স্টাফ রিপোর্টার : ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ভবনটি খালি করার জন্য কেন্দ্র থেকে নির্দেশ দেয়ার পর বিপাকে পড়েছে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগসহ দলটির সব সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনগুলো। কারা কোথায় অফিস নেবে এ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না কেউ।
স্থান সঙ্কুলানে সমস্যা থাকলেও দীর্ঘদিন সংগঠনগুলো এই পুরাতন জরাজীর্ণ ভবনটিতেই ঠাসাঠাসি করে অবস্থান করছিল। এমনকি কক্ষ খালি না পেলে সপ্তাহে অন্ততঃ একদিন কার্যালয়ে বসতো কিছু সংগঠন।
কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ভবনটিতে অফিস রয়েছে ঢাকা-মহানগর আওয়ামী লীগ, দলটির সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগ, আওয়ামী যুবলীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, তাঁতী লীগ। নির্দিষ্ট কোন কক্ষ না থাকায় সপ্তাহে একদিন এখানে অফিস করে মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ। ছাত্রলীগেরও অফিস রয়েছে এখানে। তৃতীয় তলায় আওয়ামী ওলামা লীগেরও অফিস রয়েছে। সেখানে প্রতিদিন বাদ জোহর এবং আছরের নামাজ আদায় করেন অনেকে। এছাড়া রিকশা মালিক-শ্রমিক সমিতির মতো সংগঠনেরও এখানে বসতে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে ঢাকা-মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ বলেন, আমরা অফিস দেখতেছি। এখন পর্যন্ত কোথায় স্থানান্তর করবো বলতে পারছি না। সিদ্ধান্ত হলে আপনাদেরকে জানাব।
শ্্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমরা এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারি নাই কোথায় অফিস নেয়া হবে। তবে চাচ্ছি কোনো খালি বাড়ি পেলে সবাই এক জায়গাতে অফিস নেব।
যুবলীগ শিগগির বৈঠক করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা ও প্রিন্ট মিডিয়ার সমন্বয়কারী মনিরুল ইসলাম হাওলাদার। তিনি জানান, আমরা চেষ্টা করছি এই এলাকাতেই (গুলিস্তান) অফিস খুঁজে পেতে।
আর যুব মহিলা লীগ ধানমন্ডি-৩ এ আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ের আশেপাশে কোথাও খুঁজছে। না পাওয়া গেলে সভাপতির কার্যালয়ের তিন তলায় একটি কক্ষে সাময়িকভাবে সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করার চিন্তাভাবনা আছে বলে জানান সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল।
কৃষক লীগ আওয়ামী লীগের সঙ্গেই থাকতে চায়। আর না হলে গুলিস্তানেরই কোথাও তারা অফিস নেবেন বলে জানালেন সাধারণ সম্পাদক খন্দকার শামসুল হক রেজা।
ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, তারা গুলিস্তানের আশেপাশে কোথাও অফিস নেয়ার চিন্তা-ভাবনা করছেন। যদিও এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। আর আওয়ামী ওলামা লীগের একাংশের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা দেলোওয়ার হোসেন জানান, দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের দেয়া ঘোষণার পরপরই আমরা অফিস দেখতে শুরু করেছি। ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ যেহেতু সবার কাছেই পরিচিত এবং যাতায়াত ব্যবস্থাও ভালো। তাছাড়া আলেম-ওলামাদের বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে যাতায়াত করতে সুবিধা। তাদের কথা মাথায় রেখেই অফিস খোঁজা হচ্ছে।
এর আগে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডি রাজনৈতিক কার্যালয়ে গত ২৬ এপ্রিল এক যৌথসভায় দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, আগামী ৩০ মে তারিখের মধ্যে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ভবনটি খালি করা হবে। আগামী জুন মাসে পুরাতন ভবনটি ভেঙে নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হবে। দুই বছরের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে তারা আশা করছেন।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, পুরনো ভবন ভেঙ্গে ফেলে নতুন করে ১০তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মিত হবে এ স্থানে। গত ২৬ এপ্রিল মঙ্গলবারই রাজউকের পক্ষ থেকে দলের সভাপতি শেখ হাসিনার নির্বাচিত নকশাটি অনুমোদন দেয়া হয়। রাজউকের অনুমোদনের পরপরই সৈয়দ আশরাফ ভবন খালি করার জন্য দলের সকল সংগঠনের প্রতি নির্দেশ দেন।
প্রসঙ্গত, বহুতল ও দৃষ্টিনন্দন আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত ভবন নির্মাণের স্বার্থে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়টি খালি করবে বেধে সময়ের মধ্যে। সৈয়দ আশরাফ বলেন, গত ৬ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত প্রধান অফিসের নকশা অনুমোদন করেন। প্রধান কার্যালয়টি নির্মিত হবে বর্তমান ঠিকানা ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, ঢাকায়। এমতাবস্থায় এই স্থান থেকে আওয়ামী লীগের এবং অন্য সংগঠনের অফিস সরিয়ে দিতে অনুরোধ জানান আশরাফ। বর্তমান ভবনটি খালি হওয়ার পর সেটি ভাঙার কাজ শুরু হবে।
আশরাফ বলেন, রাজউক অনুমোদিত নতুন ভবনের নকশা অনুযায়ী ভবন নির্মাণের কাজ শেষ করা হবে। তারা আশা করছেন, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে মূল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা যাবে। আধুনিক প্রযুক্তিতে ভবন নির্মাণে দুই বছরের বেশি সময় লাগবে না।
তিনি বলেন, এটা আমাদের নিজস্ব ভবন। স্থানটিও আমাদের নিজস্ব। এটা আওয়ামী লীগের সম্পদ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন