বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বাস্থ্য

স্বাস্থ্য রক্ষায় ডাব

প্রকাশের সময় : ১৮ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ঋতু চক্রের পরিক্রমার এখন চলছে গ্রীষ্মকাল। প্রখর সূর্যের তাপে পরিবেশের চারদিকে খাঁ খাঁ করছে। সকল জীবই প্রচ- গরমে হাফিয়ে উঠে। মানুষ অত্যন্ত গরমে ঘামতে থাকে এবং তৃষ্ণার্ত হয়ে ওঠে। একটু ঠা-া তৃষ্ণা নিবারণের জন্য নানা পানীয় বা রাস্তাঘাটে ফুটপাতে হকারদের বাহারি শরবত খেয়ে থাকে। যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। বাজারের নানা খোলা খাবার মানব দেহের নানা রোগের উৎস। বিশেষ করে রাস্তার আশপাশের শরবত খেয়ে শিশু-কিশোর ও বয়স্করা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। তাছাড়া গ্রীষ্মের তৃষ্ণা নিবারণের জন্য বাজারে এনার্জি ড্রিংক নামে খ্যাত নানা পানীয় পান করে। তা মোটেই স্বাস্থ্যের জন্য মঙ্গলজনক নয়। কোনো না কোন ক্ষতি শরীরের করছে। হয়ত আমরা তা বুঝে উঠতে পারছি না। তাই এই গরমে তৃষ্ণা নিবারণের জন্য আল্লাহর দেয়া অফুরন্ত নিয়ামত ডাবের পানি সর্বশ্রেষ্ঠ পানীয়। কিছু রোগী ছাড়া সকলের জন্য অত্যন্ত উপকারী ডাবের পানি। ডাবের পানি প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম, ক্লোরাইড, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফেট প্রচুর পরিমাণে থাকে। মানুষ যখন প্রচুর পরিমাণে ঘামে তখন শরীর হতে ঘামের সাথে খনিজ লবণ বের হয়ে যায়। আবার বমি হলে মানুষের রক্তে পটাশিয়ামের পরিমাণ কমে যায়। ডায়রিয়া হলে শরীর হতে প্রচুর পানি ও খনিজ লবণ বের হয়ে যায়। এতে মানুষের শরীর মারাত্মক দুর্বল হয়ে যায়। গরমের কারণে আমাদের শরীর হতে যেসব উপাদান বের হয়ে যায়। তার বেশিরভাগ উপাদান ডাবের পানিতে রয়েছে। তাই ডাবের পানীয় শ্রেষ্ঠ পানীয় এবং এ পানিতে আছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, যা অনেক জটিল রোগ থেকে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। ডাবের পানিতে ৯৫ শতাংশই পানি। আর আমাদের শরীরে শতকরা ৭০ ভাগই পানি। সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি খাওয়া দরকার। ডাব উদ্ভিদ জগতের অৎবপধপবধব গোত্রের বা চধষসধব পরিবারের একটি উদ্ভিদ। ইংরেজি নাম ঈড়পড়হঁঃ বাংলায় কাঁচা অবস্থায় ডাব আর পরিপক্ব হলে নারিকেল। বৈজ্ঞানিক নাম ঈড়পড়ং হঁপভবৎধ ডাবের পানিতে দ্রবণীয় একটি গ্যালাকট ম্যাননান থাকে। টাটকা শাঁসে থাকে নাইট্রোজেন ঘটিত পদার্থ ফ্যাট, লিগনিন, সুপার ও অজৈব পদার্থ। একটি সাধারণ কচি ডাবে ৩০০-১০০০ মিলিলিটার পানি থাকতে পারে। পুষ্টিবিদদের মতে ১ কাপ বা ১০০ গ্রাম ডাবের পানিতে খাদ্য উপাদান হলো খাদ্যশক্তি ২৮৩ ক্যালরি, চর্বি ২.৭ গ্রাম, সোডিয়াম ১৬ মিলিগ্রাম, প্রোটিন ২.১ গ্রাম, শর্করা ২.৩ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৫ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ০.০২ মিলিগ্রাম, আয়রণ ০.২ মিলিগ্রাম, খনিজ পদার্থ ০.৪ গ্রাম, ভিটামিন বি ১ ০.১১ মিলিগ্রাম, বি ২ ০.০২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৫ মিলিগ্রাম। ডাবের পানিতে যেসব উপাদান রয়েছে তা প্রতিদিনের শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণ নানা প্রকার রোগ থেকে বাঁচিয়ে রাখে।
তাছাড়া ডাবের আরও যেসব উপকার সাধন করে তা নিম্নে দেয়া হলো :
ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা, ঘন ঘন বমি বা কলেরা হলে, সাথে সাথে ডাবের পানি পান করুন খুবই উপকার পাবেন। * শারীরিক পরিশ্রমে শরীর হতে খনিজ লবণ ও প্রয়োজনীয় তরল পদার্থ বের হয়ে যায়। ফলে শরীর দুর্বল হয়ে যায়। ডাবের পানি তা নিমেষেই পূরণ করে দেয়। * ডাবের পানি শরীরের কোষের কার্যকারিতা ও বৃদ্ধি প্রক্রিয়াকে সচল রাখে এবং রক্তের পিএইচ এর মান নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে শরীরে বয়সের চাপ পড়ে না। * ডাবের পানি এন্টি সেপটিক হিসেবে কাজ করে তাই শরীরের কাটা-ছেঁড়া, ব্রুণ, মেছতা ও বসন্তের দাগে ডাবের পানি লাগালে শুকিয়ে যায়। * ডাবের পানি জোলাফের গুণ সম্পূর্ণ তাই যারা কোষ্ঠকাঠিন্যতে ভুগছেন তারা নিয়মিত ডাবের খান উপকার পাবেন। * যারা হার্টের বা হৃৎপি-ের নানা সমস্যায় ভুগছেন তারা নিয়মিত ডাবের পানি খান রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়ায় যথেষ্ট উপকার হবে। * ডাবের পানি মুখের, দাঁতের, চুলের উজ্জলতা বাড়ায় দাঁতের মাড়িকে মজবুত করে। * যৌবন ও তারণ্য কে ধরে রাখতে বিশেষ কাজ করে। * যাদের আলসার গ্যাসটাটাইটিস, এসিডিটি আছে তারা নিয়মিত ডাবের পানি খান সমস্যা কমে আসবে। * ডাবের পানিতে ভিটামিন সি থাকায় চামড়ায় সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করে এবং চর্ম রোগ প্রতিহত করে। শিরা-উপশিরায় সুস্থ রক্ত চলাচলে সাহায্য করে। * ডাবের পানিতে আয়রণ আছে তাই দেহে রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে। দেহের কর্মশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং ত্বক সুন্দর ও মসৃণ করে। * যারা নিম্ন রক্তচাপে ভুগছেন তারা নিয়মিত ডাবের পানি খান খুবই উপকার পাবেন। কারণ এতে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়া বিদ্যমান। তাছাড়া রক্তের ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রেখে হৃৎপি-কে সুস্থ রাখে। * ডাবের পানি উচ্চ ইলেকট্রলাইটিস ক্ষমতা সম্পন্ন। তাই এ পানি দেহের পানি শূন্যতা ও খনিজ লবণের ঘাটতি পূরণ করে। আমাদের দেহে পটাশিয়ামের অভাব হলে মাংস পেশি শক্ত হয়ে ওঠে ও দেহে ব্যথা করে। ডাবের পানি খেলে এ সমস্যা কমে আসবে। * ডাবের পানি এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। ফ্রি রেডিকেলের অবস্থাকে প্রতিহত করে সুস্থ রাখে। * গর্ভবর্তী মায়েরা প্রায়ই এসিডিটি বা পেটে গ্যাস বেড়ে যাওয়ার সমস্যায় ভুগেন এ গর্ভের বাচ্চার ক্ষতির কারণে ইচ্ছা করেই ওষুধ খাওয়া যায় না। এ গ্যাসের সমস্যা দূর করতে ডাবের পানি পান করুন। সমস্যা কমে আসবে।অনাগত বাচ্চার উপকার হবে। * ডাবের পানি মাথার রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি করে। চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুল পড়া রোধ করে।
সতর্কতা
যাদের কিডনি বা মূত্র তলিতে সমস্যা আছে বা পাথর হয়েছে বা ডায়ালাইসিস করতে হয় তারা ডাবের পানি খাবেন না। কারণ কিডনি সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। ফলে এর প্রভাবে পানির পটাশিয়াম দেহে হতে বের হতে পারে না। এতে রোগীর মারাত্মক ক্ষতি সাধিত হয়। যারা উচ্চ রক্তচাপে বা হাই প্রেসারে ভুগছেন তারা ডাবের পানি খাবেন না। কিন্তু সুস্থ মানুষের জন্য ডাবের পানি খুবই উপকারী। আসুন বাড়ির আশপাশে ডাব গাছ লাগাই এবং যতœ নেই।
ষ মো. জহিরুল আলম শাহীন
শিক্ষক ও স্বাস্থ্য বিষয়ক কলাম লেখক
ফুলসান্দ দ্বি-পাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ
গোলাপগঞ্জ, সিলেট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন