আজ ২২ মার্চ বিশ্ব পানি দিবস। জীবন ধারণের অতি জরুরি উপকরণ পানি বিশ্বের সর্বত্রই একটি স্পর্শকাতর বিষয়। কৃষি, শিল্প, খাদ্য, শক্তিসম্পদ সেক্টরসহ সামগ্রিক জনস্বাস্থ্য এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নে পানির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সারাবিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তন ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পানির উৎসস্থলের প্রতি যতœবান হওয়া ও নিরাপদ পানির সংস্থানের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশ্বব্যাপী পানির অপরিহার্যতা বিবেচনা করে এ বছর পানি দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে,‘লিভিং নো ওয়ান বিহাইন্ড’। অর্থাৎ কেউ পিছিয়ে থাকবে না এবং পানিসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে নিরাপদ ও নিরবচ্ছিন্ন পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা। সারা বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশেও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে দিনটি পালিত হবে। বিশ্ব পানি দিবস পালন হবে আগামী ১১এপ্রিল দিনটি পালনে কর্মসূচি নিয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। দিবসের মূল অনুষ্ঠান হবে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে, এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকবেন।
এদিকে বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট মো, আবদুল হামিদ বিশ্ব পানি দিবসের বাণীতে বলেছেন, “পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় কর্তৃক বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও ‘বিশ্ব পানি দিবস’ উদযাপনের উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেছেন, জীবন ও পরিবেশের মৌলিক উপাদান পানি। কৃষি, শিল্প, মৎস্য ও পশুপালন, নৌ-চলাচল, বনায়ন ও জীববৈচিত্র্য পানির ওপর নির্ভরশীল।
জানা গেছে, ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে জাতিসংঘ পরিবেশ ও উন্নয়ন সম্মেলনের (ইউএনসিইডি) ২১ নম্বর এজেন্ডায় প্রথম বিশ্ব পানি দিবস পালনের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ২২ মার্চকে বিশ্ব পানি দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯৯৩ সালে প্রথম বিশ্ব পানি দিবস পালিত হয়। তার পর থেকে এই দিবস পালনের গুরুত্ব বাড়ছে। জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো এই দিনটিকে নিজ নিজ রাষ্ট্রসীমার মধ্যে জাতিসংঘের পানিসম্পদ সংক্রান্ত সুপারিশ ও উন্নয়ন প্রস্তাবনাগুলোর প্রতি মনোনিবেশের দিন হিসেবে উৎসর্গ করেছে। প্রতিবছর বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা বিশেষ কর্মসূচি পালন করে থাকে। সদস্য দেশগুলোর বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাও পরিচ্ছন্ন পানি ও পানিসম্পদ রক্ষা সম্পর্কে জনসচেতনতা গড়ে তোলার জন্য এই দিনে বিশেষ কর্মসূচির আয়োজন করে।
প্রেসিডেন্ট মো, আবদুল হামিদ দিবস উপলক্ষে তার বাণীতে বলেছেন, শস্য উৎপাদনে পানির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তন এবং শুষ্ক মৌসুমে পানি প্রাপ্তির অনিশ্চিয়তার কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্য উৎপাদন, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে পড়ছে। আবার অতিবৃষ্টি, বন্যা ও জলাবদ্ধতার কারণেও জনদুর্ভোগ এবং সম্পদের মারাত্মক ক্ষয়-ক্ষতি হচ্ছে। সরকার দেশে পানিধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নদী ড্রেজিং এবং ব্যাপক আকারে খাল পুনঃখনন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য প্রাকৃতিক জলাধারসমূহের রক্ষণাবেক্ষণসহ নতুন জলাধার ও ব্যারেজ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সঠিক পানি ও সেচ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিতে এ সকল প্রকল্প ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আমার বিশ্বাস।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বানীতে বলেছেন, জীবন ও পরিবেশের মৌলিক উপাদান পানি। কৃষি, শিল্প, মৎস্য ও পশুপালন, নৌ-চলাচল, বনায়ন ও জীববৈচিত্র্য পানির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু ভ‚-গর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহার, উপক‚লীয় এলাকার পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নগরায়ণ ও শিল্পায়ন, মারাত্মক পরিবেশ দূষণ, পানি প্রবাহে কৃত্রিম বাধা সৃষ্টি এবং জলবায়ু পরিবর্তন সুপেয় পানির উৎসকে ক্রমশ অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বর্তমান সরকার জীববৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখার জন্য কৃষি, শিল্পসহ সকল ক্ষেত্রে ব্যবহারযোগ্য পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন