চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে এক মহিলাকে গাছের সাথে বেঁধে নির্যাতন করেছে প্রভাবশালী এক পরিবার। বিষয়টি প্রথমে গোপন থাকলেও ভিডিও ক্লিপের মাধ্যমে ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়ে। এতে এলাকাবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। ঘটনার পর থেকে নির্যাতনকারীরা বাড়ী ছেড়ে পালিয়েছে। গত ১৭ মার্চ রোববার সকাল সাড়ে ১০ টায় শাহরাস্তি উপজেলার টামটা দক্ষিণ ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামের মোল্লা বাড়ীতে এ ঘটনাটি ঘটে।
এলাকাবাসী জানায়, ওই গ্রামের দক্ষিণপাড়া মোল্লা বাড়ির মৃত আবু তাহেরের পুত্র মিজানুর রহমান ও সুমন বাড়ির জায়গায় বেড়া দিতে গেলে একই বাড়ির শহিদুল্লার স্ত্রী বেলুয়া খাতুন (৫২) বাধা দেয়। এতে মিজান ও সুমন ক্ষিপ্ত হয়ে বেলুয়া খাতুনের সাথে বাক্ বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে। ওই সময় মিজানের স্ত্রী কাজলম বেগম ও সুমনের স্ত্রী রোজিনা বেগম ঘটনাস্থলে এসে বেলুয়া খাতুনকে আক্রমণ করে । এক পর্যায়ে তারা বেলুয়া খাতুনের মাথার চুল ধরে মাটিতে ফেলে টেনে-হেঁচড়ে নিজ বাড়ির উঠোনে নিয়ে গাছের সাথে বেঁধে মোবাইল ও টাকা চুরির অপরাধে বেদম মারধর করতে থাকে। বিষয়টি পাশের বাড়ী থেকে এক ছাত্র ভিডিও ধারণ করে সংবাদকর্মীদের কাছে পাঠায়।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বেলুয়া খাতুনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দেন। এব্যাপারে বেলুয়া খাতুনের স্বামী শহিদুল্লাহ বাদী হয়ে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার বাদী শহিদুল্লাহ্ বলেন, আমার পিতার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছি । দুই দলিলে সাড়ে ২৮ শতক জায়গা ক্রয় করে বসবাস করছি । বিবাদীদের পিতা আবু তাহেরের কাছ থেকে সাড়ে ১৩ শতক জমি ক্রয় করেছি। অথচ ওই জায়গা বিবাদীরা দখল নিয়ে আমাকে ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করেছে। ঘটনার দিন সকালে বিবাদী আবু তাহের গং আমার খরিদা জায়গায় বেড়া দিতে আসলে স্ত্রী বেলুয়া খাতুন তাদের বাধা দেয়। এ কারণে তারা আমার স্ত্রীকে তাদের বাড়ীতে নিয়ে মোবাইল ও টাকা চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে গাছের সাথে বেঁধে নির্মম নির্যাতন করে। আমি অসহায় বিধায় সমাজে বিচার পাইনা। অপারগ হয়ে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি। বর্বরোচিত ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তির দাবি জানান তিনি।
আহত বেলুয়া খাতুন বলেন, আমার স্বামীর নামীয় জায়গায় প্রতিপক্ষ মিজান ও সুমন বেড়া দিতে আসলে বাধা দেই। তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে তাদের বাড়ীতে ধরে নিয়ে মোবাইল ও টাকা চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে গাছের সাথে বেঁধে রেখে নির্মম নির্যাতন করে। তিনি আরো জানান, তারা আমাকে মারধর করে এবং গাছের সাথে বেঁধে প্রকাশ্যে ভিডিও করে ।
ঘটনা সম্পর্কে জানতে বিবাদী সুমনের স্ত্রী রোজিনা বেগম ব্যতীত কাউকে পাওয়া যায়নি ।
রোজিনা বেগম বলেন, চুরির ঘটনায় নয়, সম্পত্তিগত বিরোধের জের ধরে আমার ভাসুর ও আমার স্বামী শহিদুল্লার স্ত্রী বেলুয়া বেগমকে ধরে এনে গাছের সাথে বেঁধে রাখে। আমাদের জমি নিয়ে অনেক দিন ধরেই তাদের সাথে বিরোধ চলছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, আমার স্বামী সুমন মাঠে কাজ করে, ভাসুর প্রবাসে থাকেন। উত্তেজিত হয়েই তারা এমন ঘটনা ঘটিয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, শহিদুল্লাহ অসহায় মানুষ। পিতার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হওয়ার পর নিজ নামে খরিদা জায়গায় বসবাস করে যাচ্ছেন । প্রতিপক্ষ তাদের প্রভাব খাটিয়ে জায়গা দখল করার পায়তারা করছে। এ জন্য তারা বিভিন্ন সময় নিরীহ পরিবারটির উপর নির্যাতন করে আসছে।
এ বিষয়ে শাহরাস্তি থানার ওসি মো. শাহআলম (এলএলবি) জানান, এসআই নজরুল ঘটনাস্থল থেকে নির্যাতিত মহিলাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে। পরবর্তীতে তারা থানায় মামলা না করে আদালতে মামলা দায়ের করেছে। আদালতের কাগজ থানায় আসলে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন