স্টাফ রিপোর্টার : সাত বা তার বেশি মাত্রার ভ‚মিকম্প হলে রাজধানী ঢাকাতেই ১ লাখ ৩১ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটবে বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। এতে ভেঙে পড়বে প্রায় ৭২ হাজার ভবন। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর মিরপুরস্থ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ট্রেনিং কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে ‘ভ‚মিকম্পের ঝুঁকি হ্রাসে করণীয় ও প্রস্তুতি’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানানো হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহাম্মেদ খান। স্বাগত বক্তব্য দেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের পরিচালক (প্রশিক্ষণ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মোশারফ হুসেন। মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিক ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশের মধুপুর ফল্টে ১৮৯৭ সালে সবচেয়ে বড় ভ‚মিকম্প হয়েছিল ৭ দশমিক ২ মাত্রার। সে সময়ে ঢাকার জনসংখ্যা ছিল প্রায় ১ লাখ। আর পাকা বাড়ি ছিল মাত্র ১০০টি। তখনই কয়েকশ’ মানুষ মারা যায়। তারা বলেন, এখন রাজধানী ঢাকার জনসংখ্যা প্রায় ২ কোটি। ভবন রয়েছে কয়েক লাখ। একটি মডেল অনুযায়ী, এখন ওই মাত্রার ভ‚মিকম্প হলে শুধু ঢাকাতেই ১ লাখ ৩১ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটবে। আর ভেঙে পড়বে প্রায় ৭২ হাজার ভবন। এটি ভ‚মিকম্পের প্রত্যক্ষ ক্ষতি। পরোক্ষভাবে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হবে, তার কোনো হিসাব নেই।
সেমিনারে বক্তারা স্থাপনা নির্মাণে যথাযথ নিয়ম মানা এবং পরিকল্পিত নগরায়ন ও জনসচেতনতা বাড়লে ভ‚মিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশে হ্রাস করা সম্ভব। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলী আহাম্মদ খান বলেন, ভ‚মিকম্প বন্ধ করা সম্ভব নয়, তবে মানুষের মাঝে ভীতি দূর করা সম্ভব। এছাড়া যেসব ভবন, কমিউনিটি সেন্টার ও আবাসিক ভবনের রেকটিফাই করা হয়নি সেগুলোকে দ্রæত রেকটিফাই করার জন্য অনুরোধ করেন ডিজি। তিনি বলেন, বিল্ডিং কোড অনেক ভবন মানলেও কিছু ব্যক্তি মানছে না। কোনো বিল্ডিং তৈরির পর ওকুপাইড সার্টিফিকেট ফায়ার সার্ভিস থেকে প্রদান করা হচ্ছে। কিন্তুু কোন ভবনের মালিক এ সার্টিফিকেট নিচ্ছে। তবে বাকী গ্যাপটা পূরণ করার জন্য আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তাও নিচ্ছি।
ঢাকার ফায়ার স্টেশনগুলোকে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে এবং বিশতলা পর্যন্ত আগুন নেভানোর কাজ করার জন্য কয়েকটি গাড়ী কেনা হয়েছে বলে জানান তিনি।এছাড়াও কেমিক্যাল ফায়ার নিয়ন্ত্রনেও ফায়ার ফাইটার রয়েছে বলেও জানান ফায়ারের ডিজি।
বক্তারা বলেন, জন সচেতনতা ও পরিকল্পিত নগরায়ন ভ‚মিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে আনতে পারে। ভ‚মিকম্পের ঝুঁকি নিরুপনের জন্য বিভক্ত সিসমিক জোনে ঢাকার অবস্থান মধ্যবর্তী জোনে হওয়ায় তেমন ক্ষতির আশংকা ছিল না। কিন্তু জনসংখ্যার আধিক্য, অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্পায়নের ফলে ঢাকায় ব্যাপক ক্ষতির আশংকা রয়েছে। তবে স্থাপনা নির্মাণে যথাযথ নিয়ম মেনে চললে ভ‚মিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশে হ্রাস করা সম্ভব। ফায়ারের ঘটনার সময় সাংবাদিকরা যাতে ওই ঘটনা সম্পর্কে যে কোন তথ্য সহজে পেতে পারে তার জন্য একটি আলাদা মিডিয়া সেল করারও পরামর্শ দেন বক্তারা। এছাড়াও আপদকালীন সময়ে রিজার্ভ পানির পরিকল্পনাও বাড়ানো, প্রাকৃতিক পানির উৎস হিসেবে সকল পুকুর, খাল, নদী ও সুইমিং পুলগুলো ব্যবহার, দেশের সকল ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় পাঁচ মিনিট করে ভ‚মিকম্পের সময় করনীয় কি কি এ নিয়ে প্রচার, প্রাথমিক শিক্ষা পর্যায়ে ভ‚মিকম্প ও দুর্যোগ প্রতিরোধে পাঠ্যসূচিতে পাঠ্যক্রম চালুরও উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দেন বক্তারা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন