জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সরকার নিয়ন্ত্রিত বিরোধী দলের নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ৯০তম জন্মদিন আজ। ১৯৩০ সালের এই দিনে (সার্টিফিকেটে জন্ম ১ ফেব্রুয়ারী) তিনি পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহার জেলায় দিনহাটায় জন্মগ্রহণ করেন। কুচবিহার ও পরবর্তীতে রংপুর শহরে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা গ্রহণের পর ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি ১৯৫২ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন।
সাবেক এই স্বৈরশাসকের জন্মদিন পালনের ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আজ বেলা ১১টায় গুলশান-০১ সার্কেলের ইমানুয়েলস্ মিলনায়তনে জন্মদিন উদযাপিত হবে। অনুষ্ঠানে এরশাদ উপস্থিত থেকে কেক কাটবেন। তাকে নিয়ে কবিতা পাঠ, গানবাজনা ও বই প্রকাশের আয়োজনও করা হয়েছে।
দেশের রাজনীতিতে এরশাদ আলোচিত-সমালোচিত ও বিতর্কিত নাম। সারাজীবন জনমতের বিপক্ষ্যে অবস্থান গ্রহণ করেও তিনি বার বার এমপি নির্বাচিত হন। সুযোগ থাকা সত্তে¡ও তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি। যুদ্ধের সময় চাকরি বাঁচাতে রংপুর থেকে করাচি চলে যান। ১৯৭৩ সালে দেশে ফেরার পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে অ্যাডজুটান্ট জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পান। জিয়াউর রহমান তাকে সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দিলেও ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ জিয়া প্রতিষ্ঠিত বিএনপির শাসনামলে প্রেসিডেন্ট আব্দুস সাত্তারকে হটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। ১৯৮৬ সালে তিনি জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন এবং এই ১৯৮৬ সালে পাঁচ বছরের জন্য দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তবে আন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর ক্ষমতাচ্যুত হন।
স্ববিরোধী কথাবার্তার কারণে আনপ্রেডিক্টেবল হিসেবে পরিচিত এরশাদ দেশের উন্নয়নে অনেক অবদান রেখেছেন। সড়ক যোগাযোগের তার অবদান অনুকরণীয়। ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে যখন বিজাতীয় অপসংস্কৃতির চর্চার উলঙ্গ নৃত্য তখন তিনি সংবিধানের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংযোজন করে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখান। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির বিধান করে আলেম ওলামাদের ‘নয়নের মনি’ হয়ে উঠেন। কিন্তু ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দীর্ঘ কারাভোগ এবং ১৯৯৭ সালে কারামুক্তির পর থেকে জাতীয় পার্টিকে রাজনীতির তুরুপের তাসে পরিণত করেন। অতি লোভ এবং ভীরুতার কারণে জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে এরশাদ নিজের নিরাপদে রাখেন। মাঝে মাঝে সভা-সমাবেশে বিপ্লবী এবং মানুষের হৃদয়ের কথা বললেও পরক্ষণে তিনি নিজের অবস্থান পরিবর্তন করে তোষামুদে কৌশল গ্রহণ করেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী নির্বাচন বর্জনের নাটক করে মিডিয়ার শিরোনাম হন; আবার অন্য কান্ড করে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের সময়ও। তিনি দীর্ঘদিন স্ত্রী রওশন এরশাদের অধীনে রাজনীতি করলেও বর্তমানে জাতীয় সংসদে সরকার নিয়ন্ত্রিত বিরোধী দলের নেতা। যদিও অসুস্থতার কারণে বিরোধী দলের নেতা হিসেবে একদিনও সংসদ অধিবেশনে হাজির হতে পারেনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন