ফরিদপুর জেলা সংবাদদাতা : ফরিদেপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সাতৈর ও ঘোষপুর ইউনিয়নের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত চাপাদহ বিলের তিন পাড়ের পাঁচ শতাধিক জেলে পরিবারে দুই সহস্রাধিক মানুষ শঙ্কার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। কয়েক পুরুষের বেঁচে থাকার অবলম্বন বিলটি এক শ্রেণির কুচক্রী মহল অমৎস্যজীবিদের নামে লিজ গ্রহণ করে নেয়ায় ওই সকল মানুষের চোখ মুখে হতাশার ছাপ।
জেলেপাড়ার প্রবীন সদস্যরা জানান, দেড় থেকে দুইশ’ বছর ধরে স্থানীয় জেলেরা জাল যার জলা তার নীতিতে চাপাদহ বিলের লিজ নিয়ে মাছ চাষাবাদ ও আহরণ করে আসছিল। এক পর্যায়ে ১৯৬০ সালে প্রকৃত মৎস্যজীবিদের নিয়ে “বিল চাপাদহ মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি” নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলে বিল চাপাদহ ভোগ করে আসছিল প্রকৃতমৎস্যজীবিরা। পরবর্তীতে ১৯৬৪ সালে সংগঠনটি নিবন্ধিত হয়। তারা আরো জানান, ৮৫ একর সরকারি থাস জমির জলাভুমিটি বর্ষা মৌসুমে কয়েকমাস ধরে দুই সহস্রাধিক একর এলাকাজুড়ে জলমগ্ন থাকায় বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের অন্যতম মাধ্যমে পরিনত হয় বিলটি।
প্রকৃত মৎস্যজীবি আশুতোষ বিশ্বাস জানান, ২০০৪ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে জনৈক বিএনপি নেতার মদদে “বিজিবি মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লিমিটেড” নামের একটি সংগঠন তৈরি করে বিলটি দখলে নেয়ার চেষ্টা করে। কয়েকবছর ধরে বিলটি দখলেও রাখে তারা। পরবর্তীতে বিলটি পুনরায় প্রকৃত মৎস্যজীবিদের দখলে আসে। অতপর এবছর ওই চক্রটি গোপনে আঁতাত করে বিলটি “বিজিবি মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লিমিটেড” এর সাধারণ সম্পাদকের নামে লিজ নেয়।
প্রকৃত মৎস্যজীবিদের সংগঠন বিল চাপাদহ মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সভাপতি নিরাঞ্জন বিশ্বাস জানান, বিলকে ঘিরে জীবিকা নির্বাহ করে উপজেলার সাতৈর ইউনিয়নের বেড়াদি ও ঘোষপুর ইউনিয়নের ঘোষপুর এবং বাহিরনগর গ্রামের পাঁচ শতাধিক পরিবার। তিনি জানান, বিলটি অমৎস্যজীবিদের হাতে চলে যাওয়ায় ওই সকল পরিবারের দুই সহস্রাধিক নারী-পুরুষ-শিশু শংকার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। তিনি দাবি করেন, বিলের লিজ বাতিল না করা হলে শত শত মৎস্যজীবি ও পরিবারের সদস্যদের না খেয়ে মরতে হবে।
জেলেপাড়ার বধু তৃষ্ণারানী জানান, বিলে মাছ ধরতে না পারলে বন্ধ হয়ে যাবে শিশুদের লেখাপড়াও।
বয়োবৃদ্ধ চিত্ত রঞ্জন বিশ্বাস ও সুবোধ বিশ্বাসসহ কযেকজন জানান, বছরের পর বছর ধরে এ পেশার সাথে সম্পৃক্ত থাকায় জেলেদের পক্ষে অন্য পেশায় যাওয়াও সম্ভব নয়। তাই লিজ বাতিল করে প্রকৃত মৎস্যজীবিদের নামে লিজ প্রদানের দাবি জানান তারা।
এদিকে প্রকৃত মৎস্যজীবিদের বাদ দিয়ে বিলের লিজ দেয়ায় ক্ষুব্ধ লিজ পাওয়া সংগঠন বিজিবি মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লিমিটেডের অধিকাংশ সদস্যও। এরই মধ্যে এ ঘটনার প্রতিবাদে ১৫৮ জন সদস্য পদত্যাগ করেছে। পদতাগকারীরা মনে করেন চাপাদহ বিল প্রকৃত মৎস্যজীবিরাই ভোগ করবে, আর অন্যরা তাদের সহযোগিতা করবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন