ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র রেদওয়ানুল হক। লেখাপড়ার জন্য বাড়ি থেকে টাকা পাঠানোর সমার্থ্য নেই তার গরিব বাবার। তাই লেখাপড়ার পাশাপাশি তাকে কিছু একটা করতে হবে। আবার ভালো রেজাল্টও করতে হবে। তাই তার প্রয়োজন একটি খ-কালীন চাকরি। শুধু রেদওয়ান নয় বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে আর্থিক সমস্যা সমাধান ও চাকরির অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য অনেকেরই খ-কালীন চাকরি করতে হয়। খ-কালীন প্রতিষ্ঠানগুলো এবং তাদের কাজের তথ্য জানাচ্ছেন- তারিন তাসমী।
ফ্যাশন হাউস
ফ্যাশন হাউস বললেই মনে পড়ে আড়ং, নগরদোলা, অন্যমেলা কিংবা এক্সটেসির মতো হরেক কাপড়ে রাঙা দোকানগুলোর ছবি, পাশে কিছু তরুণ মুখও থাকে, যারা ক্রেতাকে সহায়তা করেন পণ্যটি বাছাই করতে কিংবা কিনতে। এদেরই বলা হয় বিক্রয় সহযোগী, আর এঁদের প্রায় ৮০ শতাংশই ছাত্রছাত্রী। ঈদের সময় এসব হাউজে প্রচুর বিক্রয়সহযোগী নেয়া হয়। হাতে কাজ না থাকলে ছুটির ফাঁকে সেখানে আপনিও আবেদন করতে পারেন। ন্যূনতম এইচএসসি পাস হতে হবে আর লাগবে ভাষার দক্ষতা। যারা ইংরেজিতে কাঁচা, তাদের ভয় নেই। ফ্যাশন হাউসগুলোই আপনাকে প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করে নেবে। শুধু আপনার আত্মবিশ্বাসটা থাকলেই চলবে।
কল সেন্টার
মুঠোফোন কোম্পানিগুলো বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া শিক্ষার্থীদের জন্য কল সেন্টারের মাধ্যমে বেশ কিছু স্বল্পকালীন চাকরির সুযোগ করে দিয়েছে। মুঠোফোন কোম্পানিগুলোর কল সেন্টারে শিক্ষার্থীরাই বেশি কাজ করছেন। আর এ ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাচ্ছেন ইংরেজি জানা, ভালো কণ্ঠ ও যোগাযোগে দক্ষ তরুণ-তরুণীরা। পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টার শিফটে এ কাজ করে একটি আকর্ষণীয় সম্মানী তো থাকেই, আরও থাকে নির্দিষ্ট সময় পরে লিখিত পরীক্ষা ও কর্মদক্ষতার প্রমাণ দিয়ে কোম্পানিতে স্থায়ী হওয়ার সুযোগ।
ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট
ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট মূলত স্মার্ট তরুণ-তরুণীদের কাজ। এ জন্য প্রয়োজন যোগাযোগে দক্ষ ছেলেমেয়ে। এখানকার মূল কাজ বিভিন্ন ব্র্যান্ড প্রমোট করা, ক্যাম্পেইন করা কিংবা অনুষ্ঠানে সহায়তা করা ইত্যাদি। কাজগুলো হয় দিন, সপ্তাহ কিংবা মাসভিত্তিক। প্রতিদিন ৪শ’ থেকে শুরু করে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করা যায়। এর জন্য প্রয়োজন যোগাযোগ এবং শতভাগ একাগ্রতা। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে শেখার অনেক কিছু আছে। বিভিন্ন দেশের, এলাকার বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ে। ব্যবস্থাপনার মৌলিক ধারণা শিখতে পারে। আরও শিখতে পারে, কর্পোরেট দুনিয়ার হালচাল। বেশিরভাগ ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি যেকোনো কাজের আগে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। তাই না ভেবে সুযোগ থাকলে সরাসরি যেকোন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির অফিসে চলে যান।
প্রকাশনা সংস্থা
প্রাতিষ্ঠানিক শিশুতোষ বই কিংবা অনূদিত বই প্রকাশের পেছনে ৮০ ভাগ অবদান রাখে কলেজ বিশ্ববিধ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। লেখার ধাঁচ ভালো হলে তারা দেড় হাজার টাকা শুরু করে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করার সুযোগ আছে। শুধু দরকার লেখালেখির প্রতি একনিষ্ঠতা। অনেক শিক্ষক, অধ্যাপকও প্রকাশনায় লিখে থাকেন। তাছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রকাশনা সংস্থাগুলোয় কাজ করছেন অনেক দিন ধরেই। প্রকাশনা সংস্থাগুলোয় লিখতে হলে আপনাকে সরাসরি এসব সংস্থায় গিয়ে একটা হালকা লিখিত পরীক্ষা দিয়ে দক্ষতা প্রমাণ করতে হবে বলে জানান প্রিন্সিপাল পাবলিকেশনের মালিক নিজাম উদ্দিন।
বিজ্ঞাপনী সংস্থা
বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়া সম্ভব। কারণ, একটি ভালো বিজ্ঞাপনের ধারণার মূল্য অনেক। পড়ালেখার পাশাপাশি সৃজনশীল পেশায় যারা যুক্ত হতে চান, তাদের প্রথম পছন্দ হতে পারে বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলো। পড়ালেখার পাশাপাশি সৃজনশীল যেকোনো ছাত্রছাত্রী বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজ করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে লেখালেখি, গ্রাফিকস কপিরাইটার, ক্লায়েন্ট ধারণা থাকলে খুব কাজে দিবে।
কেএফসি বা পিৎজা হাট
দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের প্রিয় খ-কালীন চাকরি হচ্ছে কেএফসি বা পিৎজা হাট তথা ফাস্টফুড শপে কাজ করা। এখানে তারা চিকেন বার্গার, স্যান্ডউইচ থেকে শুরু করে সবকিছুই তারা তৈরি করছেন। আবার কেউ সেগুলো সুন্দর করে সাজিয়ে পরিবেশনে সহায়তা করছেন, আর কেউবা কাজ করছেন ক্যাশ কাউন্টারে। কথা বলি ঢাকা কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সাইফুল ইসলামের সাথে। তিনি জানান, ‘এক বছর হলো কেএফসিতে কাজ করছি। কখনো খাবার সরবরাহ করি, কখনো ক্যাশ কাউন্টারে কাজ করি। বিশ্বের অনেক দেশে কেএফসি রয়েছে। এখানে কাজ করার অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে বিদেশেও কাজ পেতে সহায়ক হবে। তাছাড়া এখানে আয়ও ভালো’
সুপার শপ
আগোরা কিংবা মীনা বাজারের মতো সুপার শপগুলোতে শিক্ষার্থীরা কাজ করছেন অনেক দিন ধরে। ধানমন্ডি, গুলশান, বনানীসহ বিভিন্ন জায়গায় এসব সুপার শপ রয়েছে। আপনিও লেখাপড়ার পাশাপাশি এগুলোতে কাজ করতে পারেন। অলস সময়টা কেটে যাবে। আবার মাস শেষে হাত খরচের টাকাটাও পেয়ে যাবেন।
এফএম রেডিও
ভালো কণ্ঠস্বর, ইংরেজিতে দক্ষ, গান ও বর্তমান বিশ্ব সম্পর্কে ভালো ধারণা সম্পন্ন তরুণ-তরুণীদের জন্য এফএম রেডিওতে পার্টটাইম বা ফুলটাইম কাজ করার সুযোগ রয়েছে বলে জানান প্রথম বেসরকারি এফএম রেডিওর প্রধান বার্তা সম্পাদক সেলিম বাশার। তিনি বলেন, এখানে যারা পার্টটাইম কাজ করে, তারা পরবর্তীতে স্থায়ী হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
আর কিছু
খ-কালীন কাজের কি আর শেষ আছে? বিদেশি বই বিক্রির কাজেও এখন শিক্ষার্থীদের দেখা যায়। এছাড়া বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থায় গবেষণা সহযোগী হিসেবে কাজও খ-কালীন কাজের বড় সুযোগ হতে পারে। তাই আর ঘরে বসে থাকা কেন, যোগ দিন পছন্দের কোনো খ-কালীন কাজে। হাতখরচটা উঠে আসুক আর অভিজ্ঞতার ঝুলিটাও বাড়–ক।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন