শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

বন্যাসহিষ্ণু ধান উদ্ভাবন

প্রকাশের সময় : ১৬ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ক্রমবর্ধমান চাহিদার সাথে সঙ্গতি রেখে দেশের কৃষির আধুনিকায়নে রাইস রিসার্স ইনস্টিটিউটের দুই বিজ্ঞানী বন্যাসহিষ্ণু ধান উদ্ভাবন করেছেন। দেশীয় প্রজাতির সাদামোটা ও দুধকালাম ধানের সাথে উচ্চ ফলনশীল ধানের সংমিশ্রণে নতুন এজাতের ধান আবিষ্কার করা হয়েছে। এই জাতের ধান আকারে লম্বা হবে এবং প্রবল বন্যায়ও টিকে থাকবে। প্রায় এক যুগের গবেষণার ফল হিসেবে বিজ্ঞানীরা এ ধান উদ্ভাবনে সক্ষম হয়েছে। এর ফলে দেশের বন্যাপ্রবণ বরিশাল, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, ভোলা, বাগেরহাট এবং গোপালগঞ্জে কৃষি সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচিত হলো। ১৯৭২ সাল থেকে এ পর্যন্ত দেশব্যাপী ধান উৎপাদন শতকরা ২৫ ভাগ থেকে ৮০ ভাগে উন্নীত করা গেলেও উল্লেখিত এলাকাগুলো ১৫ ভাগেই রয়ে গেছে। নতুন জাতের ধান সেখানকার ধান উৎপাদন বাড়িয়ে দেবে কয়েকগুণ। নতুন জাতের ধানের উদ্ভাবক হেলাল একটি ইংরেজি দৈনিকের কাছে আশা প্রকাশ করেছেন, নতুন এই প্রজাতির ধান কৃষিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারবে। বারি’র পরিচালক দৈনিকটির কাছে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, আউশ এবং আমন মৌসুমের জন্য আরো দু’টি প্রজাতি তাদের পাইপলাইনে রয়েছে।
আমাদের কৃষিতে পরিবর্তন সময়ের দাবি হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবজনিত বিপর্যয় কৃষি উৎপাদনকে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। ব্যাপারটি যে কেবল বাংলাদেশের জন্যই প্রযোজ্য তা কিন্তু নয়। বিশ্বজুড়েই কৃষি নানা হুমকির মুখে রয়েছে। এ প্রেক্ষিতে আবহাওয়া উপযোগী ধান আবিষ্কারের প্রয়োজনীতা অনস্বীকার্য। আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত সংকট মোকাবিলায় এবং পরিস্থিতির উত্তরণে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ এবং কৃষি সম্প্রসারণ কেন্দ্র ঝুঁকির ধরন অনুসারে অঞ্চলভিত্তিক আবহাওয়া উপযোগী ধানের নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন এবং সেগুলোর কার্যকর আবাদের কৌশল খুঁজে বের করার চেষ্টায় অনেকদিন থেকেই রত। ইতোমধ্যে লবণাক্ততা, পানিমগ্নতা, গরম-ঠা-ার বিরূপ প্রভাব সহনশীল জাতের ধানও তারা উদ্ভাবন করেছেন। বন্যাসহিষ্ণু ধান আবিষ্কার অতীত সাফল্যের নতুন মাত্রা দান করেছে। অস্বীকার করা যাবে না যে, বাংলাদেশের কৃষি বিশেষ করে ধান এখন নানামুখী সমস্যায় রয়েছে। প্রতিবেশীর বৈরী পানি নীতির কারণে ধান উৎপাদনে পুরনো এবং প্রচলিত পদ্ধতি এখন কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। বাংলাদেশের কোন কোন অঞ্চল খরাপীড়িত কোন কোন অঞ্চল বন্যাকবলিত, কোন কোন অঞ্চল লবণাক্ত হয়ে উঠেছে। এই বাস্তবতায় বন্যাসহিষ্ণু উচ্চ ফলনশীল ধানের আবিষ্কার নতুন আশার কথাই শোনাচ্ছে। উল্লেখ করা প্রয়োজন, গবেষণালব্ধ উচ্চ ফলনশীল ধানের কারণে বাংলাদেশ থেকে প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার ধান হারিয়ে গেছে। তবে নতুন উদ্ভাবিত ধানের একটি নতুন দিক হচ্ছে, ঐতিহ্যবাহী দেশীয় ধানের সংমিশ্রণেই তা অবিষ্কার করা হয়েছে। সে বিবেচনায় একে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সম্মিলনও বলা যেতে পারে। একথা এখানে অবশ্যই উল্লেখ করা দরকার, আমাদের ঐতিহ্যবাহী ধানগুলো উচ্চ ফলনশীলতার প্রতিযোগিতায় কুলিয়ে উঠতে না পারলেও এসব প্রতিকূল পরিবেশেও টিকে থাকতে পারত। অবশ্যই একথা কৃষিবিদ, বিজ্ঞানীসহ সংশ্লিষ্টদের ভাবতে হবে যে, ঐতিহ্যবাহী ধান ছিল স্বাস্থ্যবান্ধব। আজ যেসব গবেষণা হচ্ছে সেখানে চাহিদা মেটাবার দিকটিতে যতটা গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে ঐতিহ্য রক্ষা বা স্বাস্থ্যরক্ষার বিষয়টিতে তত গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। ঐতিহ্যবাহী ধানের সাথে মিলিয়ে উদ্ভাবিত নতুন জাতের উচ্চ ফলনশীল ধানের আবিষ্কারের বিষয়টিকে মডেল ধরে দেশীয় স্বাস্থ্যসম্মত ধানের উচ্চফলনশীলতা রক্ষা করা যায় কিনা সেদিকটিতে সংশ্লিষ্টদের নজর দেয়া প্রয়োজন।
নতুনজাতের ধান যারা আবিষ্কার করেছেন আমরা তাদের উষ্ণ অভিনন্দন জানাই। এই ধারা অব্যাহত থাকবে সে প্রত্যাশাও আমরা ব্যক্ত করছি। আবিষ্কারকদের স্বীকৃতিসহ জাতীয় পুরস্কার প্রদান করে উৎসাহিত করা উচিত বলে আমরা মনে করি। এ ধরনের সাফল্য যে কোন মূল্যে ধরে রাখতে হবে। লক্ষ্য অর্জনে গবেষকদের যেসব সুযোগ-সুবিধা দেয়া প্রয়োজন তা সরকারকে দিতে হবে। সেই সাথে কৃষি ও কৃষকের স্বার্থ রক্ষার্থে সংশ্লিষ্ট সবাই আন্তরিক হবেন বলেও আমরা মনে করি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন