তিনদিনের ছুটিতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে প্রকৃতির রাণী রাঙামাটি। এই সুবাধে এলাকার অর্থনীতি চাঙ্গা হচ্ছে। স্থানীয়দের মাঝে পর্যটক আতিথিয়েতার আগ্রহও বাড়ছে। গত তিনদিনে পর্যটন খাতে রাঙামাটির বিভিন্ন সেক্টরে আয় হয়েছে প্রায় দুই কোটি টাকা। অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে অর্জিত আয় রাঙামাটির ঝিমিয়ে পড়া পর্যটন খাতকে আকর্ষণীয় করে তুলছে। নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যের অপরূপ এ পাহাড়ী অঞ্চলে পর্যটকদের জন্য রয়েছে মনোলোভা আকর্ষণীয় উপাদান। কাপ্তাই হ্রদ ও পাহাড়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে দেশী-বিদেশী অনেক পর্যটক এখন রাঙামাটিতে। তিনদিনের ছুটির অফুরন্ত সময়গুলো একান্তে কাটানোর লক্ষ্যে রাঙামাটিতে প্রায় দুই লাখ পর্যটকের আগমন ঘটেছে। আঞ্চলিক রাজনীতির অপতৎপরতায় চরম বিপর্যয়ে থাকা রাঙামাটির অর্থনীতির গতি ফিরতে শুরু করায় আশার সঞ্চার হচ্ছে ব্যবসায়িদের মাঝে।
সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, হ্রদ-পাহাড়ের আলিঙ্গনবদ্ধ ঝুলন্ত সেতুর শহর রাঙামাটিতে আগত পর্যটকদের মাধ্যমে জেলার আবাসিক হোটেল, মোটেল, পর্যটন স্পটগুলোর পাশাপাশি যাত্রীবাহি বাস, মিনিবাস, মাইক্রো বাস, প্রাইভেট কার, অটোরিক্সা, লঞ্চ, বড় বোট, স্পি্ড বোট, দেশীয় ইঞ্জিন বোট, মোবাইল কোম্পানী ও বেসরকারী ব্যাংকগুলোর মোবাইল লেনদেন, স্থানীয় রেষ্টুরেন্ট ব্যবসায়ি, টেক্সটাইল ব্যবসায়িসহ স্থানীয় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যবসায়িদের মাধ্যমে তিন দিনে শুধুমাত্র পর্যটন খাতেই পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে আয় হয়েছে ২ কোটি টাকা।
রাঙামাটি পর্যটন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়–য়া জানিয়েছেন, বৃহস্পতি, শুক্রবার ও শনিবার তিনদিনে পর্যটন কর্পোরেশনের ভেতরেই অন্তত ১৫ হাজার পর্যটক সেবাগ্রহণ করেছেন। তিনি জানান, আমাদের তিনদিনে প্রায় ২৩ লাখ টাকা আয় হয়েছে। তার মধ্যে ৬ লাখ টাকা প্রবেশ মূল্য বাবদ আয় হয়েছে। এছাড়াও প্রতিদিনই হাজারো পর্যটক ঝুলন্ত সেতু দেখতে পর্যটন এলাকায় আসা যাওয়া করছে।
রাঙামাটি শহরে সবগুলো আবাসিক হোটেলে প্রতিদিন প্রায় ১৫ হাজার পর্যটক রাত্রীযাপন করতে পারে এমন তথ্য জানিয়ে আবাসিক হোটেল প্রিন্সের পরিচালক নেছার আহাম্মেদ বলেন, গত কয়েকদিনে রাঙামাটিতে আগত দেশী-বিদেশী পর্যটকদের মাধ্যমে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা আয় হয়েছে। রাঙামাটি পরিবহণ ব্যবসায়িদের নেতা মঈন উদ্দিন সেলিম জানিয়েছেন, আগত পর্যটকদের মাধ্যমে জেলার পরিবহণ খাতে সব মিলিয়ে (অটোরিক্সা ছাড়া) প্রায় ৪০ লাখ টাকা আয় হয়েছে।
রাঙামাটিতে বেড়াতে আসা পর্যটকরা অত্রাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহি পোশাক ও বেইনের তৈনি কাপড় এবং স্থানীয় পাহাড়িদের মাধ্যমে তৈরিকৃত ব্যাগ সংগ্রহ করেন। স্থানীয় টেক্সটাইল ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে গত দুই দিনে ২০ লাখ টাকার জিনিসপত্র বিক্রি হয়েছে।
এদিকে রাঙামাটির পর্যটন খাতে নতুন মাত্রা যোগ করা পলওয়েল পার্কে ব্যাপক হারে পর্যটকের আগমন ঘটছে বলে জানিয়েছেন রাঙামাটির পুলিশ সুপার মো. আলমগীর কবির। পুলিশের মাধ্যমে পরিচালিত পলওয়েল পার্কটিকে শহরের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করার কারিগর পুলিশ সুপার জানান, আমি রাঙামাটিতে যোগদান করার পর পলওয়েল পার্কটিকে নতুনভাবে সাজানোর কাজ শুরু করি। এরই মধ্যে পলওয়েল পার্ক রাঙামাটির অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রের স্বীকৃতিও পেয়েছে।
একুশে ফেব্রুয়ারী ও দুই দিনের সরকারী ছুটিতে রাঙামাটিতে প্রতিদিন এক লাখ পর্যটক প্রবেশ করছে। তার মধ্যে অর্ধেক পর্যটক দিনের মধ্যেই ফিরে গেছে ও অন্তত ২৫ হাজার পর্যটক রাতে জেলা থেকে বের হয়ে গেছে। কিন্তু অপর ২৫ হাজারের মতো পর্যটক রাঙামাটিতে থেকে গেছে। রাঙামাটি শহরের সব কয়টি আবাসিক হোটেল, মোটেল ও কটেজে ধারণ ক্ষমতানুসারে রাত্রী যাপন করতে পারে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার পর্যটক। বাকি পর্যটকদের শহরের বিভিন্ন প্রান্তে রাস্তায়ই রাত কাটাতে হচ্ছিলো।
রাঙামাটিতে আগত পর্যটকদের জন্য ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন। রাঙামাটির পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, আমাদের এখানে আগত পর্যটকদের জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এছাড়াও সাদা পোশাকের পাশাপাশি পোশাকী পুলিশের উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে। পুলিশ সুপার জানান, আমাদের এখানে পর্যাপ্ত পরিমানে আবাসন ব্যবস্থা না থাকায় আগত পর্যটকদের একটি বিরাট অংশ এখানে রাত্রীযাপন করতে পারে না। গত দুই দিনে জেলা শহরে অনেক পর্যটককে কোতয়ালী থানা পুলিশের তত্বাবধানে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে হোটেলে সিট না পাওয়া পর্যটকরা যাতে হয়রানির শিকার না হয় এবং তাদেরকে নিরাপদে থাকার ব্যবস্থা করতে সারারাতই রাস্তায় পুলিশের কয়েকটি টিমকে ডিউটিতে রাখা হয়। রাঙামাটির পুলিশ সুপারের নির্দেশে কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ মীর জাহেদুল আলম রনির তত্বাবধানে পুলিশ সদস্যরা সারারাত সজাগ থেকে পর্যটকদের খোঁজ নিয়েছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন