নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেছেন, ‘আমরা সরকারি দল এটা মনে রাখতে হবে। আমরা আমাদের বাবা মায়ের পর সবচেয়ে বড় মানুষ হচ্ছে বঙ্গবন্ধু। তিনি নাই তাই এখন আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি দেশের উন্নয়ন সুশাসনের জন্য কাজ করছেন। আমাদের অনেকের বয়স তরুণ। গতকাল শনিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের ব্যানারে জরুরি কর্মী সভায় শামীম ওসমান সূচনা বক্তব্যে এসব কথা বলেন। ‘নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী পরিবারকে ধংসের চক্রান্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও’ ব্যানারে ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা সভা ডাকলে সমাবেশ হয়। আর সমাবেশ ডাকলে লাখো মানুষের জমায়েত হয়। তাই মশা মারতে কামান দাগানোর দরকার নাই। আপনারা শুধু ধৈর্য ধরেন।’
সভায় মহানগর আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি খোকন সাহা, জেলার সেক্রেটারি আবু হাসনাত শহীদ বাদল, সহ সভাপতি চন্দন শীল, ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম সাইফউল্লাহ বাদল, সেক্রেটারি শওকত আলী, বন্দর আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ রশিদ, জেলা কৃষক লীগের সেক্রেটারি ইব্রাহিম চেঙ্গিস প্রমুখ উপস্থিত আছেন। গত দুই তিন ধরে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমানের সমর্থিত নেতাকর্মীদের সাথে জেলা পুলিশ প্রশাসনের বৈরি সম্পর্ক শহরজুড়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার জন্ম দিচ্ছে। সেই সাথে নারায়ণগঞ্জ শহরের পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তী সময় থেকেই নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের সাথে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ প্রশাসনের সম্পর্ক খারাপের দিকে যেতে থাকে। বিভিন্ন সভা সমাবেশে পুলিশ প্রশাসনের দিকে ইঙ্গিত করে বক্তব্য দিতে থাকেন শামীম ওসমান। সর্বশেষ গত ২৭ মার্চ নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ প্রাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা ও চেক প্রদান অনুষ্ঠানে শামীম ওসমান পুলিশ প্রশাসনের ইঙ্গিত করে বেশ কঠোরতার সাথে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বক্তৃতা দেন।
ওই অনুষ্ঠানের দুইদিন পরই ২৯ মার্চ নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের সমর্থিত নেতা হিসেবে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজামের বিরুদ্ধে জিডি করেছে ফতুল্লা মডেল থানার ওসি শাহ মো: মঞ্জুর কাদের। তার বিরুদ্ধে পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়ার অভিযোগ করা হয়। এরপর গত ১ এপ্রিল রাতে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার পাগলায় মেরি এন্ডারসনে মদ ও বিয়ার উদ্ধারের ঘটনায় ক্রীড়া সংগঠক তানভীর আহমেদ টিটুকে জড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে শামীম ওসমানের বলয়ের সাথে পুলিশ প্রশাসনের বিরোধ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।
টিটুকে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত করার অভিযোগে ব্যাবসায়ীরা একের পর এক প্রতিবাদ সভা ও স্মারকলিপিসহ কঠোর আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে। একই সাথে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ প্রশাসনও পিছিয়ে নেই। গত দুইদিন ধরেই যে কোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সজোয়া যান ও জল কামান নিয়ে প্রস্তুত রয়েছেন। গত বুধবার নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার হারুন উর রশীদ শহরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে মহড়াও দিয়েছেন। যদিও তিনি বলছেন, এটা পুলিশ প্রশাসনের নিয়মিত ডিউটি। সেই হিসেবে তারা শহরে মহড়াও দিয়েছেন। ফলে নারায়ণগঞ্জ শহর জুড়েই উদ্বেগ পরিলক্ষিত হচ্ছে। এসকল বিষয় নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমান কয়েকদিন চুপ থাকলেও এবার তিনি মুখ খুলবেন। ফলে নেতাকর্মীদের সকলেরই দৃষ্টি হচ্ছে শামীম ওসমান তাদেরকে কি দিকনির্দেশনা দিবেন সেই দিকে। এর আগেও কয়েকবার শামীম ওসমান ইসদাইরের বাংলা ভবনে কর্মীসভা করেছেন। সেই সভা থেকে ২ নং রেলগেইট এলাকায় বিশাল জনসভারও ঘোষণা দিয়েছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন