প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশকে আজকে কেউ দরিদ্র দেশ হিসেবে অবহেলা করতে পারে না। কেউ করুণার চোখে দেখে না। বরং সারা বিশ্ব বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে দেখে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ১০ বছরের মধ্যে এই পরিবর্তন আনতে পেরেছি। বাংলাদেশকে নিয়ে আমরা আরো অনেক দূর এগিয়ে যেতে চাই।
আমি স্বজন হারানোর বেদনা নিয়েই আমার যাত্রা শুরু করেছি। মা-বাবা-ভাই হারিয়ে ছিল। তখন একটাই আলো পেয়েছিলাম তা হলো জনগণের ভালোবাসা। জনসেবা করার জন্যই কাজ করছি। বাংলাদেশের মানুষকে ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত একটা সমাজ উপহার দেবার আকাঙ্খা নিয়ে সোনার বাংলা গড়তে আমার বাবা সারাটা জীবন ত্যাগ স্বীকার করেছেন। আমি সেই কথা মনে রাখার চেষ্টা করেছি। তিনি অনেক কাজ সমাপ্ত করে যেতে পারেন নি। তার সে কাজের একটুও যদি করতে পারি তাহলে মনে করবো সেটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য।
গতকাল বৃহস্পতিবার টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে কুমুদিনী কমপ্লেক্সের ভারতেশ্বরী হোমস প্রাঙ্গণে ‘দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা স্মারক স্বর্ণপদক’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে এসব কথা বলেন। রণদা প্রসাদ সাহা প্রতিষ্ঠিত কুমুদিনী কল্যাণ সংস্থা এই পদক প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
রণদা প্রসাদ সাহা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা এক হাতে অর্থ উপার্জন করতেন, আরেক হাতে বিলিয়ে দিতেন। মানুষের কল্যাণে তিনি দান করেছেন। মেয়েদের শিক্ষায়, চিকিৎসায় তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন। কুমুদিনী ট্রাস্ট্রের মাধ্যমে অনেক কাজ করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, নারী শিক্ষার প্রতি রণদা প্রসাদ সাহার ছিল গভীর আগ্রহ। একে একে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ভারতেশ্বরী হোমস, কুমুদিনী কলেজ এবং পিতার নামে দেবেন্দ্র কলেজ। ১৯৫৪ সালে তিনি ঢাকা সেনানিবাসে সম্মেলিত সামরিক হাসপাতালে ম্যাটারনিটি বিভাগের বিল্ডিং স্থাপন করেন। দেশের বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে তিনি আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন। কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের পরবর্তী প্রজন্ম প্রতিষ্ঠাতার মানবিক প্রয়াস-প্রান্তিক অসহায় জনপদে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান ও নারী শিক্ষা প্রসারে নিজেদের নিবেদিত রেখেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রণদা প্রসাদ সাহা স্মারক স্বর্ণপদক প্রদান করেন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর পক্ষে বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা, কাজী নজরুল ইসলামের পক্ষে তার নাতি খিলখিল কাজী এবং অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ও শাহাবুদ্দিন আহমেদ নিজেরা উপস্থিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে স্বর্ণপদক গ্রহণ করেন।
কুমুদিনী কল্যাণ সংস্থার পরিচালক (শিক্ষা) প্রতিভা মুৎসুদ্দির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা, স্থানীয় সংসদ সদস্য একাব্বর হোসেন বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন, সংস্থার পরিচালক ও রণদা প্রসাদ সাহার পুত্রবধূ শ্রীমতি সাহা, ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজিব প্রসাদ সাহা। অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান, টাঙ্গাইল জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান খান ফারুক, জোয়াহেরুল ইসলাম (ভিপি জোয়াহের) এমপি, তানভীর হাসান ছোট মনির এমপি, আহসানুল ইসলাম টিটু এমপি, আতাউর রহমান খান এমপিসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সকাল সাড়ে ১১টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছলে জাতীয় সঙ্গীত ও দেশাত্মবোধক সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী ভারতেশ্বরী হোমসের শিক্ষার্থীদের মনোমুগ্ধকর শরীরচর্চা প্রদর্শন উপভোগ করেন। অনুষ্ঠানে রণদা প্রসাদ সাহার জীবন ও কর্ম এবং কুমুদিনী কল্যাণ সংস্থার ওপর প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরাই বিশ্বে প্রথম শত বছরের ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ বাস্তবায়ন শুরু করেছি। অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বিশ্বের ৫টি দেশের একটি বাংলাদেশ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে বিপুলভাবে বিজয়ী করেছে। আমাদের ওপর দেশের মানুষ যে দৃঢ় আস্থা রেখেছে, আমরা তার পরিপূর্ণ মূল্যায়ন করব। এর আগে প্রধানমন্ত্রী মির্জাপুর কুমুদিনী কমপ্লেক্সে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু ভিআইপি অডিটরিয়ামসহ ১২টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ১৯টি প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন।
প্রকল্পগুলো হচ্ছে, ধেরুয়া রেলওয়ে ওভারপাস, ৩৩/১১ কেভি সুইচিং স্টেশন, টাঙ্গাইলের বৈল্যা গ্রিড সাবস্টেশন, টাঙ্গাইলের ইন্দ্রবেলতা ৩৩/১১ কেভি ২০ এমভিএ ইনডোর উপকেন্দ্র, বাসাইল, দেলদুয়ার ও নাগরপুর উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়ন উপজেলা ঘোষণা, সখিপুর উপজেলা কমপ্লেক্স এর প্রশাসনিক ভবন স¤প্রসারণ ও হলরুম উদ্বোধন, কালিহাতী (ধুনাইল)-সয়ার হাট হাতিয়া রাস্তার উদ্বোধন, মির্জাপুর উপজেলা কমপ্লেক্স স¤প্রসারিত ভবন এর উদ্বোধন, টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু ভিআইপি অডিটোরিয়ামের উদ্বোধন, মির্জাপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের ভবন, মির্জাপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন।
এছাড়া ১৯টি প্রকল্পের ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। এগুলো হচ্ছে এলেঙ্গা-জামালপুর জাতীয় মহাসড়ক (এন-৪) প্রশস্তকরণ প্রকল্প (টাঙ্গাইল অংশ), এলেঙ্গা-ভ‚ঞাপুর-চরগাবসারা সড়কে ১০টি ক্ষতিগ্রস্থ সেতু ও ০১ টি কালভার্ট পুননির্মাণ এবং আঞ্চলিক মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, টাঙ্গাইল-দেলদুয়ার জেলা মহাসড়ক (জেড-৪০১৫), করটিয়া (ভাতকুড়া)-বাসাইল জেলা সড়ক (জেড-৪০১২) এবং পাকুল্লা-দেলদুয়ার-এলাসিন (জেড-৪০০৭) অংশকে যথাযথমানে ও প্রশস্থতায় উন্নীতকরণ প্রকল্প, কালিহাতী উপজেলা কমপ্লেক্সের প্রশাসনিক ভবন স¤প্রসারণ ও হলরুম নির্মাণ কাজ, করটিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দেলদুয়ারের বাতেন বাহিনীর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কার্যালয়, ঘাটাইলের রসুলপুর ইউনিয়ন ভ‚মি অফিস, লোকেরপাড়া ইউনিয়ন ভ‚মি অফিস, জেলা সদর মডেল মসজিদ, টাঙ্গাইল সদর উপজেলা মডেল মসজিদ, বাসাইল উপজেলা মডেল মসজিদ, টাঙ্গাইল সদর উপজেলা ভ‚মি অফিস, সখীপুর উপজেলা ভ‚মি অফিস, মধুপুর উপজেলা ভ‚মি অফিস, মির্জাপুর উপজেলা ভ‚মি অফিস, টাঙ্গাইল সার্কিট হাউসের নতুন ভবন নির্মান কাজ, ভারতেশ্বরী হোমসের মাল্টিপার্পাস হল নির্মাণ, কুমুদিনী কল্যাণ ট্রাস্ট, ইন্সটিটিউট অব পোস্ট গ্রাজুয়েট নার্সিং কমপ্লেক্সের ভিত্তিফলক।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন