদের এ কমপ্লেক্স ভবন ব্যবহার করেন না বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। সূত্রমতে, ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রতিটি ইউনিয়ন কমপ্লেক্স ভবনে চেয়ারম্যান, মেম্বার, সচিবদের কক্ষসহ কৃষি সম্প্রসারণ, পশুসম্পদ, আনসার ভিডিপি, এলজিইডি, বিআরডিবি, জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা বিভাগসহ সরকারের তৃণমূল পরিসেবার অফিস রয়েছে। রয়েছে ইউনিয়ন পর্যায়ে অনুষ্ঠানের জন্য কনফারেন্স রুমও।
কুমিল্লার চান্দিনা, মুরাদনগর, দাউদকান্দি, হোমনা, তিতাস, দেবিদ্বার বরুড়া উপজেলায় বিভিন্ন ইউনিয়নে নির্মিত ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবনগুলো এক যুগ আগে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হলেও সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী এগুলোতে কৃষি স¤প্রসারণ, পশুসম্পদ, আনসার ভিডিপি, এলজিইডি, বিআরডিবি, জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা বিভাগের জন্য নির্ধারিত থাকলেও বরাদ্দকৃত কক্ষগুলো থাকে খালি ও কর্মকর্তা শূন্য।
সম্প্রতি সরেজমিন ঘুরে এবং জেলার বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, গ্রামের জনসাধারণের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রায় ১২ বছর আগে সরকার পুরাতন ইউনিয়ন পরিষদ ভবনগুলো ভেঙ্গে পর্যায়ক্রমে কুমিল্লার প্রায় সব উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদের সু-বিশাল ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স নির্মাণ করেন। ওই সব কমপ্লেক্সেগুলো গ্রামের মানুষদের কথা চিন্তা করে ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন থেকেই যেন সকল ধরনের নাগরিক সুবিধা পেতে পারে সে জন্য প্রতিটি কমপ্লেক্সে কৃষি সম্প্রসারণ, পশুসম্পদ, আনসার ভিডিপি, এলজিইডি, বিআরডিবি, জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা বিভাগসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অফিসগুলোর সংশ্লিষ্ট বিভাগের দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীদের বসার রুম বরাদ্দ দেওয়া হলেও আজও ওইসব অফিসগুলোতে দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় শ্রেণীর কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের দেখা পাননি গ্রামের সাধারণ জনগণ।
ফলে সাধারণ মানুষ বা ইউনিয়নবাসীর কোনো উপকারেই আসে না এবং তাদের প্রয়োজনীয় কাজের জন্য আগের মতোই ছুটতে হয় উপজেলা পরিষদে। কুমিল্লার চান্দিনার বদরপুর গ্রামের কৃষক রমিজ উদ্দিন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, গ্রামের সু-বিশাল ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সটি নির্মান হলেও আমরা কৃষকরা ইউনিয়ন পরিষদের ভবনে কৃষি অফিস থাকলেও ওই অফিসের কক্ষটি বছরের পর বছর বন্ধই থাকছে। গ্রামের লোক ওই কমপ্লেক্স থেকে সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, গ্রামের ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে কাঙ্খিত সেবা মিললে আমরা গ্রামের কৃষকরা কষ্ট করে টাকা খরচ করে উপজেলা শহরে যেতে হতো না। দাউদকান্দি উপজেলার শহীদনগর ইউনিয়ন বাসিন্দা মোতালেব। তার একটি গরুর খামার থাকলেও সে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের পশুসম্পদ অফিসে কোন কর্মকর্তা না থাকায় এই ইউনিয়ন কমপ্লেক্স থেকে কোন প্রকার পরামর্শ নিতে পারচ্ছে না বলে অভিযোগ করে দৈনিক ইনকিলবাকে বলেন, সরকার অযথা লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে গ্রামের ভিতরে এই সু-বিশাল ভবনগুলো নির্মাণ করেছে।
কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার ভানী গ্রামের আবুল লতিফ দৈনিক ইনকিলবাকে বলেন, বর্তমান সরকার দেশের গ্রামীণ ইউনিয়ন পরিষদগুলোকে আরো গতিশীল করতে অনেক ইতিবাচক উদ্যোগ নিলেও আমরা কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছি না বছরের পর বছর ধরে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে বর্তমান সরকার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইশতিহারে গ্রামকে শহরে পরিণত করার যে ঘোষণা করছে তা ভেস্তে যাবে। যদি গ্রামের এইসব ইউনিয়ন কমপ্লেকক্সগুলো কে গতিশীল না করা হয়।
এ ব্যাপারে কুমিল্লার একাধিক উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা দৈনিক ইনকিলাবে বলেন, উপজেলা পরিষদগুলোর মাসিক সমন্বয় সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত ও মনিটরিং হয়। কমপ্লেক্স ভবনগুলোকে জনগণের জন্য আরো গতিশীল ও কার্যকর করতে উপজেলা প্রশাসন থেকে নির্দেশনা দেয়া হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন