শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

রাস্তা অবরোধে জনভোগান্তি ও পুলিশি ব্যর্থতা কাম্য নয়

| প্রকাশের সময় : ১ মার্চ, ২০১৯, ১২:১১ এএম

এক শিশু নিখোঁজ ও অপমৃত্যুর পর পুলিশের মামলা না নেয়া এবং অপরাধীদের গ্রেফতারে পুলিশের নিস্ক্রিয়তার প্রতিবাদে স্থানীয় বাসিন্দাদের রাস্তা অবরোধের কারণে উত্তরা-বিমানবন্দর সড়কসহ আশপাশের সবগুলো ব্যস্ত সড়ক বুধবার সারাদিন তীব্র যানজটে স্থবির হয়ে পড়ে। প্রকাশিত খবরে জানা যায়, দক্ষিণ খান এলাকায় একটি বাড়ির ছাদে শিশু রিফাত ঘুড়ি উড়ানোর সময় ঘুড়িটি ছিড়ে পাশের বাড়ির মালিকের উপর পড়ে, শিশুটি ঘুড়িটি ফেরত আনতে সেখানে গেলে তাকে বাড়ির ভেতর ডেকে নিয়ে গলাটিপে হত্যা করে পানির ট্যাংকিতে ফেলে দেয়া হয়। এদিকে শিশু রিফাতকে না পেয়ে তার পরিবারের সদস্যরা থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। শিশুটিকে উদ্ধার করতে থানা পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগই নেয়া হয়নি বলে জানা যায়। পরের দিন বাড়ির ট্যাংকির ভেতর থেকে রিফাতের লাশ পাওয়ার পরও দক্ষিণ খান থানার ওসি তপন চন্দ্র সাহা অভিযুক্ত অজিত কুমারের বিরুদ্ধে মামলা নিতে না চাওয়া এবং আসামী গ্রেফতার না করার প্রতিবাদে বুধবার সকাল থেকে স্থানীয় শত শত মানুষ গুরুত্বপূর্ণ উত্তরা-বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। এতে বিমানবন্দর সড়ক, রাজলক্ষী, আজমপুরসহ আশপাশের সব রাস্তাসহ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহন ও যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পতিত হয়।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ছাড়াও এ রাস্তা অন্তত ১৭টি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহৃত হয়। একটি শিশু নিখোঁজ হওয়া ও অপমৃত্যুর মত স্পর্শকাতর ঘটনার পর পুলিশের নিস্ক্রীয়তা ও অসহযোগিতার কারণে স্থানীয় জনগণের বিক্ষোভ করা কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অবরোধ করার ফলে স্কুল-কলেজের হাজার হাজার শিক্ষার্থী, কর্মজীবী নারী-পুরুষ, নগরীর এবং বিভিন্ন জেলায় যাতায়াতকারী হাজার সাধারণ যাত্রী সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়ে। এ ক্ষেত্রে পুলিশ ন্যুনতম দায়িত্ব পালনেও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। প্রথমত: শিশু রিফাত নিখোঁজ ও অপমৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ তার দায়িত্ব পালনে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। দ্বিতীয়ত: বিমানবন্দর সড়কের মত একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে অবরোধ করে রাখা হলেও অবরোধকারিদের সরিয়ে রাস্তাটিকে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতেও ব্যর্থ হয়েছে। আগের দিন পুলিশ মামলা নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করলে বিমানবন্দর সড়কে এমন অবরোধ বা জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হত না।
জনসাধারণের বিক্ষোভ- মানববন্ধন ও রাস্তা অবরোধের প্রেক্ষাপটে মামলা গ্রহণ করা হলেও কোনো আসামী গ্রেফতার করতে পারে নি পুলিশ। যে কোনো হত্যা বা অপমৃত্যুর ঘটনায় মামলা ও পুলিশি অ্যাকশন নাগরিকের সাধারণ অধিকার। এর জন্য হাজার হাজার মানুষের চলাচলে বিঘ্ন ও চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি করে রাস্তা অবরোধ করতে হবে কেন? অন্যদিকে বিরোধীদলের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে রাজনৈতিক কর্মসূচি পন্ড করতে পুলিশকে অতিমাত্রায় সক্রিয় ও তৎপর দেখা গেলেও গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে অবরুদ্ধ রাখার পরও পুলিশের নিস্ক্রিয়তা মেনে নেয়া যায় না। পুলিশের দায়িত্বহীনতার কারণে রাস্তা অবরোধের মত ঘটনার উদ্ভব হয়। মানব বন্ধন ও রাস্তা অবরোধের শুরুতেই মামলা গ্রহণ ও আসামী গ্রেফতার বা আশ্বাস দেয়া হলে এ ধরনের ঘটনা এড়ানো যেত। রাস্তায় গাড়ী দুর্ঘটনা, গার্মেন্টস কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ ইত্যাদি ঘটনায় রাস্তা অবরোধ এবং গাড়ি ভাংচুর সাধারন ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এতে জন ভোগান্তি চরমে ওঠে। অথচ সাধারন মানুষের সঙ্গে ওই অবরোধের কোনই সম্পর্কই নেই। তাহলে কেন তারা এই দুর্ভোগের শিকার হবে? এ ধরনের যে কোনো ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ লোকদেরকে রাস্তা অবরোধ করে অসংখ্য মানুষের জন্য দুর্ভোগ শুধু জনদুর্ভোগই সৃষ্টি হয় না, দেশের অর্থনীতিরও বড় রকমের ক্ষতি ডেকে আনে। এ ক্ষেত্রে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সক্ষম হতে হয়। কোনো অপ্রাসঙ্গিক ঘটনা বা দুর্ঘটনার পর সড়ক-মহাসড়কে অবরোধ ও যান চলাচল বিঘি্নত করার এমন প্রবণতা সমর্থণযোগ্য নয়। এ থেকে সংশ্লিষ্ট সকল মহলকে বিরত থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আরো দক্ষ ও দায়িত্বশীল ভুমিকা প্রত্যাশা করি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন