অপকৌশলের আশ্রয় নিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন রাতে আলোচিত নোয়াখালীর সুবর্ণচরে গৃহবধূ গণধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত মূল হোতা আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিন হাইকোর্ট থেকে এক বছরের জামিন পেয়েছেন। এদিকে জামিনের আদেশ বাতিল চেয়ে চেম্বার আদালতে আবেদন করেছেন রাষ্ট্রপক্ষ। আগামী সোমবার এ বিষয়ে শুনানি হতে পারে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ রায়। তিনি আরো বলেন, এই জামিন আবেদনের শুনানিতে অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন আসামির আইনজীবী।
গত ১৮ মার্চ বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ জামিন দেন। একইসঙ্গে রুলও জারি করেন।
আদালতে রুহুল আমিনের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট আশিক-ই-রসুল। ধর্ষণের মূলহোতা হিসেবে আসামিকে কোন যুক্তিতে উচ্চ আদালত থেকে জামিন দেয়া হয়েছে? জানতে চাইলে বিশ্বজিৎ রায় বলেন, আবেদনকারীর আইনজীবী আদালতে বলেছেন যে, মামলার প্রাথমিক তথ্যবিবরণীতে রুহুল আমিনের নাম নেই। তাছাড়া মামলাটি এখনও তদন্ত চলছে। এসব যুক্তি তুলে তার জামিন চাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আসলে আসামির আইনজীবী রাষ্ট্রপক্ষকে ধাঁধা লাগিয়ে বিভ্রান্ত করেছেন। এছাড়াও জামিন আবেদনে উল্লেখ আছে হাইকোর্টের অ্যানেক্স ১৭ নম্বর বেঞ্চে মামলাটি উপস্থাপন করার কথা ছিল। অর্থাৎ হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত আদালতে আবেদনটি শুনানির জন্য ফাইল হয়েছিল এবং আবেদনটির অনুলিপি গেছে ওই কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতরে। যেদিন জামিন হয় সেদিন আসলে আমরা বুঝতেই পারিনি, কার জামিন হয়েছে। সংশ্লিষ্ট হাইকোর্ট বেঞ্চ রহুল আমিনকে এক বছরের জামিন দেন। হাইকোর্ট আসামিকে জামিন দেয়ার পাশাপাশি চার সপ্তাহের রুলও জারি করেন। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ আপিল দায়েরের উদ্যোগ গ্রহণ করে।
সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ রায় বলেন, আসামিপক্ষের আইনজীবী আশিক-ই রাসুল অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে মামলার যে কপি সরবরাহ করেছেন, তাতে হাইকোর্টের ১৪ নম্বর বেঞ্চ উল্লেখ না করে ১৭ নম্বর করেছেন। অথচ মামলা শুনানি হয়েছে ১৪নম্বর বেঞ্চে। এখানে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে। এ কারণে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জামিনের সময় বিরোধিতা করা যায়নি। এছাড়া এফআইআরে রুহুল আমিনের নাম নেই। এখানে তাকে হুকুমদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গ, গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সে দিন রাতেই ওই গৃহবধূকে ধর্ষণ করা হয়। গৃহবধূর অভিযোগ, নির্বাচনে নৌকায় ভোট দেয়ার অনুরোধ করেছিলেন রুহুল আমিন। তা না করায় ভোটের দিন রাতে রুহুল আমিনের লোকজন তাঁকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণ ও মারধর করে। এ ঘটনায় সারা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন