শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

শুষ্ক মৌসুমেও যমুনায় ভাঙন

সৈয়দ শামীম শিরাজী, সিরাজগঞ্জ থেকে : | প্রকাশের সময় : ১ মার্চ, ২০১৯, ১২:১০ এএম

নদীর একূল ভাঙ্গে, ওকূল গড়ে এইতো নদীর খেলা। সত্যিই বিচিত্র এই যমুনা, আরো বিচিত্র এর গতি পরিবর্তন। বর্ষায় যেমন নদী ভাঙে আবার পানি শুকিয়ে যাওয়ার টানে নদী ভাঙ্গে। এই শুষ্ক মৌসুমেও তাই থেমে নেই সিরাজগঞ্জ সদর কাজিপুর উপজেলা ও চৌহালি উপজেলা নদীর ভাঙন। কখন নদী ভাঙে আর কখন সব গোটাতে হয় সেই চিন্তায় অস্থির থাকে নদী তীরের বাসিন্দাগণ।
জানা গেছে, সিরাজগঞ্জ সদরে বাহুকা চৌহালি ও কাজিপুরে এই শুষ্ক মৌসুমে নদী ভাঙছে। যমুনা নদীর ভাঙন থেকে সিরাজগঞ্জ সদর ও কাজিপুর উপজেলার মানুষকে রক্ষার জন্য ৪৬৫ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মানাধীন বাঁধের ৩০ মিটার এলাকা ধসে গেছে। অপরদিকে ১০৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত চৌহালি শহর রক্ষা বাধে প্রায় ৯০ মিটার এলাকায় ধস নেমেছে। গত বুধবার অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন এবং নিম্ন মানের কাজের ফলে এমনটি হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে ধসে যাওয়া স্থানে পানির প্রবল স্রোত থাকার কারণে এমনটি হয়েছে। ধসে যাওয়া স্থানের ভাটি এলাকায় দ্রুত ড্রেজিং করা হলে এমনটি হবে না।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থ বছর থেকে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ২৪’শ এবং কাজিপুর উপজেলা অংশে ১৬’শ মিটারসহ মোট ৪ হাজার মিটার এলাকা জুড়ে যমুনা নদীর ডান তীর রক্ষা প্রকল্প কাজ শুরু হয়েছে। এই কাজের সমাপ্তির জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৬৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে তীর রক্ষার কাজে ১০টি প্যাকেজে ২০৭ কোটি এবং ড্রেজিং কাজের জন্য বাকি টাকা ব্যয় হবে। কিন্তু নিম্ন মানের সামগ্রী এবং নদীর তীরবর্তী প্রকল্প এলাকা থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রির কারণে বাঁধ এলাকা প্রতিনিয়ত হুমকির মুখে পড়ছে। ফলে সিরাজগঞ্জ ও কাজিপুর উপজেলার মধ্যেবর্তী স্থান বাহুকাতে নির্মাণাধীন বাঁধের ৩০ মিটার এলাকা আকস্মিক ভাবে ধসে যায়। পরে ওই পাশে বর্তমানে কাজ বন্ধ রেখেছে পাউবো।

স্থানীয় প্রভাবশালী হাকিম নামে এক ব্যক্তি প্রতিদিন বাঁধের গোড়ার অংশ থেকে ট্রাক যোগে অবৈধ ভাবে বালু কেটে বিক্রি করায় এখন পুরো বাঁধ এলাকা হুমকিতে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।

এ নিয়ে নদীর তীররক্ষা কাজের ৯ এবং ১০ নং সাইডের কাজে তদারকির দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারি প্রকৌশলী জাকির হোসেন বালু বিক্রি কেন হচ্ছে এবং কি কারণে বাঁধের কাজ শেষ না হতেই ধসে পড়লো তার কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।

সিরাজগঞ্জ স্বার্থরক্ষা সংগ্রাম কমিটির নেতা কমরেড নব কুমার কর্মকার বলেন, স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জেনেছি চলমান তীর সংরক্ষণ কাজে ব্যবহৃত জিওম্যাট নিম্ন মানের হওয়াতে পানি লিকেজ করে বাঁধ ধসে গেছে। একটি চলমান কাজের সমাপ্তি না হওয়ার আগেই ধস দেখা দেয়াতে স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করবে এটাই স্বাভাবিক। আমরা এই কাজের ত্রুটির সাথে দোষীদের চিহ্নিত করে আইনী ব্যবস্থার দাবি জানাই।
অপরদিকে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম নির্মাণাধীন বাঁধ ধসের কথা স্বীকার করে বলেন, নদী বা বাঁধ এলাকা থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে স্থানীয়দের বেশি সোচ্চার হতে হবে। ধসে যাওয়া বাঁধ এলাকায় নদীর গভীরতা ও স্রো দুটোই প্রবল হওয়াতে ধসে গেছে। তার মতে, তীর সংরক্ষণ কাজের যেকোন অংশে যেকোন সময় ধসতে পারে। এখন শুষ্ক মৌসুম তাই আতঙ্কিত হবার কিছু নেই। বিষয়টি দ্রুত মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হবে। তবে নিম্ন মানের জিও ব্যাগসহ অন্যান্য সামগ্রী ব্যবহার বিষয়টি এড়িয়ে যান।
এ ব্যাপারে চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহা. আবু তাহির জানান, ধসে যাওয়ার ঘটনা শুনেছি। তবে নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকায় ধস এলাকা পরিদর্শনে যেতে পারিনি। তিনি আরও বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা নেয়া হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন