বাংলা সাহিত্যের সাম্প্রতিক অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদের দাফন হবে নিজ গ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের দক্ষিণ মোড়াইল গোরস্থানে। আজ বাদ জোহর শহরের নিয়াজ মুহম্মদ স্কুল মাঠে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। মনে কষ্ট থেকেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যাতায়াত প্রায় বন্ধ দিয়েছিলেন ‘সোনালী কাবিন’র কবি আল মাহমুদ। বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করা এই কবির পৈত্রিক নিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের মৌড়াইল এলাকায়।
গত শুক্রবার দিবাগত রাত ১১টা ৫ মিনিটে ঢাকার ইবনে সিনা হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। গতকাল শনিবার সকাল থেকে তার স্বজন ও শুভাকাঙ্খীরা তার মৌড়াইলস্থ বাড়িতে ভিড় করছে। পরিবার সূত্র জানিয়েছেন, গতকাল শনিবার রাজধানী ঢাকায় ৩টি জানাজা শেষে আজ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মরহুমের গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন করা হবে।
১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই মৌড়াইল গ্রামের মোল্লাবাড়িতে জন্ম নেয়া আল মাহমুদ দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে ছিলেন সবার বড়। পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকার কারণে মাঝে-মধ্যে অল্প সময়ের জন্য পৈত্রিক নিবাসে আসতেন তিনি। তবে কয়েক বছর ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসা-যাওয়া কমিয়ে দিয়েছিলেন।
কবি আল মাহমুদের ভাতিজা মীর রব্বান হোসেন বলেন, কাকা মাঝে-মাঝে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে এলেও নিজ পৈতৃক ভিটাতে থাকেননি প্রায় এক যুগের বেশি সময়। আর অসুস্থতাজনিত কারণে গত কয়েক বছর যাবত তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসেননি। নিজ বাড়িতে যখন আসতেন তখন তার ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের ভিড় লেগে থাকত। গল্প করে অনেক সময় দিতেন। দিনে বেশির ভাগ সময় বসে থাকতেন বাড়ির সামনের পুকুর ঘাটে। বড়শি দিয়ে মাছও শিকার করতেন। তাকে স্থানীয়রা পিয়ারু মিয়া বলে ডাকত। তার আসল নাম মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ।
তার ছোট ভাই মীর ফরহাদ হোসেন মারা গেছেন আরো তার আগেই। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কবি আল মাহমুদের পৈতৃক ভিটা আছে কিন্তু নিজের ঘর নেই। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যখন আসতেন, উঠতেন ছোট ভাইয়ের বাসায়। রব্বান আরও বলেন, কাকার পৈতৃক ভিটায় আগের দিনের একটি চৌচালা ঘর বা রাউডি ঘর ছিল। যখন উনি আসতেন ওই ঘরে অবস্থান করতেন। সেখানে ঘরটি ভেঙে এখন ভবন করা হয়েছে। এতে মনে অনেক কষ্ট পেয়েছেন। এরপর থেকেই উনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া আসা কমিয়ে দিয়েছিলেন।
আল মাহমুদের স্মৃতি চারণ করে তার ছোট বেলার সাথী ভাষা সৈনিক মুহাম্মদ মুসা বলেন, একসাথে আমরা ভাষা আন্দোলন করেছি ৫২ সালে। ছোট বেলা তার খেলার প্রতি আগ্রহ ছিল না আল মাহমুদের। তার বই পড়ার প্রতি আগ্রহ বেশি ছিল। শুধু বই পড়তো। মুক্তিযোদ্ধের সময় তিনি স্বাধীন বাংলা পররাষ্ট্র দপ্তরে চাকরী করতেন। কাবলি বোন বইয়ে তিনি একটি লিখার পর তাকে জেলে প্রেরণ করা হয়। পরে বঙ্গবন্ধু তাকে জেল থেকে মুক্ত করে শিল্পকলা একাডেমীতে প্রকাশনা পরিচালকের দায়িত্ব প্রদান করেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে আসলে আমাকে সাথে নিয়ে ঘুরতেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন