ইয়াবা চোরাচালান বন্ধ করতে টেকনাফ সীমান্তে কাজ করছে পুলিশ-বিজিবি-র্যাবসহ আইন শৃঙ্খলাবাহিনী। অভিযানে এ পর্যন্ত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন প্রায় অর্ধশত অভিযুক্ত ইয়াবা কারবারী।
এসব দেখে আত্মসমর্পণ প্রচেষ্টারত শতাধিক তালিকাভুক্ত ইয়াবা কারবারী। আগামী শনিবার শতাধিক শীর্ষ ইয়াবা কারবারী আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। আর ওই অনুষ্ঠানে হাজির থাকছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা। ব্যাপক কড়াকড়ির কারণে সীমান্ত অতিক্রম করে ইয়াবা ঢুকা আগের চেয়ে কমে এলেও থেমে নেই সাগর পথে ইয়াবা পাচার। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ইয়াবায় জড়িয়ে হঠাৎ আঙুল ফুলে কলাগাছ› বনে যাওয়া অনেকেই এখন সাগর পথকে নিরাপদ যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছে। ইয়াবা চালানের ট্রানজিট হিসাবে ব্যবহার হয়ে আসছে কক্সবাজারের পেকুয়া-কুতুবদিয়া ও পার্শ্ববর্তী বাঁশখালীর ছনুয়া চ্যানেল।
এ চ্যানেল দিয়ে উপক‚লীয় রাজাখালী ইউনিয়নের বকশিয়া ঘোনা ও সুন্দরী পাড়া এলাকার ইয়াবা ব্যবসায়ীরা দেদারছে পাঠাচ্ছে ইয়াবা চালান। নৌপথে কঠিন তদারকি না থাকায় ফিশিং ট্রলারই এখন ইয়াবার নির্ভরযোগ্য বাহন। পেকুয়ার রাজাখালী এলাকার ডজনখানেক ব্যক্তি জোটবদ্ধ হয়ে একার্যক্রম চালিয়ে রাতারাতি হয়েছেন কোটিপতি।
অভিনব কৌশলে পাচারকারীরা ইয়াবা পাচার অব্যাহত রাখায় তা বরাবরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখের আড়ালে রয়ে গেছে তারা।
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, রাজাখালী ইউনিয়নের ইয়াবা কারবারের মূল নিয়ন্ত্রকের ভ‚মিকা পালন করছেন উত্তর সুন্দরী পাড়ার আব্দুল মালেকের ছেলে আনছারুল ইসলাম টিপু। নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান টিপু এখন অঢেল বিত্তের মালিক। তার বাবা আব্দুল মালেকও চোরাকারবারে জড়িয়ে আয় করেন কাড়িকাড়ি টাকা। পিতার দেখানো পথে সহজে হেটে টিপু হয়েছেন অঢেল সম্পদের মালিক।
স্থানীয়দের মতে, টিপুদের মালিকানায় এফবি আপরা ও এমবি খোকা নামে দুটি ট্রলার রয়েছে। গভীর সাগরে মাছ ধরতে পাঠানোর নামে তাদের ফিশিং ট্রলারগুলো মিয়ানমার নৌসীমার কাছাকাছি পাঠানো হয়। সেখানে ওপারের পার্টনাররাও ট্রলারে এসে ইয়াবার চালান বুঝে দেয়। তা নিয়ে তাদের ট্রলারগুলো কৌশলে ফিরে এসে কুতুবদিয়া-ছনুয়া চ্যানেল দিয়ে বাঁশখালী, আনোয়ারা বা চট্টগ্রাম ফিশারিঘাটে সুবিধামতো ইয়াবা ডেলিভারি দেয়।
স্থানীয়দের মতে, টিপু-জালালের পরিবর্তন দেখে তাদের ইয়াবা সিন্ডিকেটে যুক্ত হয়েছেন সুন্দরী পাড়া এলাকার শরীফের ছেলে আফজাল কবির, তার ছেলে শামসু, জসিম, ছিদ্দিক আহমদের ছেলে গিয়াস উদ্দিন খোকা, উলা মিয়ার ছেলে জামাল, বদরুল আলমের ছেলে মিজান, রাজ্জাক মাঝির ছেলে মাহাবু, গোলাম শরীফের ছেলে আব্দুল মাবুদ, জালাল আহমদের ছেলে ফয়সাল, ফজল আহমদের ছেলে সাজ্জাদ, আবুল কাশেমের ছেলে শমসু, বকশিয়া ঘোনা এলাকার ছৈয়দ নূরের ছেলে মনছুর, জকরিয়া, আমিন শরিফের ছেলে আহমদ ছবি, আলী আহমদের ছেলে আক্তার কামাল ও নবী হোছেনের ছেলে চিহ্নিত মানব পাচারকারী আব্দুল মজিদ।
তাদের দেখাদেখি ইয়াবা বিকিকিনিতে জড়িয়েছে ইউনিয়নের উলাদিয়া পাড়ার আমির হামজার ছেলে জামাল, চড়ি পাড়ার আছদ আলী মাঝির ছেলে জাফর মাঝি, বামলা পাড়া এলাকার গোলাম নবীর ছেলে বদি আলম, শাহ আলমের ছেলে মো. আলম ও সিকদার পাড়া এলাকার আমির হামজার ছেলে জামাল এমনটি দাবি সচেতন মহলের। স্থানীয়রা আরো জানান, মো. জাকারিয়ার মালিকানাধীন এফবি রাবেয়া ও এমবি তামিম, আব্দুল মালেকের মালিকানাধীন এফবি নজরুল ও এমবি খোকা-২, রুহুল আমিনের মালিকানাধীন এফবি আকিব, গিয়াস উদ্দীন খোকা মালিকানাধীন এফবি জারিত এবং আনছারুল ইসলাম টিপুর মালিকানাধীন এমবি খোকা-১ ইয়াবা পাচার কাজেই কেবল সাগরে যায়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কক্সবাজার অফিসের সহকারী পরিচালক সোমেন মন্ডল জানান, সব ধরণের মাদকের বিরুদ্ধে জিরো-ট্রলারেন্সে রয়েছি। উপক‚লসহ সবখানের মাদক সংশ্লিষ্টদের তালিকাভুক্তি করার কাজ চলছে। আনছারুল ইসলাম টিপু ও জালাল আহমদসহ বেশ কয়েকজনের নাম নতুন তালিকায় এসেছে। তাদের অতীত ও বর্তমান নিয়ে অনুসন্ধান চলছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে আনছারুল ইসলাম টিপুর ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি ডাইবার্ট করা। তার সাথে কথা বলা দরকার উল্লেখ করে ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হলেও তিনি কোন রেসপন্স না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির হোসেন ভূইয়া বলেন, পেকুয়ার কিছু ইউনিয়ন দুর্গম। তার একটি রাজাখালী। এখানকার ইয়াবা সিন্ডিকেটের বিষয়ে জানাছিল না। এখন খোঁজ লাগানো হবে। নজরদারি বাড়ানো হবে কুতুবদিয়া-ছনুয়া চ্যানেলও। ইয়াবায় যারাই জড়িত থাকুক, কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন