মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

অজ্ঞাত রোগে এক পরিবারে ৫ মৃত্যু

ঘটনাস্থল ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গি উপজেলা : এলাকায় আতঙ্ক, কেউ ওই বাড়িতে যাচ্ছে না

রুবাইয়া সুলতানা (বাণী), ঠাকুরগাঁও থেকে | প্রকাশের সময় : ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙি উপজেলায় অজ্ঞাত রোগে একই পরিবারের ৫ সদস্যের অকাল মৃত্যুতে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রথমে পরিবারে স্বামীর মৃত্যু হয়। এরপর স্ত্রী, দুই ছেলে ও জামাতার মৃত্যু ঘটে। পরিবারের এক পুত্রবধূ ও নাতনীকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
উপজেলার ধনতলা ইউনিয়নের মরিচপাড়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। ধনতলা ইউনিয়নের চিকিৎসকরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন ওই পরিবারের ৫ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে অজ্ঞাত ভাইরাসের কারণে। এক এক করে মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় সবার মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ওই বাড়ির আশপাশের লোকজন অন্যত্র পালানোর চেষ্টা করছেন।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি আবু তাহের (৫৫) হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। আবু তাহের বয়স্ক হওয়ায় বিষয়টি তেমন গুরুত্বের সঙ্গে তার পরিবার দেখেনি। এরপর গত ২০ ফেব্রুয়ারি আবু তাহেরের একমাত্র মেয়ে মরিয়মের স্বামী ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া ইউনিয়নের কুজিশহর ঘুরনগাছ গ্রামের কহিম উদ্দীনের ছেলে হাবিবুর রহমান ছুটু (৩৫) মারা যায়।
পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ওই দিন সকাল ৯টার দিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাপাতালে ছুটুর মৃত্যু হয়। এই খবর বাড়িতে পৌঁছার কিছুক্ষণের মধ্যে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন আবু তাহেরের স্ত্রী হোসনে আরা বেগম (৪৫)। বাবার পর ভগ্নিপতি এবং মায়ের মৃত্যুর শোক কাটতে না কাটতে দুই ছেলে ইউসুফ আলী (২৭) ও মেহেদী হাসান (২৪ ) এক পুত্রবধূ ও এক নাতনী অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।
গত রোববার সকালে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে ইউসুফ মারা যায়। মেহেদীর মৃত্যু হয় ওই রাতেই রংপুর মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায়। পরিবারের পিতা-মাতা ২ ছেলের মৃত্যুতে কান্না করার মতো কেউ অবশিষ্ট রইলো না। ইউসুফের স্ত্রী কোহিনুর বেগম তার একমাত্র কন্যা সন্তান থাকলেও তারা একই রোগে আক্রান্ত হয়ে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।
গত রোববার বিকালে তাদের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। আর একজন আছেন আবু তাহেরের মেয়ে মরিয়ম বেগম অর্থাৎ বিদেশ ফেরত হাবিবুর রহমানের স্ত্রী। এক ছেলে এক মেয়ে নিয়ে মরিয়ম বেগম শ^শুর বাড়িতে শোকে কাতর হয়ে পড়েছেন। বর্তমানে বাড়িটি একেবারে সুনসান হয়ে পড়েছে। ভয়ে এলাকার কেউ ওই বাড়িতে যাচ্ছে না। সবাই নিরাপদ দুরত্বে অবস্থান করছেন।
এলাকার লোকদের আশঙ্কা, আবু তাহেরের জামাতা হাবিবুর ৬ বছর দুবাইয়ে ছিলেন। তিনি ৬ মাস আগে দেশে ফেরেন। তিনি বিদেশ থেকে ওই ভাইরাসের জার্ম বহন করে নিয়ে এসেছেন বলে দাবি এলাকাবাসীর। বালিয়াডাঙ্গী থানার ওসি মোসাব্বেরুল হক জানান, মোবাইল ফোনে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন এটি ব্রেইনের ভাইরাস। তারপরও পুলিশ গুরুত্বের সঙ্গে খোঁজ-খবর নিচ্ছে।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান মাসুদ বলেন, ঘটনা জানার পর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফিরোজ জামান জুয়েলকে জরুরিভিত্তিতে বিষয়টি দেখার জন্য বলা হয়েছে। তিনি ইউসুফ আলীর প্রেসক্রিপশন সংগ্রহ করেছেন। কী কারণে এমন ঘটনা ঘটছে তা বিশেষজ্ঞ মতামত ছাড়া আপাতত বলা যাচ্ছে না। ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম ইনকিলাবকে বলেন, ঘটনার কথা শুনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের সিভিল সার্জনকে অবহিত করা হয়েছে।
এদিকে যোগাযোগ করা হলে সিভিল সার্জন ডা. খায়রুল কবির ইনকিলাবকে জানান, ইনন্সেপফালিটিস রোগে আক্রান্ত হয়ে ওই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ঢাকায় বিশেষজ্ঞদের সাথে হয়েছে। তারা আজকালের মধ্যে এসে বিষয়টি পর্যবেক্ষণসহ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবেন। তারপরই মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন