শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

এ হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা জানাই

প্রকাশের সময় : ২২ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সপ্তাহখানেক আগে বান্দরবানে বৌদ্ধ ভিক্ষুকে কুপিয়ে হত্যা করার রেশ কাটতে না কাটতে আবারও একই কায়দায় কুষ্টিয়ায় এক হোমিও চিকিৎসককে হত্যা করা হলো। গত শুক্রবার সকাল ৯টায় শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে বটতৈল ইউনিয়নের শিশিরপড়া মাঠ এলাকায় এ হত্যাকা- ঘটে। পত্র-পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, হোমিও চিকিৎসক মীর সানাউর রহমান ও তার বন্ধু কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক মো. সাইফুজ্জামান প্রতি শুক্রবারের মতো সানাউর রহমানের বাগান বাড়িতে মটরসাইকেলে করে এলাকার লোকজনকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য সেখানে যাচ্ছিলেন। মূল সড়ক থেকে নির্জন পথে বাগানবাড়ি যেতে হয়। সে পথেই মটরসাইকেল আরোহী তিন যুবক তাদের গতিরোধ করে চাপাতি দিয়ে কোপাতে থাকে। সানাউরের ঘাড়ে ও মাথায় কোপানো হয়। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। সাইফুজ্জামান বাধা দিতে গেলে তাকেও কুপিয়ে জখম করা হয়। তার ঘাড় ও মাথায় একাধিক কোপ লেগেছে। গুরুতর অবস্থায় তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় নিয়ে আসা হলেও তিনি আশঙ্কামুক্ত নন। কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, পূর্বশত্রুতার জের ধরে এ ঘটনা ঘটেছে। জঙ্গীদের কোনো যোগসূত্র আছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সানাউরের বড় ভাই ও এলাকার লোকজন বলেছেন, এলাকার নারী-পুরুষ ও শিশুদের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক ছিল। তার কোনো শত্রু ছিল বলে আমাদের জানা নেই। সানাউরের ঘনিষ্ঠ এক আত্মীয় জানান, তিনি বাউল অনুসারী ছিলেন, লালনভক্ত ছিলেন। নিজের বাগানবাড়িতে মাঝেমধ্যে বাউল গানের আসরের আয়োজন করতেন। বলাবাহুল্য, একজন ব্যক্তি তিনি কী পছন্দ-অপছন্দ করেন বা যে মতাদর্শ ও কর্মে নিয়োজিত থাকেন না কেন, তাকে হত্যা করার মতো নির্মম ও অমার্জনীয় কাজ আর কিছুই হতে পারে না। আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে এ ধরনের এ হত্যাকা-ের তীব্র নিন্দা জানাই।
গত শুক্রবারের ঘটনাসহ গত পাঁচ মাসে দেশের বিভিন্ন এলাকায় একই ধরনের ১৩টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন ১৪ জন। এসব ঘটনায় আন্তর্জাতিক দুই জঙ্গী সংগঠন আইএস ও আল-কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখার নামে দায় স্বীকার করা হয়েছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলেছে, দেশীয় দুই জঙ্গী সংগঠন জেএমবি ও আনসার আল ইসলাম এসব ঘটনার সাথে জড়িত বা মূল সন্দেহভাজন। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেবল ধারণা বা সন্দেহই করে যাচ্ছে, আজ পর্যন্ত একটি ঘটনারও সঠিক কারণ এবং প্রকৃত হত্যাকারীদের শনাক্ত ও গ্রেফতার করতে পারেনি। শুধু সন্দেহের বশে কিছু লোক গ্রেফতার করেছে। বিগত পাঁচ মাসে ঘটা একটি ঘটনারও মূল হোতাদের যদি শনাক্ত এবং দ্রুত বিচারের আওতায় আনা যেত, তবে এ ধরনের ধারাবাহিক হত্যাকা-ে কিছুটা হলেও হয়তো ছেদ পড়তো। এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ৬ জঙ্গীর ছবি ও নাম প্রকাশ করে ধরিয়ে দেয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এসব ঘোষিত জঙ্গী কি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেয়ে এতই কৌশলী বা শক্তিশালী যে তাদের ধরতে পুরস্কার ঘোষণা করতে হবে? যেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই ধরতে ব্যর্থ হচ্ছে, সেখানে সাধারণ মানুষ কী করে তাদের ধরবে? আমরা দেখেছি, কয়েক বছর আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রায় ২২ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম ও ছবি প্রকাশ করে ধরিয়ে দেয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। পরবর্তীতে দেখা গেছে, এরা ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে। সময় গড়ানোর সাথে সাথে এদের ধরার উদ্যোগও ঝিমিয়ে পড়েছে। ধারাবাহিকভাবে ঘটিত সিলেক্টিভ কিলিংয়ের ক্ষেত্রে জড়িতদের ক্ষেত্রেও ছবিসহ নাম প্রকাশ করা হয়েছে। এখন দেখার বিষয়, এদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কতটা পারঙ্গমতার পরিচয় দেয়। কুষ্টিয়ায় হোমিও চিকিৎসকের হত্যাকা- যে সিলেক্টিভ কিলিংয়ের ধারাবাহিকতা, সেটা অনুধাবন করা গেলেও, শেষ কথা বলা যায় না। একজন ব্যক্তির নানা কিছুর সঙ্গে সংযোগ-সম্পর্ক থাকতে পারে। কারো সঙ্গে শত্রুতা থাকতে পারে, জায়গা-জমি নিয়ে বিরোধ থাকতে পারে এবং এসব কারণেও হত্যাকা- সংঘটিত হতে পারে। কারণ যাই হোক, গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত এ হত্যাকা-ের মোটিভ এবং প্রকৃত হত্যাকারীদের গ্রেফতার করা। অতীতের ঘটনাগুলোর সাথে জড়িত প্রকৃত হত্যাকারীদের ধরতে না পারার ব্যর্থতা সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে দিয়েছে। তাদের স্বাভাবিক চলাচলের ওপর প্রভাব ফেলছে। এক বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। কখন কার ওপর হামলা হবে, সাধারণ মানুষের মধ্যে এমন অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। দেশী বা বিদেশী জঙ্গীগোষ্ঠীর আড়ালে যে কোনো সন্ত্রাসীও এমন ঘটনা ঘটিয়ে সুযোগ নিতে পারে। একমুখী প্রচারণার সুযোগ সন্ত্রাসীদের নেয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।
দেশের মানুষ এখন আর ‘দায়ী’ করার অপসংস্কৃতি দেখতে চায় না। তারা দেখতে চায়, ধারাবাহিকভাবে ঘটে যাওয়া হত্যাকা-ের সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারের মুখোমুখি করে সাজা দেয়া। তারা দেখছে, একের পর এক ঘটনা ঘটছে অথচ প্রকৃত অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যাচ্ছে। একটি ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আরেকটি নতুন ঘটনার আড়ালে পূর্বের ঘটনা চাপা পড়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে ধারাবাহিক এই হত্যাকা- চলতেই থাকবে। বাস্তবেও তাই দেখা যাচ্ছে। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা নিয়েও জনমনে সংশয় সৃষ্টি হচ্ছে এবং সাধারণ মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। আমরা মনে করি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সক্রিয় হয়ে ঘটে যাওয়া প্রত্যেকটি ঘটনার প্রকৃত কারণ ও কারা জড়িত তা দ্রুত উদঘাটন করতে হবে। জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। এ কাজে ব্যর্থ হলে জনমনে সৃষ্ট আতঙ্ক যেমন দূর করা যাবে না, তেমনি অনুরূপ ঘটনা ঘটার আশঙ্কাও থেকে যাবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন