মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে টেকনাফ সীমান্ত কেন্দ্রীক ইয়াবা কারবারীদের সিন্ডিকেট অনেকটা ভেঙে পড়েছে। তবে অনেকেই রুট পরিবর্তন করে ব্যবসা এখনো চালিয়ে যাচ্ছেন। ২০১৮ সালের ৪মে থেকে দেশব্যাপী মাদকবিরোধী যে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়েছে তা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এই অভিযানে টেকনাফ কক্সবাজার এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে বন্দুকযুদ্ধে অথবা নিজেদের মধ্যে সংর্ঘষে ৫০ জন মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করে ১০২ জন। এর মধ্যে ছিল সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির কয়েকজন আত্মীয়-স্বজনও। এদিকে এই আত্মসমর্পণের পরও বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে বেশ কয়েকজন। ফলে অনেকে আবারো আত্মসমর্পণের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন বলে জানা গেছে। সূত্র মতে, টেকনাফে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের মধ্যে আরও অন্তত ৫০ জন আত্মসমর্পণ করতে চায়।
প্রথম দফায় আত্মসমর্পণ করা ১০২ জনের সম্পদের খোঁজ নিতে সরকারের সংশ্নিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিচ্ছে পুলিশ। এ ছাড়া আত্মসমর্পণের দিন তাদের বিরুদ্ধে করা মামলায় কিভাবে আইনি সহায়তা দেয়া যায়, সে ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। গত শুক্রবার একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য জানায়।
কক্সবাজার পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন বলেন, প্রথম দফায় আত্মসমর্পণের আগে অনেকের মধ্যে ধারণা ছিল পরবর্তী সময়ে কী-না কী ঘটে। তবে বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে নিয়ে আরও অনেকে আত্মসমর্পণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। গত ১৬ ফেব্রæয়ারি পর শুধু টেকনাফে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে ৮ জন। এর মধ্যে সর্বশেষ শুক্রবার ভোরে চারজন নিহত হয়েছে। গত এক বছরে টেকনাফেই ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে ৪২ জন।
আত্মসমর্পণের পরবর্তী পরিস্থিতি কী হয় এ নিয়ে টেকনাফে নানামুখী আলোচনা ছিল। যারা আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়ার বাইরে ছিল তাদের ব্যাপারে কী ধরনের নীতি গ্রহণ করা হয়, তা নিয়ে ছিল অনেক জল্পনা-কল্পনা। তবে আত্মসমর্পণের পরও একের পর এক ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনায় ইয়াবা ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক আরো বেড়ে গেছে।
জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, দ্বিতীয় দফায় অনেকে ইয়াবা ও অস্ত্র ছাড়া আত্মসমর্পণ করতে চায়। তাদের ধারণা, ইয়াবা ও অস্ত্র নিয়ে আত্মসমর্পণ করলে আইনি ঝামেলায় পড়তে হবে। তবে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এরই মধ্যে আত্মসমর্পণকারীদের পুনর্বাসনে উদ্যোগ নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সংশ্নিষ্টরা বলছেন, সরকার মাদকের ব্যাপারে কঠোর নীতি নিলেও ইয়াবা ব্যবসায়ীদের তৎপরতা থেমে নেই। তবে টেকনাফ ঘিরে ইয়াবার রমরমা কারবার আগের তুলনায় অনেক কমেছে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র জানায় আত্মসমর্পণের পর তাদের ব্যাপারে পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া কী হয়, সেদিকে নজর রাখছে অনেকেই। বিশেষ করে তালিকাভুক্ত যেসব ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণ করেনি তারাই বেশি খোঁজ নিচ্ছে। আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এরা দ্রুত কারাগার থেকে ছাড়া পেলে আরও অনেকে আত্মসমর্পণ করতে আগ্রহী হবে। এর মধ্যে বিদেশে পলাতক তালিকাভুক্ত ইয়াবা গডফাদাররাও এ বিষয়ে তথ্য নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, আত্মসমর্পণের সুযোগ দেয়া হলেও নিয়মিত অভিযানে কোনো ধরনের শিথিলতা থাকবে না। আত্মসমর্পণের আওতায় না এসে কৌশলে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করলে তাদের পরিণতি হবে ‘ভয়াবহ’। যেকোনো মূল্যে ইয়াবা কারবার বন্ধ করবে সরকার- এই বার্তা দিতে চায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সরকারের কয়েকটি সংস্থা মাদক ব্যবসায়ী ও তাদের মদদদাতা, সহযোগীদের তালিকা তৈরি করেছে। এ তালিকায় কক্সবাজারেই ১ হাজার ১৫১ জনের বিরুদ্ধে পাঁচশ’র মতো মামলা রয়েছে। তালিকায় থাকা যারা এখনও আত্মসমর্পণ করেনি তাদের মধ্যে রয়েছে- সাবেক এমপি বদির ভাই মজিবুর রহমান, নির্মল ধর, রোহিঙ্গা মোহাম্মদ আলম, ডাকাত আবদুল হাকিম, সাইফুল, মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, মোহাম্মদ জাফর আহমদ, মোহাম্মদ জাফর, সাইফুল করিম, মোহাম্মদ শাহজাহান, মোহাম্মদ ইলিয়াছ, মোহাম্মদ রফিক, মোহাম্মদ আজিজ, নুর কামাল, মোহাম্মদ মুজিব, আবদুর রহমান, রাশেদ মাহামুদ আলী, মাহাবুব মোর্শেদ, এসকে আনোয়ার, আবুল হোসেন, আবদুল হামিদ, মোহাম্মদ হেলাল, মোহাম্মদ হুমায়ুন প্রমুখ।
একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এখন মিয়ানমার থেকে সরাসরি সমুদ্র পথে ও অন্যান্য রুটে কক্সবাজার, মহেশখালী, চট্টগ্রাম, পতেঙ্গা, আনোয়ারা, কুমিল্লা, সিলেটসহ বিভিন্ন এলাকায় ইয়াবা পৌঁছানো হয়। এর সঙ্গে মিয়ানমারের একটি সংঘবদ্ধ চক্র জড়িত। গত ২১ ফেব্রুয়ারি এ চক্রের ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে কোস্টগার্ড। যাদের কাছে পাওয়া গেছে ১ লাখ ইয়াবা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন