বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

আগে প্রভাববিস্তারকারীদের ঠেকাতে হবে

প্রকাশের সময় : ২৯ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

প্রভাবশালীদের চাপ যতই থাকুক না কেন, কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় না দিতে পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের নামে কেউ প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করলে প্রধানমন্ত্রী সরাসরি তার সঙ্গে যোগাযোগ করারও নির্দেশ দিয়েছেন। দুর্বলের স্বার্থ রক্ষার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, আমার দলেরও কেউ যদি প্রভাব খাটাতে চায় অবশ্যই আমার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করবেন। যোগাযোগের সুযোগ কিন্তু আছে। সবসময়ই এই যোগাযোগটা আমরা রাখি। ‘পুলিশ সপ্তাহ-২০১৬’ উপলক্ষে গত বুধবার নিজ কার্যালয়ে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা এ সব কথা বলেন। এতো সোজা এবং স্পষ্ট কথা বলার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমরা ধন্যবাদ জানাই। তিনি বলেছেন যে, যারা প্রভাব বিস্তার করে তারা যদি আওয়ামী লীগের লোকও হয় তাহলেও তাদের ছাড় দেয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের এই অংশটুকু অত্যন্ত প্রেরণাদায়ক। কিন্তু প্রশ্ন হলো, পুলিশ বাহিনীর ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে কারা? নিশ্চয় তারা রাম-শ্যাম বা যদু-মধু নয়। পুলিশ বাহিনীকে প্রভাবিত করতে পারে একমাত্র অসৎ অর্থ এবং রাজনৈতিক ক্ষমতা অথবা উভয়ই। বাংলাদেশে পুলিশ বাহিনী বর্তমানে কাদের প্রভাবাধীন রয়েছে সেটি তো কারো অজানা নয়। সংবাদপত্রে তাদের বাড়াবাড়ি এবং প্রভাব খাটানোর সংবাদ প্রায় প্রতিদিনই প্রকাশ পাচ্ছে। প্রভাব খাটাচ্ছেন প্রধানত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, এমপি, যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের প্রভাবশালী নেতৃবর্গ। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, পুলিশের ছাতার তলে তাদের অপকর্মের কথা হর-হামেশা পত্র-পত্রিকার পাতায় এবং টেলিভিশনের নিউজ বুলেটিনে প্রকাশিত হচ্ছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো এ্যাকশন নেয়ার খবর শোনা যায় না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে কে কখন দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের প্রভাব বিস্তারের নালিশ জানাবেন আর সেই নালিশের ওপর ভিত্তি করে প্রধানমন্ত্রী ব্যবস্থা নেবেন, সেই পর্যন্ত বসে থাকা সমীচীন হবে না। এ ছাড়া অনেক ভিকটিম আছেন যারা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ বা যুবলীগের মতো ক্ষমতাধরদের  বিরুদ্ধে নালিশ করার সাহস পাবেন না। কারণ ঐসব দাপুটে নেতাকর্মীদের কাছে ভিকটিমরা বড়ই অসহায়। আবার দেখা গেছে, উৎসাহের আতিশয্যে অনেক পুলিশ স্বেচ্ছায় অসহায় মানুষের ওপর জুলুম-পীড়ন করে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং স্বেচ্ছাচারিতার কাহিনী বলে শেষ করা যাবে না। প্রতিনিয়ত এগুলো খবরের কাগজে প্রকাশ পাচ্ছে। কাদেরকে ছেড়ে কাদের কথা বলবো? একটি রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের আশপাশে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে দেখা যাবে, তারা যত না ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত, তার চেয়েও তারা যানবাহনের কাগজপত্র পরীক্ষার নামে টু পাইস কামাই করার কাজে বেশি ব্যস্ত। বেশ কিছু দিন ধরে পত্র-পত্রিকায় লেখা হচ্ছে যে, ‘মাছের রাজা ইলিশ আর দেশের রাজা পুলিশ’। পুলিশের দুর্নীতি এতোই প্রকট হয়ে উঠেছে যে, যখন গণহারে গ্রেফতার করা হয় তখন সেটাকে ‘গ্রেফতার বাণিজ্য’ বলে আখ্যায়িত করা হয়। অপরাধ দমনের নামে পাইকারীহারে গ্রেফতার করে নগদ নারায়ণের লেনদেন হয়। যারা পুলিশের সাথে নগদ নারায়ণের কারবার করে তারা অতি সহজেই আটক অবস্থা থেকে মুক্ত মানব হিসেবে বের হয়ে আসে। কোন ব্যক্তি জেনুইন অপরাধী হলেও যদি পুলিশের সাথে ‘ভাও’ করতে পারে তাহলে সে সহজেই নিষ্কৃতি পেয়ে যায়। অন্তত ২ জন শীর্ষ সন্ত্রাসীর কাহিনী মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে যেখানে ক্ষমতার প্রভাবে তাদের কারাগার থেকে রাজারহালে মুক্তি দেয়া হয়েছে। ক্রিমিনাল অফেন্স হোক অথবা রাজনৈতিক কারণ হোক, কিছু মানুষকে বন্দী করে ক্রসফায়ারের ভয় দেখানো হয় এবং মুক্তিপণ হিসেবে মোটা অংকের অর্থ দাবি করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, তার অফিসকে এ সব ঘটনা সুনির্দিষ্টভাবে জানাতে। দেখা যায়, আদালত মাঝে মাঝে কোনো কোনো কেস স্যুয়ো মোটো বা নিজ উদ্যোগে গ্রহণ করেন। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, শাখা বা বিভাগকে স্যুয়ো মোটো বা স্বউদ্যোগে এ সব অপরাধমূলক কার্যকলাপ কি টেকআপ করা যায় না? এই সরকারের বিগত ৭ বছরের শাসনামলে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের শত শত নয়, হাজার হাজার চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির কাহিনীর প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত এবং সম্প্রচারিত হয়েছে। অধিকাংশ রিপোর্টেই দেখা যায় যে, এ সব অপকর্ম সাধিত হয়েছে পুলিশের ছত্রছায়ায়। অথচ সরকারের প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে এবং পরিদপ্তরে রয়েছে জনসংযোগ শাখা। মন্ত্রীদের রয়েছে তথ্য অফিসার। প্রধানমন্ত্রীর রয়েছে একটি শক্তিশালী প্রেস উইং। এরা কি প্রধানমন্ত্রীকে এবং মন্ত্রীদের নিউজ ফিড দেন না?
যতক্ষণ সরকারের এসব শাখা তৎপর না হবে ততক্ষণ প্রধানমন্ত্রীর এই সাধুবাক্যে কোনো কাজ হবে না। তবে পুলিশ বাহিনীর একটি কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, এই আহ্বানটি এসেছে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে যিনি দেশের শীর্ষ নির্বাহী। পুলিশ বাহিনী এমন একটি বাহিনী যাকে সরকার এবং সরকার প্রধানের প্রতি অনুগত থাকতে হবে। এই আনুগত্য শুধুমাত্র তার নির্বাহী হুকুম মানলেই চলবে না, বরং জনকল্যাণে তিনি যে সব উপদেশ, পরামর্শ ও নির্দেশ দেবেন সেগুলোও তাকে অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন