দীর্ঘ ২৮ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের পর ভোটের হাওয়া অপেক্ষা করছে কুমিল্লার সরকারি-বেসরকারি কলেজগুলোতে। ক্যাম্পাসকেন্দ্রীক রাজনীতির ভোটের হাওয়া গায়ে লাগাতে কুমিল্লার বিভিন্ন কলেজে নড়েচড়ে উঠছে ছাত্রসংগঠনগুলো। কুমিল্লার এসব কলেজের শিক্ষার্থীরা ছাত্র রাজনীতির পরিমণ্ডলে যোগ্য ও মেধাবী নেতৃত্ব সৃষ্টির জন্য ছাত্র সংসদ নির্বাচন চেয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।
ডাকসু নির্বাচনের ঘোষণার সময়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ডাকসুর পরেই দ্রুতসময়ের মধ্যে সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচন করার প্রস্তুতির বিষয়ে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছিলেন। এখন অপেক্ষা কুমিল্লার উল্লেখযোগ্য কলেজগুলোতে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ নির্ধারণের পালা।
কিন্তু কুমিল্লা শহরের সরকারি কলেজগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ, কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজ, কুমিল্লা সরকারি কলেজ ও বেসরকারি কলেজের মধ্যে অজিতগুহ মহাবিদ্যালয়ে প্রায় ২১ বছর ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ থাকায় যোগ্য নেতৃত্ব যেমন তৈরি হচ্ছে না তেমনি ক্রীড়া সাংস্কৃতিক ও কলেজের কো-কারিকুলাম কার্যক্রমে পুরোদমে গতিশীলতা আসছে না। কেবল তা-ই নয়, কলেজগুলোতে ছাত্র সংসদ না থাকায় ছাত্ররাজনীতিতে প্রাধান্য পেয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য, ঠিকাদারী ও টেন্ডারবাজি। ফলে কলেজের সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া এবং অধিকারের বিষয়টি বরাবরই থেকেছে উপেক্ষিত। কুমিল্লার বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সাবেক নেতারা জানান, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ এবং শিক্ষার্থীদের মৌলিক দাবি আদায়ের অন্যতম প্লাটফরম ছাত্র সংসদ।
কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে ১৯৯৭ সালের ২০ মে ছাত্র সংসদের সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল। কুমিল্লা সরকারি কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯৬ সালের ৩১ অক্টোবর। কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজে ১৯৯৬ সালে ছাত্রী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বেসরকারি পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কুমিল্লা অজিতগুহ মহাবিদ্যালয়ে সর্বশেষ ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছিল ৯৪ সালে। মেয়াদ শেষে ৯৬ সালে ছাত্র সংসদ নির্বাচন ঘিরে অজিতগুহ কলেজ ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্বাচন বন্ধসহ কলেজে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়।
কুমিল্লার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরা জানান, গত ২১ বছর নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে ক্যাম্পাসকেন্দ্রীক বাজনীতি চর্চা চালু থাকলে বিশেষ করে শহরের ওই চারটি কলেজ থেকে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের ভিপি-জিএস হিসেবে অন্তত ১৬৮ জন যোগ্য ছাত্রনেতা পাওয়া যেতা। তাহলে ছাত্র রাজনীতিতে আদর্শ ও মূল্যবোধের জায়গাটি আরো মজবুত হতো এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অহিংস, শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতির সহাবস্থানের ভিত তৈরি হতো।
বিভিন্ন কলেজের ছাত্র সংগঠনের নেতারা জানান, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ এবং শিক্ষার্থীদের মৌলিক দাবি আদায়ে ছাত্র সংসদের কোন বিকল্প নেই। ছাত্রদের অপরাজনীতির অন্যতম কারণ হচ্ছে ছাত্র সংসদ না থাকা। ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক রাজনীতিতে যে সুবাতাস বয়ে যাওয়ার কথা সেখানে দেখা মিলছে উল্টোচিত্রের। নেতারা আরও জানান, কলেজগুলোতে ছাত্র সংসদ নেই। অথচ একুশ বছর ধরে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এখাতে টাকা আদায় করা হচ্ছে। সেই টাকা নানাভাবে খরচ করছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। নির্বাচিত ছাত্রসংসদ না থাকায় এখরচের স্বচ্ছ জবাবদিহিতা নেই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন